বাজে কথা বলবেন না, সরুন! ধমকে উঠল কিশোর। কাল সকালেই একটা ব্যবস্থা করব আপনার। চুরি করে অন্যের বাড়িতে রাতদুপুরে শুয়ে থাকা বের করব।
ধমকে কাজ হলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল টোড। সরার কোন লক্ষণ। নেই। কিশোরের সমানই লম্বা। মুখে শয়তানি হাসি।
ওর খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা নোংরা চেহারাটা সহ্য করতে পারছে না কিশোর। ঠোঁট গোল করে জোরে শিস দিয়ে ডাকল রাফিকে।
লাফ দিয়ে জিনার বিছানা থেকে নামল রাফি। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নেমে এল। দরজার কাছে এসেই গন্ধ পেল টোডের। একটুও পছন্দ হলো না। গেল খেপে। দাঁতমুখ খিঁচিয়ে গরগর করতে করতে দরজায় এসে দাঁড়াল।
তাকাও এদিকে!একটানে পাল্লা লাগিয়ে দিল টোড। বাইরে রয়ে গেল রাফি। কিশোরের দিকে তাকিয়ে নোংরা হলদেটে দাঁত বের করে হেসে বলল, এখন?
এই তরকারিগুলো তোমার মাথায় ঢালব! ভেজিটেবলের পাত্রটা তুলে এগিয়ে এল কিশোর। মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গেছে।
ঝট করে মাথার ওপর দু-হাত তুলে নিচু হয়ে গেল টোড। না না, এমনি…দুষ্টুমি করছিলাম তোমার সঙ্গে!…তাকাও এদিকে, খাবারগুলো নষ্ট কোরো না। ওপরতলায় যাবে তো, যাও
সোফার কাছে সরে গেল আবার সে।
দরজা খুলল কিশোর।
গরগর করছে রাফি। শয়তান লোকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুমতি চাইছে।
তার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল টোড। ওটাকে আটকাও! কুত্তা দেখতে পারি না আমি!
ডারবিটাকে সহ্য করো কিভাবে তাহলে? বৌকে ভয় পাও বুঝি? রাফি, ছেড়ে দে। তোর গরগরানি শোনার যোগ্যও না ও।
ওপরে উঠে এল কিশোর। নিচতলায় কথা কাঁটাকাটির শব্দ শুনেছে, কি, হয়েছে শোনার জন্যে তাকে ঘিরে এল সবাই।
জানাল কিশোর। টোডের মুখে তরকারি পড়ার কথা শুনে হেসেই অস্থির সব। রাফি পর্যন্ত কিছু না বুঝে খেক খেক করে হাসল।
হাসতে হাসতে বলল রবিন, সবটা তরকারি মাথায় না ফেলে ভালই করেছ। তাহলে আমাদের খাওয়াটা যেত। মিসেস টোড শুনলে কি করবে ভাবছি।
কি আর করবে, খাওয়া শুরু করে দিয়েছে মুসা। বড়জোর নিজের মাথার চুল ছিড়বে যা-ই বলো, রাধে কিন্তু ভাল। মাংসটা চমৎকার হয়েছে।
চেটেপুটে সব সাফ করে ফেলল ওরা।
এরপর টোড পরিবারকে নিয়ে আলোচনায় বসল।
বেঙনি আর বেঙাচির জ্বালায়ই মরছি, আবার এসেছে একটা বেঙ, মুসা বলল তিক্তকণ্ঠে। এবার বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে আমাদের। জিনা, কাল তোমার আব্বাকে বুঝিয়ে বলো সব।
বলব। তবে শুনবে বলে মনে হয় না। কিছু শুনতেও চায় না, বুঝতেও চায় না, আব্বাকে নিয়ে এই হলো সমস্যা, হাই তুলতে শুরু করল জিনা। ঘুম পাচ্ছে আমার। রাফি, চল।
ছেলেদেরকে তাদের ঘরে রেখে নিজের ঘরে শুতে চলে গেল সে।
