ওকে বাড়িতেই পাওয়া গেল। মেরিন ডিগের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে। কিনা জিজ্ঞেস করল কিশোর। ওপাশের কথা শুনতে শুনতে কপাল কুঁচকে গেল তার।
ব্যাপারটা চোখ এড়াল না রবিনের। কিশোরের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে এত নিচু স্বরে কথা বলছে কিশোর, কিছুই শুনতে পেল না সে। দোকান। থেকে বেরিয়েই জিজ্ঞেস করল কি জেনেছে।
সাংঘাতিক তথ্য, বলল কিশোর। ভাল ছাত্র ছিল মেরিন ডিগ। ভাল ফ্যামিলির লোক। ওর বিরুদ্ধে কোন খারাপ রিপোর্ট নেই। বেড়াতে ভালবাসে। তিন বছর বেড়িয়ে বহুদিন কাটিয়ে এসেছে বিদেশে।
কিশোর চুপ করতে রবিন বলল, এর মধ্যে সাংঘাতিক তথ্যটা কোথায়?
বলিনি এখনও। গত গ্রীষ্মে একটা বিশেষ দেশে বেড়াতে গিয়েছিল সে।
কোন দেশ?
হ্যারিস গেনার যেখানে পড়তে গিয়েছিল সেখানে।
তাতে কি? বুঝতে পারল না মুসা।
রবিন বলে উঠল, আমি বুঝেছি! ওই দেশের কোন প্রতিষ্ঠান ওদের দুজনকে ধরে ব্রেন ওয়াশ করে দিয়েছে, যাতে ওরা ওদের হয়ে কাজ করে।
গুপ্তচরগিরি?
এ ছাড়া আর কি? কিশোর, ঠিক না?
আমি ভাবছি, ধীরে ধীরে বলল কিশোর, মতের অমিল হয়নি তো দুজনের?
মানে?
মানে, একজনকে ব্রেন ওয়াশ করেছে–ধরা যাক, ডিগের; গেনারের করতে পারেনি, কিন্তু ব্যাপারটা সে জানে। তাকে দলে আনার চেষ্টা করেছে ডিগ। পারেনি। হয়তো কথা ঁ থেকে ঝগড়া। শেষমেষ গায়েব করে দেয়া হয়েছে গেনারকে। ওর নিরুদ্দেশের এটা একটা জোরাল যুক্তি হতে পারে।
হুঁ, তা পারে, একমত হয়ে মাথা দোলাল রবিন। তবে কি লায়ন। কাবসদের দিয়ে ভয় দেখিয়ে ডিগই আমাদের তাড়াতে চেয়েছে যাতে গেনারের ব্যাপারে তদন্ত করতে না পারি?
হয়তো। তোমরা এখানে দাঁড়াও, আমি আরেকটা ফোন সেরে আসি।
আবার কাকে?
আরলিঙটনের পুলিশ চীফকে। তাকে অনুরোধ করব ডিগের ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা করার জন্যে।
মুসা আর রবিনকে গাড়ির কাছে রেখে আবার গিয়ে দোকানে ঢুকল কিশোর। কয়েক মিনিট পর বেরিয়ে এল উত্তেজিত হয়ে। খবর জানাল, এইবার মেরিন ডিগ গায়েব! তাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শিস দিয়ে উঠল মুসা, দারুণ! তার সঙ্গে আবার কার মতের মিল হলো না?
তাকে না ধরতে পারলে আর সেটা জানা যাবে না।
কি করে ধরা যায়?
সেটা পুলিশ জানে। তাদের কাজ।
তা ঠিক। তো আমাদের কাজ তাহলে এখন কি? আবার গুহায় ফিরে যাওয়া?
তা তো বটেই। আর কি করব? আমাদের মিশন এখনও শেষ হয়নি। গেনারকে খুঁজে পাইনি আমরা।
কিন্তু গুহায় ফিরে লাভ কি? ওখানে তো নেই গেনার। দুটো গুহার একটাতেও লুকিয়ে রাখা হয়নি তাকে, তাহলে কি আর দেখতাম না?
