তাকিয়ে আছে রবিন, কি জিনিস?
পিস্তল! খুশিতে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে মুসার। জলদস্যুর জিনিস, কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় জাহাজডুবি হয়ে এখানে এসে উঠেছিল ওরা। বহুদিন আগে।
দেখি তো? হাত বাড়াল কিশোর।
হাতে নিয়ে ভাল করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আবার মুসাকে ফেরত দিতে দিতে বলল, বেশি পুরানো তো মনে হচ্ছে না।
রবিনও দেখল। তাই তো। একেবারেই মরচে পড়েনি। কোম্পানির নামটাও পড়া যাচ্ছে-স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন।
হ্যাঁ, স্পেনের তৈরি, কিশোর বলল।
আচ্ছা, এটা দিয়েই গুলি করা হয়নি তো? কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। গুহার মধ্যে রহস্যময় যে গোলাগুলির কথা বলল জেলেরা?
ওদের কথাবার্তায়, অবাক হয়ে দুজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। মূসা। এ সব বলে কি বোঝাতে চাইছ তোমরা?
বোঝাতে চাইছি, পিস্তলটা অত পুরানো নয়, যতটা তোমার মনে হচ্ছে।
তারমানে জলদস্যু নয়? আধুনিক পিস্তল দিয়ে আধুনিক কাজকারবার করছে কোন আধুনিক মানুষ?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
কাকে সন্দেহ হয় তোমার? মুসার প্রশ্ন 1 রহস্যময় হ্যারিস গেনার? মেরিন ডিগ?
হতে পারে, এখনও জানি না। তবে ডিগকেই বেশি সন্দেহ হয়।
সেই পিস্তলটা ফেলে গেছে এখানে?
তাও জানি না।
কেন ফেলবে?
সেটা জানলে তো অনেক প্রশ্নের জবাবই পেয়ে যেতাম।
দারুণ! একটা জটিল রহস্যের সূত্র খুঁজে বের করে দিলাম, দেখা যাক। আরও পারি কিনা। ক্ষুধার কথা ভুলে গিয়ে মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে আবার কাজে লেগে গেল মুসা।
খুঁজতে খুঁজতে গুহা থেকে বেরিয়ে সৈকতে চলে এল। বালিতে ঢাকা জায়গাটা সরে গেছে বিশাল কালো একটা পাথরের টিলার দিকে। সেটা ঘুরে আসতেই পাহাড়ের গায়ে একটা ফোকর দেখা গেল।
আরেকটা গুহা! ভুরু কুঁচকে ফেলল কিশোর।
ডিটেক্টর হাতে হাসিমুখে ওটার দিকে এগোল মুসা। এক গুহার মুখে পেয়েছে পিস্তল, আরেকটার মুখেও যদি কিছু পাওয়া যায়, এই আশায়।
গেল পাওয়া, সত্যিই! তবে ওটা পেতে ডিটেক্টর লাগল না, খালি চোখেই দেখা গেল গুহামুখের ঠিক ভেতরে একটা কাঠের তক্তা পুতে তাতে কাগজে কি যেন লিখে আঠা দিয়ে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। নিচের দিকের আঠা ছুটে গিয়ে বাতাসে ফড়ফড় করছে কাগজটা। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে টেনে সোজা করে পড়ল রবিন। কালো কালি দিয়ে বড় বড় করে লেখা হয়েছে:
প্রবেশ নিষেধ।
বিনা অনুমতিতে ঢুকলে সেটাকে
বেআইনী বলে গণ্য করা হবে।
লেখাটা তিনজনকেই অবাক করল। মুসা বলল, শিপরিজের পুলিশ চীফ হয়তো লাগিয়ে দিয়ে গেছে।
পুলিশের কি ঠেকা পড়েছে? রবিন বলল। মজা করেছে কেউ। ট্যুরিস্ট হতে পারে।
ভেতরে উঁকি দিল কিশোর। ঢুকবে কি ঢুকবে না ঠিক করতে পারছে না যেন। শেষে বেআইনী বলে গণ্য হওয়ার প্রতিই ঝোঁক বেড়ে গেল তার। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে বলে উঠল, রসিকতা নয়, সত্যি এখানে নোক বাস করে!
