কার কাছে নেব?
তার আমি কি জানি? হাত ওল্টাল রবিন।
একটা ব্যাপার কিন্তু হতে পারে, হয়তো শিপরিজে এ সব গুহাতে খোঁজ নেবার কথাই বলেছে গেনার। গুহাগুলোতে যে রহস্য আছে, তার প্রমাণ তো ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি আমরা। একটা মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল কিশোর, ঠিক আছে, চলো আগের কাজ আগে সারি, তারপর অন্য কথা। প্রথমে রিক ডেলভারের কাছে যাব খাবার চাইতে। তার কাছে না পেলে শিপরিজে দোকানে যেতে হবে।
মনে কোরো তো এবার, বড়শিটা নিয়ে আসব এবার, মুসা বলল। ঝড়-বৃষ্টির পর মাছে খায় ভাল। মাছ পেলে খাবারের সমস্যা অনেকটা মিটবে।
কেন, আসার সময় বড়শি তো নিলে দেখলাম? রবিনের প্রশ্ন। কোথায় ফেললে?
আমারও মনে হচ্ছে এনেছি, কিন্তু সকালবেলা খুঁজতে গিয়ে দেখি নেই। হয় খাবার চোরই ওগুলো গাপ করে দিয়েছে, নয়তো ভুলে আনিইনি। গাড়িতে ফেলে এসেছি। ঠিক মনে করতে পারছি না। গুহার কাছে এসে জিজ্ঞেস করুল মুসা, আমাদের জিনিসপত্রগুলো কি করব? এখানে ফেলে গেলে না ওগুলোও চুরি হয়ে যায়।
মনে হয় না, কিশোর বলল, তাহলে রাতেই চেষ্টা করত। কেবল খাবারের ওপরই নজর ছিল চোরের।
ঠিক আছে, সব জিনিস ফেলে গেলেও ডিটেক্টরটী ফেলে যাচ্ছি না। যাওয়ার সময় খুঁজতে খুঁজতে যাব, খোঁজাও হবে, সময়ও কাটবে।
কি খুঁজবে তুমি? রবিনের প্রশ্ন।
কি করে বুলব? মাটির নিচে, পাহাড়ের খাঁজে কত জিনিসই থাকতে পারে। জলদস্যুর গুপ্তধনও থাকতে পারে। এই যে খানিক আগে একটা নতুন পিস্তল পেয়ে গেলাম, এটা কি কম কথা?
পিস্তলের কথায় মনে পড়ল কিশোরের, ওহহো, কোথায় ওটা?
লুকিয়ে রেখেছি, মুসা জানাল। কেন, দরকার?
না। লুকানো আছে, থাক। বলা যায় না, ওটা একটা জরুরী সূত্র হতে পারে।
রওনা হলো ওরা। ডিটেক্টরটাকে লাঠির মত করে সামনে বাড়িয়ে ধরে হাঁটছে মূসা। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেইবিকট চিৎকার করে উঠল।
আগে আগে হাঁটছিল রবিন আর কিশোর। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে তাকাল।
পাহাড়ের দেয়ালের কাছে উন্মাদ নৃত্য জুড়েছে মু। কড়কড় কড়কড় করছে ওর যন্ত্র। যেন পাল্লা দিয়ে চিৎকার করছে মনিবের সঙ্গে।
চিৎকার করে বলল সে, এখানে একটা-দুটো পিল নয়, পুরো এক অস্ত্রাগার রয়েছে। যন্ত্রটাকি ভাবে চিৎকার করছে দেখো।
যন্ত্রের চেয়ে তো বেশি চেঁচাচ্ছ তুমি, কিশোর কাল। চুপ করো না। দেখোই না আগে কি আছে।
পাহাড়ের গোড়ায় একটা পাথরের কাছে যন্ত্রটা নিয়ে গেলেই শব্দ করছে। পাথরটা সরানোর জন্যে হাত বাড়াল কিশোর আর রবিন। যন্ত্র ধরে রেখেছে মুসা, ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে লুকানো হাড়ের সন্ধান পেয়েছে ক্ষুধার্ত ককর।
