দিল না কিশোর। চট করে সরে গেল ভেতরে।
ওকে ধরার চেষ্টা করল না কমান্ডার। দৌড় দিল তাকের দিকে।
সাবধান, কিশোর, চেঁচিয়ে বলল রবিন, বন্দুক আনতে যাচ্ছে ও!
.
১২.
গুহামুখের দিকে দৌড় দিল কিশোর। পেছনে রবিন।
ওরা বেরোনোর আগেই তাকের কাছে পৌঁছে গেল কমাণ্ডার। বন্দুক তুলে হুমকি দিল, খবরদার, এক পা নড়লেই গুলি খাবে?
হোঁচট খেয়ে যেন দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। তার গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল রবিন।
ফিরে তাকাল দুজন।
ওদের দিকে বন্দুক তাক করে রেখে এগিয়ে এল কমান্ডার। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তাহলে এই নোটবই চুরি করার জন্যেই আমার গুহায় ঢুকেছিলে। আস্তে করে মাটিতে রেখে দাও ওটা। চালাকি করতে গেলে মরবে।
চালাকি করতে গেল না কিশোর। পাগলের হাতে শটগান-ভয়ানক ব্যাপার, কোন রকম ঝুঁকি নিতে চাইল না সে। যা করতে বলা হলো, করল।
রবিন বলল, নোটবই চুরি করতে না, এমনি ঢুকেছিলাম। স্রেফ কৌতূহল।
আচমকা প্রশ্ন করল কিশোর, ক্যাপটা কার, কমাণ্ডার?
ভুরু কুঁচকে ফেলল কমান্ডার। মানে?
মানে, ওটা কার জিজ্ঞেস করছি। আপনার বলে তো মনে হয় না। নাবিকেরা এ জিনিস পরে না।
তাহলে কে পরে?
আর কেউ আছে নাকি এখানে?
থাকলে সে এখন কোথায় গেল? ধমকে উঠল কমাণ্ডার।
সেটা তো আপনি বলবেন।
আমি কিছুই বলতে পারব না, কারণ আমি কিছু জানি না।
এই ক্যাপটা কোথায় পেলেন?
একমুহূর্ত চিন্তা করে নিল কমাণ্ডার। জবাব দেবে কিনা ভাবল বোধহয়। বলল, শিপরিজে হ্যারির দোকান থেকে কিনেছি। কুইন্স নেভি রসদ পাঠাতে ভুলে গিয়েছিল। শেষে দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে আনতে বাধ্য হলাম।
ওর কথার একবর্ণ বিশ্বাস করল না কিশোর। প্রকাশ করল না সেটা। পাগল খেপালে বিপদ। কি করে বসে ঠিকঠিকানা নেই।
আবার গুহায় ঢুকলে ভাল হবে না–শাসিয়ে দিয়ে, ওদের বেরিয়ে যেতে বলল কমান্ডার।
বেরোতে সামান্যতম দেরি করল না দুজনে। নিজেদের গুহার দিকে এগোচ্ছে, এই সময় দেখল মুসাও আসছে। হাতে ছিপ আর কাঁধে বিশাল এক মাছ ঝুলিয়ে নিয়ে এগিয়ে এল সে। কাছে এসে বলল, দেখো কি ধরেছি!
হেসে বলল রবিন, কি এটা, তিমির বাচ্চা?
সী ব্যস।
কি করে মাছটা ধরেছে সেই বীরত্বের কাহিনী বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে খেয়াল করল মুসা, তার কথায় বিশেষ মনোযোগ নেই কিশোরের। কি হয়েছে জানতে চাইল সে।
জানাল কিশোর।
মাথা নেড়ে মুসা বলল, আজব লোক। এখানে করছে কি আসলে লোকটা?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না, কিশোর বলল।
ক্যাপটা কার? গেনারের না তো?
সে রকমই সন্দেহ করছি।
তুমি বলতে চাও, সে এখানেই কোন গুহার মধ্যে আটকে আছে?
