চলো, প্রথমে সবচেয়ে বড়টা ধরেই যাই, পরামর্শ দিল মুসা। না পেলে ফিরে এসে বাকিগুলোতে ঢুকে দেখব।
ভাল বলেছ। চলো।
সোজা এগিয়েছে বড় সুড়ঙ্গটা। কিছুদূর এগিয়ে থমকে দাঁড়াল কিশোর।
আরেকটু হলে তার গায়ের ওপর এসে পড়ত মুসা। কি হলো?
দেখো! মাটির দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর।
ওর কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বলে উঠল মুসা, আরি, পায়ের ছাপ।
পাহাড়ের গভীরে সুড়ঙ্গের মেঝেতে এখানে পাথর নেই, বালি। তার ওপর ভেজা ভেজা। সুতরাং ছাপ পড়েছে। স্পষ্ট বসে গেছে বুটের ছাপ।
মনে হয় ঠিক পথেই এগোচ্ছি আমরা, কিশোর বলল। এসো।
উত্তেজিত হয়ে উঠেছে তিনজনেই। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ঢুকল আরেকটা গুহায়। এটাও বিশাল। এখানে যতগুলো দেখেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়। তিনটে টর্চের মিলিত আলোতেও দেয়াল বা ছাদের সমস্ত জায়গী একবারে দেখা গেল না।
পাথরের ছড়াছড়ি এখানে। মেঝেতে পাথর স্তূপ হয়ে আছে। দেয়ালে অসংখ্য সুড়ঙ্গমুখ।
আলো আরও বেশি হলে ভাল হত, রবিন বলল, ভাল করে দেখতে পারতাম।
আলোর ব্যবস্থা হয়তো করা যায়, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। কিন্তু কত সুড়ঙ্গ দেখেছ? পাহাড়ের নিচে জালের মত বিছিয়ে আছে। সবগুলো দেখতে হলে অনেক সময় লাগবে। ততক্ষণ বসে থাকবে না লোকটা, যার পেছনে লেগেছি।
তবু আরেকটু খুঁজে দেখা দরকার।
আলোর ব্যবস্থা কি করে করবে? জানতে চাইল মুসা।
লাকড়ি দিয়ে মশাল বানাতে পারি, জবাব দিল কিশোর। তিনজনের হাতে তিনটে মশাল থাকলে অনেক আলো হবে। তা ছাড়া টর্চের ব্যাটারি ফুরানোরও ভয় থাকবে না।
চলো তাহলে, বানিয়ে নিয়ে আসি।
প্রথম গুহাটায় ফিরে এল ওরা।
লাকড়ির স্তূপের দিকে এগোতে গিয়ে ভুরু কুঁচকে গেল রবিনের। চেঁচিয়ে উঠল, একি!
কি হলো? একসঙ্গে জিজ্ঞেস করল কিশোর আর মুসা।
তাকিয়ে আছে রবিন। টর্চের আলো ফেলেছে যেখানে ওদের জিনিসপত্র রেখেছিল সেখানে। খাবারের টিনগুলো সব গায়েব। পড়ে আছে কেবল খাওয়া পাউরুটির খানিকটা অবশিষ্ট আর মাছের একটা খালি টিন।
নিয়ে গেছে! কিশোর বলল।
নিশ্চয় সেই লোকটা, বলল রবিন, যার পেছনে আমরা লেগেছি। আমরা জেগে যাওয়ায় লুকিয়ে পড়েছিল। যেই আমরা গুহা থেকে বেরিয়েছি, চুপচাপ বেরিয়ে এসে খাবারগুলো সব চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে।
খাবার আমাদের দরকার নেই আপাতত, কিশোর বলল, ওব্যাপারে চিন্তা না করলেও চলবে। চলো, যা করছিলাম, করি। লোকটাকে খুঁজে পেলে খাবারগুলোও ফেরত পাব।
ওর সঙ্গে কথা আছে আমার, রাগ চেপে বলল মুসা।
কথা আমাদেরও আছে।
কিন্তু গেল কোনদিকে? রবিনের প্রশ্ন।
জুতোর ছাপ যেখানে পেয়েছি, তার আশোঁপাশেই আছে হয়তো। যেখান থেকে এইমাত্র ফিরে এলাম ওদিকেই খুজব।
বাইরে চলে গিয়ে থাকে যদি?