পাখরটা সরাতেই দেখা গেল একটা গর্ত। ভেতরে একটা বস্তা। তার ভেতর থেকে বেরোল ওদের খাবারের টিনগুলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তিন গোয়েন্দা।
এই তো আমার বড়শি বলে উঠল মুসা। তারমানে ঠিকই এনেছিভুলিনি, খাবারের সঙ্গে এগুলোও চুরি করেছিল ব্যাটা।
জিনিসগুলো তাহলে বের করেই ছাড়লে, হাসতে হাসতে বলল কিশোর।
যন্ত্রটার গায়ে আদর করে হাত বুলিয়ে মুসা বলল, পয়সা উসুল। এত … উপকার করবে এটা কল্পনাও করিনি। বাঁচালি তুই, ডিটেক্টর। উফ, পাহাড় ডিঙানোর কথা ভাবতেই হাত-পা সেধিয়ে যাচ্ছিল আমার পেটের মধ্যে।
খাবার দেখেই খিদে মাথা চাড়া দিল ওর। গুহায় ঢুকে আগুন জ্বেলে, ফ্রাইং প্যান বের করে রাখতে বসে গেল। মাংস ভাজার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে।
রবিন আর কিশোর আলোচনা করছে বস্তাটা গর্তে কে রাখল, সেটা নিয়ে। কমান্ডারের প্রসঙ্গ উঠল।
তাকে প্রশ্নগুলো করা হলো না, কিশোর বলল, দাঁড়াতেই দিল না আমাদের।
দেবে কি? পাগল তো। মুসার কথাই ঠিক–ওর মাথায় বড় রকমের গোলমাল আছে, তাতে আমারও কোন সন্দেহ নেই।
হতে পারে, আবার নাও হতে পারে, রহস্যময় স্বরে বলল কিশোর। যাই হোক, প্রশ্নগুলো ওকে করতেই হবে, যেভাবেই হোক।
মাংস ভাজা সেরে ডিম ভাজছে মুসা।
সেদিকে একবার তাকিয়ে কিশোরকে জিজ্ঞেস করল, কি প্রশ্ন করবে? মেরিন ডিগকে এদিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে কিনা?
খাবার রেডি, ঘোষণা করল মুসা। দেরি করলে ভাগে কম পাবে।
তাড়াতাড়ি যার যার প্লেট মেলে দিল কিশোর আর রবিন। খাবার তুলে দিল মুসা।
এক চামচ ডিম মুখে ফেলে আগের প্রশ্নটাই করল কিশোরকে রবিন, কই, বললে না কি প্রশ্ন করবে?
কিন্তু জবাব দিল না কিশোর। অন্যমনস্ক হয়ে রইল।
মুসা বলল, ডিগ আর কমান্ডারকে নিয়ে যত খুশি গবেষণা করো তোমরা, খাওয়ার পর আমি আর এসবে নেই। আমি যাব মাছ ধরতে। খাবার চুরি করে নিয়ে গিয়ে আমাদেরকে শাস্তি দেয়ার সুযোগ আর দেব না চোরটাকে।
কোথায় ধরবে? জানতে চাইল রবিন।
ঢালের নিচে চলে যাব। অনেক লম্বা সুতো; ঢালের ওপরে বসলেও বেড় পাওয়া যাবে।
আবার চোরের আলোচনায় ফিরে এল রবিন। নিজে খাওয়ার জন্যে নিয়ে যায়নি, বোঝাই যাচ্ছে। তাহলে চুরি করল কেন?
আমাদের এখান থেকে তাড়ানোর জন্যে; সহজ জবাব, কিশোর বলল। সে চায় না আমরা এখানে থাকি।
কমান্ডারকে সন্দেহ হয় তোমার? মুসার প্রশ্ন।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে জবাব দিল কিশোর, ওই লোক হতে পারে, কিংবা অন্য কেউ। একজন হতে পারে, কিংবা একাধিক।
এটা তো কোন জবাব হলো না।
ঠিক। জবাবটা জানলে তো দেব।
যাই হোক, রবিন বলল, দ্বিতীয়বার আর চুরি করতে দিচ্ছি না ওকে। খাদের পাশে পাহাড়ের গায়ে একটা খাজ দেখে এসেছি। ওর মধ্যে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখব। হাজার খুঁজলেও আর পাবে না ব্যাটা।