কিশোর, মুসা বলল, আমার মনে হয় কেসটা নিয়ে ফেলা উচিত আমাদের।
হাসল কিশোর। তা তো নেবই…
উজ্জ্বল হলো ইভার মুখ। কৃতজ্ঞ ভঙ্গিতে বলে উঠল, ওহ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ!…কেঁদেকেটে একটা বিচ্ছিরি কাণ্ড করে ফেলেছি, সরি!
না না, ঠিক আছে, ও কিছু না, তাড়াতাড়ি বলল রবিন। আর বিব্রত হতে চায় না।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, ইভা, তোমার ভাইয়ের কোন ছবি আছে তোমার কাছে?
হাতব্যাগ থেকে একটা ফটোগ্রাফ বের করে দিল ইভা। এই একটাই ছিল আমার কাছে, হাসল সে, হারালে আর পাব না। উঠে দাঁড়াল। তো, চলি আজ।
কোথায় থাকো, ঠিকানা দিয়ে যাও। তোমার সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে।
ইভা বেরিয়ে গেলে দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে কিশোর বলল, যাক, অনেক দিন পর কেস একটা পাওয়া গেল।
তেমন জটিল কোন রহস্য বলে তো মনে হচ্ছে না, মুসা বলল। একজন মাথা খারাপ লোককে খুঁজে বের করতে হবে, ব্যস। এ আর এমন কি কঠিন।
পুলিশ যে রহস্যের সমাধান করতে পারেনি, ওটাকে এত সহজ ভাবছ কেন? বলা যায় না কি খুঁজতে গিয়ে কি বেরোয়।
তাহলে আরলিংটনে যাচ্ছি আমরা?
অবশ্যই। ইভাকে কথা দিয়ে দিলাম না আমরা। তুমিও তো বললে কাজটা নেয়া উচিত আমাদের।
তা তো বলেছি, কিন্তু আমার গুপ্তধন খোঁজার কি হবে? যন্ত্রটা কেনার পর ব্যবহারই করতে পারলাম না।
গাড়িতেই রেখে দাও, হেসে বলল রবিন। গুপ্তধন বাদ দিয়ে আপাতত মানুষ খুঁজতে কাজে লাগাবে।
মানুষের ব্যাপারে সঙ্কেত দেয় না। শুধু ধাতব জিনিস।
মানুষও অনেক ধাতুতে গড়া। আমাদের শরীরে কত রকমের ধাতু আছে, শুনতে চাও?
না, চাই নাওসব শুনতে এ মুহূর্তে ভাল লাগবে না আমার!
.
০২.
পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা মুসার পুরানো জেলপি গাড়িটাতে করে। দ্রুত ছুটল সাগরতীরের রাস্তা ধরে।
রবিন বলল, তোমার এই ভটভটি নিয়ে তো বেরোলাম, শেষে রাস্তাঘাটে না আটকে পড়ি। চলবে তো?
চলবে না মানে! দেখতে খারাপ, আওয়াজও করে, কিন্তু কোনদিন কোথাও বিপদে ফেলেনি আমাকে, আদর করে স্টিয়ারিঙে হাত বোলাল মুসা।
ওর কথা ঠিক। এবারও ওদের ঝামেলায় ফেলল না গাড়িটা। ঠিকমতই পৌঁছে দিল আরলিংটনে। শহরে ঢোকার পর কিশোর বলল, ভালমত নজর রাখো। থাকার জায়গা দেখলেই থামতে হবে।
কয়েকটা মোটেল পেরিয়ে এল ওরা। কোনটাই পছন্দ হলো না। হয় বেশি দামী, নয়তো একেবারে সাধারণ। অত সাধারণ জায়গায় থাকতে ইচ্ছে করে না কিশোরের। ওর মতে ওগুলোতে থেকে কষ্ট করার চেয়ে বাইরে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটানো অনেক আরামের!