মাথা নাড়ল কিশোর, মনে হয় না। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বোঝা নিয়ে বাইরে বেরোবে না সে। লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ের নিচেই কোথাও।
হাতে কয়েকটা করে লাকড়ি নিয়ে বড় গুহাটায় আবার এসে ঢুকল তিনজনে। মশালের আলোয় ভাল করে দেখতে লাগল গুহাটা। এত বেশি সুড়ঙ্গমুখ আর ফাটল দেখা গেল, সবগুলোতে ঢোকার কথা ভেবে দমে গেল ওরা।
তবে হাল ছাড়ল না। একধার থেকে খোঁজা শুরু করল। কোনটা ছোট সুড়ঙ্গ, কোনটা বেশ লম্বা। কোন কোন ফাটলের ওপাশে কয়েক হাত দূরেই দেয়াল।
কোনখানেই লোকটার আর কোন চিহ্ন দেখা গেল না।
হতাশ হয়ে মুসা বলল, অহেতুক খুঁজে আর লাভ নেই। চলো, চলে যাই।
প্রথম গুহাটায় ফিরে চলল আবার ওরা।
.
১০.
বাকি রাতটা নিরাপদেই কাটল।
ঘুম ভাঙতে দেখল ওরা, ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে। গুহা থেকেই চোখে পড়ল সাগরের রোদ ঝলমলে নীল জল! পর
পেটে মোচড় দিল মুসার। জিজ্ঞেস করল, কি করব? খাবার তো একদম নেই। আনতে যেতে হবে না?
হবে, বলে চুপ করে ভাবতে লাগল কিশোর।
রবিন বলল, লোকটাকে এখন আরেকবার খুঁজতে বেরোলে কেমন হয়?
ওকে পেলেই সমস্যা চুকে যায়, খাবারগুলো আদায় করে নিতে পারব।
মাথা নাড়ল কিশোর। লাভ হবে বলে মনে হয় না। রাতেই যখন পাইনি, ও কি আর এখন আমাদের জন্যে বসে আছে নাকি?
মুসা বলল, অ্যাই, কিশোর, এক কাজ তো করতে পারি, আমার মেটাল ডিটেক্টরটাকে কাজে লাগাতে পারি…
তাতে কি হবে? বাধা দিল রবিন। তুমিই তো সেদিন বললে এই যন্ত্র মানুষ খুঁজে বের করতে পারে না…
মানুষ না পাক, সূত্র তো খোঁজা যায়। এমনও তো হতে পারে, টিনগুলো সঙ্গে না নিয়ে আশপাশেই কোথাও লুকিয়ে রেখে গেছে লোকটা? ভারী বোঝা, একার পক্ষে বয়ে বেশিদুর নেয়া কষ্টকর।
ওর কথায় যুক্তি আছে। তবে অতটা আশা করতে পারল না বলে চুপ করে রইল কিশোর।
রবিন বলল, দেখো আধাঘণ্টা, তারপর না পেলে অহেতুক সময় নষ্ট না করে খাবার আনতে যাওয়াই উচিত হবে আমাদের। শরীরে শক্তি থাকতে থাকতে যাওয়া ভাল, এই পাহাড় পেরোনো চাট্টিখানি কথা না। কি বলো, কিশোর?
মাথা ঝাঁকিয়ে তার সঙ্গে একমত হলো কিশোর।
মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে কাজে লেগে গেল মুসা। তার ইচ্ছে কোনভাবে যন্ত্রটাকে ব্যবহার করা, খাবার পাক আর না পাক।
তবে কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই ওদেরকে অবাক করে দিয়ে সঙ্কেত দিতে শুরু করল যন্ত্রটা। গুহামুখের কাছে যেখানে সঙ্কেত দিল সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মুসা। একটা পাথরের আড়াল থেকে বের করল জিনিসটা। তুলে দেখাল সঙ্গীদের।