পেটে খিদে ছিল বলে এতক্ষণ ছটফট করেছে। কিন্তু এখন শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল চারজনেই।
সকালে ওদেরকে অবাক করে দিয়ে নাস্তা তৈরি করে দিল মিসেস টোড।
কিশোর অনুমান করল, আংকেল ফোন করবেন তো, আমরা যদি কিছু বলে দিই, এ-জুন্যে বানিয়ে দিয়ে গেল। মহা ধড়িবাজ মহিলা।
খাওয়ার পর ঘড়ি দেখল মুসা। মাত্র আটটা বেজেছে। বলল, ফোন তো করবেন নটায়। এখনও একঘণ্টা বাকি। চলো, সৈকত থেকে হেঁটে আসি।
বেরিয়ে পড়ল ওরা। বাগানে বসে আছে টেরি। জিনাকে দেখে মুখ ভেঙচাল। রাফি ঘাউ করে উঠতেই কুঁকড়ে গেল।
বাগানের বাইরে বেরিয়ে এল ওরা। রবিন বলল, আমার মনে হয় মাথায় দোষ আছে ছেলেটার নইলে এরকম করে না।
বাদ দাও ওর কথা, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কিশোর।
নটা বাজতে দশ মিনিট বাকি থাকতে বাড়ি ফিরল ওরা। বাগানে ঢুকতেই কানে এল টেলিফোনের শব্দ।
দৌড় দিল জিনা। তার আগেই মিসেস টোড ধরে ফেলুক, এটা চায় না।
কিন্তু কাছেই ছিল মহিলা, যেন ফোন ধরতেই তৈরি হয়ে ছিল, ধরে ফেলল।
হলে ঢুকতেই গোয়েন্দাদের কানে এল, মিসেস টোড বলছে, হ্যাঁ, স্যার, সব ঠিক আছে, স্যার।…না, কোন অসুবিধে নেই, স্যার। আমার স্বামীও চলে এসেছে, ছুটি পেয়েছে জাহাজ থেকে। আমাকে সাহায্য করতে পারবে। আপনি একটুও চিন্তা করবেন না, স্যার। সব সামলে রাখব। আপনার যখন ইচ্ছে আসুন…না না, বাচ্চাদের নিয়ে একটুও ভাববেন না…
আর সহ্য করতে পারল না জিনা। বন্য হয়ে উঠেছে সে। এক থাবায় কেড়ে নিয়ে রিসিভার কানে ঠেকাল, আব্বা, আম্মা কেমন আছে?
আর খারাপ হয়নি। কিন্তু কালকের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তোমাদের জন্যে খুব চিন্তায় ছিলাম। মিস্টার টোড এসেছে শুনে বাঁচলাম। আর কোন অসুবিধে হবে না তোমাদের। বাড়িঘরের জন্যেও চিন্তা নেই। তোমার আম্মাকে বলব সব ঠিক আছে।
না, নেই! ভয়ানক অবস্থা এখানে। আব্বা, শোনো, টোডদের বিদেয় করে দিই, আমরাই সব সামলাতে পারব…
বলো কি! আঁতকে উঠলেন যেন মিস্টার পারকার। অসম্ভব। তোমরা পারবে নাঃ..যা বলি শোনো…
আব্বা, কিশোর কথা বলবে।
অসহায় ভঙ্গিতে কিশোরের হাতে রিসিভার গুঁজে দিল জিনা। যদি সে কিছু করতে পারে, বোঝাতে পারে তার আব্বাকে।
হ্যালো, আংকেল, আন্টি কেমন?
আগের মতই। তবে আর খারাপ হয়নি।
ভাল। শুনে খুশি হলাম। আংকেল, শুনুন, মিসেস টোডরা বড্ড জ্বালাচ্ছে…
আরে, তুমিও তো জিনার মতই কথা বলছ দেখছি! রেগে গেলেন মিস্টার পারকার। মহিলার বয়েস হয়েছে, সেটা দেখবে না? জোয়ান মানুষের মত কি আর সব ঠিকমত পারে? কোথায় জিনাকে বোঝাবে, তা না, তোমরাও অভিযোগ শুরু করলে। দেখো, যদি থাকতে পারো থাকো, বেশি কষ্ট হলে বাড়ি চলে যাও। তোমার আন্টি ভাল হলে আবার এসো। আমার আর কিছু বলার নেই।