অসম্ভব কিছু না। তবে যেটা ধারণা করছি সেটা হলো, সে আর ডিগ এসেছিল এখানে। দেখতে পেয়ে গুলি করেছিল মরিস। পালিয়েছিল দুজনে। পালানোর সময় তাড়াহুড়োতে ক্যাপটা খুলে পড়ে যায় গেনারের মাথা থেকে, তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পায়নি।
এটা যে ওরই ক্যাপ, কি করে বুঝলে?
গুহায় ফিরে ছবিটা দেখে নিয়ো, ব্যাগের মধ্যে রেখেছি, তাহলেই বুঝবে।
হুঁ, নাটক তাহলে জমে উঠেছে, মাথা দোলাল মুসা। জানো, আরেকটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। দেখলে তোমরাও অবাক হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে একটা ধাতুর খনিটনি আবিষ্কার করে বসেছি।
শুনেই অবাক হয়ে গেল রবিন, ধাতুর খনি!
সোনার খনিও হয়ে যেতে পারে, মুসা বলল। এমন হতে পারে, খনিটার খোঁজ পেয়েই এখানে এসে হাজির হয়েছে কমান্ডার। সোনা তুলে নিয়ে যেতে চায়। অন্য কাউকে আসতে দেখলে রেগে যায় সেজন্যে। নোটবইটাতে হয়তো খনির নকশা আঁকা আছে।
ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে কিশোর আর রবিন।
কি ঘটেছে, খুলে বলল মুসা। মাছটা ধরার পর মেটাল ডিটেক্টরটা ব্যবহারের ইচ্ছে হয়েছিল ওর। মাটির নিচে বিশাল কিছু থাকার সঙ্কেত দিয়েছে যন্ত্র।
কিশোর বলল, চলো তো দেখি।
আগে খনি দেখবে, না মাছের কাবাব খাবে?
খাওয়া-টাওয়া পরে। চলো আগে, তোমার খনি দেখব।
এক মিনিট দাঁড়াও। চট করে মাছটা গুহায় রেখে আসি আমি।
ডিটেক্টরটা কোথায়?
পাহাড়েই ফেলে এসেছি। জানি তো, তোমরা দেখতে যাবে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই খাদ পেরিয়ে আবার পাহাড়ের ওপর এসে উঠল তিনজনে। জায়গাটা দেখিয়ে দিল মুসা।
ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে যন্ত্রটা মাটির কয়েক ইঞ্চি ওপরে ধরল রবিন। শুনতে শুনতে চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। ইয়ারফোনটা কান থেকে খুলে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, সাংঘাতিক কাণ্ড! সত্যি কিছু আছে। এখানে। কানের মধ্যে মনে হলো মেশিনগানের গুলি ফুটল।
যন্ত্রটা হাতে নিয়ে কিশোরও পরীক্ষা করে দেখল। ডান থেকে বাঁ দিকে সরে যেতে লাগল। সরতে সরতে কয়েক গজ চলে গেল, তাও শব্দ বন্ধ হয় না। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, আশ্চর্য! ঘটনাটা কি? কি আছে এখানে? মাটির তলা দিয়ে সোজাসুজি চলে, গেছে লম্বা কোন জিনিস।
পাইপটাইপ না তো? রবিন বলল।
কিসের পাইপ? মুসা বলল। এমন একটা জায়গায় পানির পাইপ কসাতে আসবে কে? আভাউড ড্রেনেরও কোন প্রয়োজন নেই এখানে।
যাই থাক, নিচের ঠোঁট কামড়াল কিশোর, জিনিসটা গেছে পুর থেকে পশ্চিমে, সাগরের তীর থেকে মহাসড়কের দিকে।
দাঁড়াও, কি আছে ওদিকে রাস্তার ধারে, দেখছি, রবিন বলল।
কয়েকটা পাইন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে জমে আছে একজায়গায়। তারই একটাতে চড়ল সে। পশ্চিমে তাকাল।