কমাণ্ডারের গুহাটার ব্যাপারে সন্দেহ এখনও যায়নি আমার। মন বলছে, সব রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে ওই গুহায়। ভেতরে ঢুকে ভালমত খুঁজে দেখতে পারলে কিছু না কিছু পাবই।
তোমার কি মনে হয় গেনারের গায়েব হওয়ার পেছনে কমান্ডারের কোন। হাত আছে? প্রশ্ন করল রবিন।
হাত না থাকলেও যোগাযোগ যে একটা আছেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই। নইলে গেনার শিপরিজের কথা লিখে রেখে গায়েব হবে কেন? আর গুহার মধ্যে রহস্যময় কাণ্ডকারখানাই বা ঘটবে কেন? দুটোর মধ্যে মিল দেখতে পাচ্ছি আমি।
তাহলে ফিরে যেতে বলছ? জানতে চাইল মুসা।
হ্যাঁ, যাও।
গাড়ি স্টার্ট দিল মুসা।
রিক ডেলভারের বাড়ির সামনে পৌঁছে গাড়ি থামাল সে। মালপত্র নিয়ে নেমে পড়ল তিন গোয়েন্দা।
শব্দ শুনে বেরিয়ে এল ডেলভার। ওরা আবার গুহায় ফিরছে শুনে বাধা
কিন্তু শুনল না ওরা। জোর দিয়ে বলল কিশোর, গুহার রহস্য ভেদ না করে কিছুতেই নিরস্ত হবে না সে।
আগের বারের মত ডেলভারের বাড়ির সামনে গাড়ি রেখে হেঁটে রওনা হলো তিন গোয়েন্দা।
রাত হয়ে গেছে।
সৈকত থেকে আকাশের পটভূমিতে বিশাল দৈত্যের মত লাগছে পাহাড়ের চুড়াটা। এগিয়ে গিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করল ওরা।
আকাশে কয়েক দিনের চাঁদ, আলো এখনও উজ্জল হয়নি, ঘোলাটে কমলা রঙ। সেই আলোয় পথ দেখে এগেল ওরা।
গিরিখাতটা চোখে পড়ল একসময়। আরও এগিয়ে কালো গুহামুখটা চোখে পড়ল। সেদিকে তাকিয়ে গা ছমছম করে উঠল মুসার। মনে হলো যেন কোন দানবের খুলি থেকে চেয়ে আছে কালো অক্ষিকোটর।
গুহামুখটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল কিশোর, কি করছে এখন। আমাদের কমান্ডার মরিস? নিশ্চয় নাক ডাকিয়ে ভয় পাওয়াচ্ছে গুহার ইদ্রগুলোকে।
কিংবা ভূতকে, আড়চোখে মুসার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল রবিন। গুহায় ভূত থাকে। ইঁদুরদের মতই রাত জাগে ওরাও। আর আমার তো ধারণা ওই রকম একটা কমান্ডারকে ভূতেও ভয় করে চলবে।
কেঁপে উঠল মুসার কণ্ঠ, চুপ! চুপ! কি যে বলো আর না বলো, তাও এমন জায়গায় এসে…
জোরে হেসে উঠল রবিন।
হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। ঝট করে বসে পড়ল ওরা। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখল, কমান্ডারের গুহার কাছ থেকে জ্বলেছে আলোটা, তীব্র উজ্জ্বল আলোর রশ্মি গিয়ে পড়েছে সাগরের পানিতে।
ফিসফিস করে কিশোর বলল, সার্চলাইট!
বার দুই জ্বলল-নিভল আলোটা, তারপর নিভে গিয়ে আর জ্বলল না।
আরেকটু হলেই দেখে ফেলত আমাদের, মুসা বলল।
চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, আর কত চমক জমা আছে কমান্ডারের ভাঁড়ারে? সার্চলাইট! একজন সন্ন্যাসীর কি দরকার এই জিনিস? সন্দেহ আরও জোরাল হচ্ছে আমার।
সন্ন্যাসী না ছাই, ঝাঁজের সঙ্গে বলল রবিন, ব্যাটা আস্ত ভণ্ড। পাগলামিটাও তার অভিনয়।