কি আছে? নিচে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
একটা বাড়ি। ডিশদেখেমনে হচ্ছে রাডার স্টেশন।
আর কিছু না?
আর কিছু না।
নেমে এল রবিন।
খুড়ে দেখলে হত নিচে কি আছে, মুসা বলল।
তার জন্যে শাবল-কোদাল দরকার। কোথায় পাবে? রবিন বলল।
সেটা অত সমস্যা নয়। ব্রিক ডেলভারের কাছে গেলেই পাওয়া যাবে। রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। চলো, গিয়ে নিয়ে আসি। মুসা ততক্ষণে মাছটার একটা ব্যবস্থা করে ফেলক।
মুসা চলে গেল গুহার দিকে। কিশোর আর রবিন রওনা হলো ডেলভারের কেবিনে।
আসার সময় অচেনা পর্ব ছিল, তার ওপর ঝড়বৃষ্টি, সেজন্যে বড় বেশি দাম আর অনেক লম্বা মনে হয়েছিল পথ। এখন তার অর্ধেকও লাগল না। অল্প সময়েই চলে এল ডেলভারের কেবিনে।
বুড়োকে পাওয়া গেল না। মাছ ধরতে গেছে। তবে মহিলা আছে বাড়িতে। চমৎকার একটা হাসি উপহার দিয়ে তার কাছ থেকে একটা শাবল আর একটা কেলচা চেয়ে নিল রবিন। আবার রওনা হলো গুহার দিকে।
গুহায় ফিরে দেখল গনগনে আগুনের সামনে বসে আছে মুসা। মাছের কাবুব ঝমানো হয়ে গেছে প্রায়। গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে।
দুই দুইবার পাহাড় ডিঙিয়ে এসে প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে কি, মার রবিনের। গপ গপ করে খেতে শুরু করল ও।
খাওয়ার পর আগুন নিভিয়ে দিয়ে তিনজনে মিলে রওনা হলো জায়গাটা খুঁড়ে দেখতে।
খুঁড়তে খুঁড়তে তিন ফুট খুঁড়ে ফেলেও ধাতব জিনিসটার দেখা মিলল না।
বেলচায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রবিন বলল, কই, মুসার খনির তো চিহ্নও নেই। কিশোর, ঘটনাটা কি বলো তো? ধাতব জিনিস না থাকলে তো সাড়া দিত না যন্ত্র।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর, আমিও বুঝতে পারছি না। বিদ্যুতের তার গেছে হয়তো মাটির নিচ দিয়ে। সেসবের পাইপ হতে পারে। কত নিচে আছে কে জানে। অহেতুক কষ্ট না করে শিপরিজে গিয়ে খোঁজ নেয়া দরকার।
সুতরাং রওনা হলো ওরা।
শাবল আর বেলচা ফেরত দিতে প্রথমে ডেলভারের বাড়িতে এল। এবার পাওয়া গেল ওকে। হাসিমুখে বেরিয়ে এসে স্বাগত জানাল ছেলেদের, ভূতের। গুহা থেকে তাহলে ভালয় ভালয়ই ফিরলে।
হ্যাঁ, হেসে জবাব দিল কিশোর, দেখতেই পাচ্ছেন।
এগুলো নিয়েছিলে কেন? হাত তুলে শাক আর বেলচা দেখাল বুড়ো। বাড়ি ফিরে বেগম সাহেবের কাছে শুনলাম তোমরা এসেছিলে।
মুসার একটা মেটাল ডিটেক্টর আছে। পাহাড়ের ওপর খুঁজতে গিয়ে ওর মনে হয়েছে মাটির নিচে সোনার খনি আছে। তাই খুঁড়ে দেখলাম আরকি।
বুড়োর চোখে অবিশ্বাস। এই এলাকায় সোনার খনি? অভিব! থাকলে কবে বেরিয়ে যেত।
আমারও তাই ধারণা, বলল কিশোর। মনে হয় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তারটার গেছে, সেগুলোর পাইপ..
হুঁ, তাই হবে। এখন কোথায় যাচ্ছ?