অনুমতি নেয়ার জন্যে কাউকে দেখা গেল না। কৌতূহল না ঠেকাতে পেরে শেষে বেআইনী কাজ করে বসল তিনজনেই। ঢুকে পড়ল ভেতরে। গুহায় আলো তেমন নেই, গুহামুখ দিয়ে সামান্য যা ঢুকছে। আনাড়ি হাতে তৈরি একটা কাঠের টেবিল পড়ে আছে এককোণে। মাটিতে বিছানো একটা মলিন গদি, তার ওপর কম্বল পাতা। সাবানের বাক্সের কাঠ দিয়ে তৈরি একটা আলমারি রাখা হয়েছে একটা চ্যাপ্টা পাথরের ওপর। তাতে ভরা টিনের খাবার।
যাক বাবা, বাঁচা গেল, খুশি হয়ে বলল মূসা, আমাদের একজন পড়শী আছে, তার কাছে খাবারও আছে। খালি পেটে পাহাড় পেরোতে হলো না আর।
আস্তে! সাবধান করল রবিন। ফিসফিস করে বলল, ওই যে, আসছে আমাদের পড়শী।
সৈকত ধরে হাঁটতে দেখা গেল একজন লম্বা মানুষকে। ধূসর চুল। গায়ে নীল শার্ট, পরনের ওভারঅলের পা দুটো ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে উঁচু গোড়ালিওয়ালা রবারের বুটের ভেতরে। বা হাতে একটা বিউগল। সাগরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেল। বিউগল ঠোঁটে লাগিয়ে ফুঁ দিল জোরে। একবার বাজিয়ে বিউগল নামিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছল, তারপর ঘুরে এগিয়ে আসতে শুরু করল গুহার দিকে।
গুহামুখে বেরিয়ে এসেছে তিন গোয়েন্দা। ওদের দেখে থমকে দাঁড়াল সে। নিজের অজান্তেই যেন বিউগল বাজাল আরেকবার। আবার পা বাড়াল।
আমি কমান্ডার জিন মরিস, কুইন্স নেভি, অবসরপ্রাপ্ত, ছেলেদের কাছে এসে ঘোষণা করল সে। আমাকে তোমাদের স্যালুট করা উচিত ছিল। বুঝতে পারছি, নেভির নিয়ম-কানুন কিছুই জানেন না তোমরা। স্যালুট করতে জানো?
নিখুঁত ভাবে স্যালুট করল তিন গোয়েন্দা।
খুশি হলো লোকটা, জিজ্ঞেস করল, বাহ, জানো তো দেখি। কিন্তু নাবিক বলে তো মনে হচ্ছে না।
হেসে জবাব দিল কিশোর, নাবিকরাই কি শুধু স্যালুট দেয়?
তাও বটে। তা ছাড়া সবাইকেই নাবিক হতে হবে, এমনও কোন কথা নেই।
এই গুহাতে আপনিই বাস করেন নাকি? জানতে চাইল রবিন।
হ্যাঁ, ডাঙায় আপাতত এটাই আমার ঘর। তোমাদেরকে তো চিনলাম না?
পরিচয় দিল তিন গোয়েন্দা।
হাত মেলানোর পালা শেষ করে কমান্ডার বলল, সচরাচর এখানে কেউ আসে না। আর না এলেই ভাল। আমি একা থাকতেই ভালবাসি। লোকের কোলাহল আমার ভাল লাগে না।
জায়গাটা একেবারেই নিরিবিলি, কিশোর বলল।
আছে, তবে অতটা না। যাতায়াতের অসুবিধে খুব বেশি নেই তো, পাহাড়টা পেরোলেই হলো, মাঝেসাঝে চলে আসে লোকে। গুহা দেখতে আসে টুরিস্ট, জেলেরা নামে বিশ্রাম নিতে। আমার জন্যে সবচেয়ে ভাল জায়গা ছিল দক্ষিণ সাগরের সেই দ্বীপটা, যেখানে নির্বাসিত হয়েছিলাম আমি।