অ্যাই, কিশোর, ওটা কেমন মনে হয়? হাত তুলে একটা সাইনবোর্ড দেখাল রবিন।
রিজ মোটেল, নাম লেখা রয়েছে। নিজেদের গুণকীর্তন সবিস্তারে লিখে রেখেছে নিচে।
মনে হয় খারাপ হবে না, কিশোর বলল। মুসা, ঘোরাও তো। যাও ওদিকে।
ড্রাইভওয়েতে গাড়ি ঢোকাল মুসা। পাতার ছাউনি দেয়া একটা সুন্দর কটেজ দেখা গেল। সাইনবোর্ড লেখা রয়েছে: অফিস। বাঁয়ে লম্বা একটা নিচু একতলা বাড়ি। প্রতিটি ঘরের সামনে একটা করে পামগাছ লাগানো হয়েছে। ডানে রয়েছে একসারি কটেজ। মোট বারোটা, সব একই রকম দেখতে। অফিস বাড়িটার মত ওগুলোরও পাতার ছাউনি।
কোথায় উঠলে ভাল হয়? রবিনের প্রশ্ন। লম্বা বাড়িটাতে ঘর নেব, নাকি একটা কটেজ ভাড়া করব।
চলো, আগে দাম জিজ্ঞেস করে দেখি, কিশোর বলল। অফিসের দিকে যেতে বলল মুসাকে।
অফিসে ডেস্কের ওপাশে বসে থাকতে দেখা গেল মাঝবয়েসী এক লোককে। পুরো মাথা জুড়ে গোল টাক, কেবল কান আর ঘাড়ের ওপরে অল্প কিছু পাতলা ফুরফুরে চুল বাদে। টাকে হাত বুলিয়ে হাসি দিয়ে ছেলেদের স্বাগত জানাল সে, এসো এসো। বেড়াতে এসেছ? ছাত্র নিশ্চয়? বেড়াতে এলে ছাত্ররা এই মোটেল ছাড়া আর কোথাও ওঠে না।
প্রশ্নের জবাব দিয়ে মোটেলে রূম খালি আছে কিনা, ভাড়া কত জানতে চাইল কিশোর। একটা ঘরই খালি আছে, জানাল ম্যানেজার। রেজিস্টারে নাম সই করে, ক্লার্কের হাতে টাকা গুণে দিল কিশোর। ঘরের চাবি দিল ওকে লোকটা।
সাত নম্বর রূম। চাবি দিয়ে দরজা খুলে মালপত্র নিয়ে ঘরে ঢুকল ওরা।
রবিন বলল, কিছু মানুষ আছে অতিরিক্ত কথা বলে, অহেতুক।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, তা ঠিক। দেখলে না কেমন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমাদের কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করছিল। কেন এসেছি আমরা। এটা যত কম লোকে জানবে, ততই ভাল।
ওদের কথায় কান দিল না মুসা, সুটকেস খুলতে খুলতে বলল, আমার খিদে পেয়েছে। তোয়ালে বের করে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল সে।
হাতমুখ ধুয়ে, কাপড় পরে, আবার বেরোল ওরা। দরজায় তালা দিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠল। মুসা বলল, রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি তো, নাকি?
হ্যাঁ, কিশোর বলল, আগে খাওয়া। তারপর থানায় যাব পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে।
হ্যারিস গেনারের ব্যাপারে কতটা জানে ওরা জানার জন্যে? রবিনের প্রশ্ন।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
খাওয়া সেরে নিয়ে থানায় রওনা হলো ওরা।
নতুন তৈরি একটা বিল্ডিঙের মাটির নিচে পুলিশ হেডকোয়ার্টার। ওপরটায় টাউন হল। পুলিশ চীফ অফিসে নেই, সুতরাং ডেস্ক সার্জেন্টের কাছে নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর। রকি বীচের পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচার তিন গোয়েন্দাকে একটা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, শহরের বাইরে অন্য অঞ্চলে কাজ করতে গেলে সেটা দেখালে যাতে পুলিশ ওদের সহায়তা করে। সেটা দেখিয়ে সার্জেন্টের কাছে গেনারের কেসটার কথা জানতে চাইল কিশোর।