হ্যারির দোকানে। কয়েকটা জিনিস দরকার।
জিনিস দরকার মানে? আবার গুহায় যাবে নাকি?
বলতে পারি না। তবে গেলেও আর বোধহয় ভয়ের কিছু নেই। রাতে তে থাকলাম, গুহাতেই, ভূতে তো কিছু করল না।
বুড়োকে গুডবাই জানিয়ে গাড়িতে চড়ল ওরা। রওনা হলো হ্যারির স্টোরে।
দোকানেই আছে হ্যারি। তিন গোয়েন্দাকে দেখে চেয়ার থেকে উঠে এল, কি, বলেছিলাম না? নিশ্চয় বিপদে পড়েছিলে গুহায় ঢুকে।
কে বলল বিপদে পড়েছি, হাত নেড়ে বলল কিশোর।
বেশ, বিপদে হয়তো পড়েনি। কিন্তু কিছুই ঘটেনি এ কথা আমাকে অন্তত বিশ্বাস করাতে পারবে না। তোমাদের মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। উত্তেজিত হয়ে আছ। কিছু একটা তো নিশ্চয় ঘটেছে।
মিথ্যে বলব না, ঘটনা সত্যিই ঘটেছে। তবে ভুতুড়ে কিছু নয়, হ্যারির টেলিফোন্টা দরকার, তাই তার কাছে সব কিছু চেপে গেল না কিশোর। আচ্ছা, টাউন ইঞ্জিনিয়ারের অফিসটা কোথায়, বুলবেন? কয়েকটা ম্যাপ আর সার্ভে রিপোর্ট দেখতে চাই।
ম্যাপ? ভুরু কোঁচকাল হ্যারি। ব্যাপারটা কি, বলো তো?
মুসার সোনার খনি আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানলি কিশোর।
ডেলভারের মতই অবিশ্বাসের হাসি হাসল হ্যারি। বলল, দেখো, ভাগ্য খোলে নাকি! তবে ম্যাপ দেখার জন্যে ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে যাওয়া লাগবে। না। আমি শিপরিজের মেয়র। এখানেই আর্কাইভ আছে, ডান হাতের বুড়ো। আঙুল দিয়ে দোকানের পেছনের একটা দরজা দেখাল সে।
ওখানে? অবাক হলো রবিন।
ওটা মেয়র আর টাউন ইঞ্জিনিয়ারের অফিস।
হ্যারির পেছন পেছন ঘরটায় এসে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ছিমছাম সাজানো-গোছানো। একটা ডেস্ক, একটা ফাইলিং কেবিনেট আছে। দেয়ালে ঝোলানো একটা বড় ম্যাপ।
ওটার সামনে এসে দাঁড়াল তিনজনে। খুঁটিয়ে দেখতে লাগল রবিন আর কিশোর। মুসা এ সব বোঝে না, ওর ভালও লাগে না।
পাহাড়টা বের করতে দেরি হলো না কিশোরের। মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া পানির পাইপ বা বিদ্যুতের পাইপের চিহ্ন নেই ম্যাপে। মাথা নেড়ে সরে এল ওটার কাছ থেকে।
অফিসের বাইরে বেরোতে হ্যারি জিজ্ঞেস করল, কই, পেলে তোমাদের সোনার খনি?
মাথা নাড়ল কিশোর, নাহ। রসিকতার সুরে বলল, আবিষ্কারই করলাম। আমরা আজ, ম্যাপে থাকবে কোত্থেকে। তবে এরপর ম্যাপ আকলে থাকবে অবশ্যই।
জবাবে হ্যারিও হাসল। হুঁ, তা বটে। আর কি করতে পারি তোমাদের জন্যে?
কিছু জিনিস লাগবে। মূসা আর রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, তোমরা নাও ওগুলো, আমি একটা ফোন সেরে নিই। হ্যারিকে জিজ্ঞেস করল, অসুবিধে নেই তো?
না না, অসুবিধে কিসের? করো।
.
১৩.
ল্যারি কংকলিনকে ফোন করল কিশোর।