দৃষ্টির লড়াইয়ে হার মানল মিসেস টোড। বলল, বেশ, এবারকার মত দিচ্ছি। কিন্তু এরপর শয়তানি করলে খাওয়া বন্ধ করে দেব।
অত সহজ না। সোজা পুলিশের কাছে যাব, কথাটা কিছু ভেবে বলেনি কিশোর, আপনাআপনি মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে।
চমকে গেল মিসেস টোড। তাড়াতাড়ি বলল, থাকগে, যা হওয়ার হয়েছে, কিছু মনে কোরো না। এই ডাক্তার, হাসপাতালে অস্থির করে দিয়েছে সবাইকে…যাও, আমি চা নিয়ে আসছি।
মহিলার এই হঠাৎ পরিবর্তন অবাক করল কিশোরকে। পুলিশের কথায় এমন চমকে গেল কেন? ভাবতে ভাবতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। একটা কারণ হতে পারে, পুলিশ এলে পারকার আংকেলকে খবর দেবে। ভয়ানক রেগে যাবেন তিনি। মিসেস টোডকেও ছাড়বেন না। তাঁকে ভয় পায় মহিলা।
সবাইকে এসে খবর দিল কিশোর, চা আসছে।
চা খাওয়া জমল না। কান্না থামালেও মন খারাপ করে রেখেছে জিনা। রবিন আর মুসা তাকে নানা ভাবে খুশি করার চেষ্টা করে করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। চায়ের সঙ্গে কি দিয়ে গেল মিসেস টোড, খেয়ালই করল না কেউ।
যদি কোন কারণে মিস্টার পারকার ফোন করেন, এ-জন্যে খাওয়ার পর দূরে কোথাও গেল না ওরা, বাগানে বসে রইল।
রান্নাঘর থেকে হঠাৎ শোনা গেল:
জিনা, ঘিনাঃ..
উঠে দাঁড়াল কিশোর। জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। একা বসে আছে টেরি।
এই, বেরিয়ে এসো! কঠিন কণ্ঠে ডাকল,কিশোর।
নড়ল না টেরি। গানও গাইতে পারব না?
নিশ্চয় পারবে। সেজন্যেই তো ডাকছি। এটা পুরানো হয়ে গেছে, এসো, নতুন আরেকটা শিখিয়ে দিই।
বেরোলেই আমাকে মারবে।
না না, মারব কেন, আদর করব! একটা মেয়ের মায়ের অসুখ, তার এমনিতেই মন খারাপ, তাকে খেপাতে লজ্জা করে না! বেরোবে, না কান ধরে বের করে আনব?
কিশোরের পাশে এসে দাঁড়াল মুসা।
ভয় পেয়ে গেল টেরি। চিৎকার করে ডাকল, মা, ও মা! কোথায় তুমি!
জানালা দিয়ে আচমকা হাত ঢুকিয়ে দিল মুসা। টেরির কান চেপে ধরে হ্যাঁচকা টান মারল।
ছাড়ো, ছাড়ো!…ওহ, কান ছিঁড়ে ফেলল-মা!
ঘরে ঢুকল তার মা। এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এল জানালার দিকে।
কান ছেড়ে হাতটা বের করে আনল মুসা। পালাতে গিয়েও পালাল না। কিশোরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে রইল।
চেঁচাতে লাগল মিসেস টোড, কত্তবড় সাহস! আমার ছেলেকে চড় মারে…কান টানে! কি, ভেবেছ কি তোমরা!
কিছুই না, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। তবে আপনার ছেলের খানিকটা শিক্ষা দরকার। আপনারই সেটা দেয়া উচিত ছিল। পারেননি যখন আমাদেরই দিতে হচ্ছে।
তুমি..তুমি একটা শয়তান!
গাল দেবেন না। যদি কাউকে দিতেই হয়, আপনার ছেলেকে দিন। ও ওই ডার্টি কুত্তাটার চেয়েও খারাপ।
আরও রেগে গেল মিসেস টোড, ওর নাম ডার্টি নয়, ডারবি।
ডার্টি। অত নোংরী কুত্তার এটাই ঠিক নাম। গা-টা ধোঁয়ান, উকুন পরিষ্কার করান, গন্ধ যাক, তারপর ভাবব ডারবি বলা যায় কিনা।
প্রচণ্ড রাগে ফুঁসতে লাগল মিসেস টোড।
কেয়ারই করল না কিশোর। মুসাকে নিয়ে ফিরে এল জিনা আর রবিন যেখানে বসে আছে।
যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেছে, ঘাসের ওপর বসতে বসতে বলল কিশোর।
কি হয়েছে? জানতে চাইল রবিন।
মুসা টেরির কান টেনেছে। সেটা দেখে ফেলেছে ওর মা। এরপর আর আমাদের খেতে দেবে কিনা সন্দেহ আছে।
না দিলে নিজেরাই নিয়ে খাব, জিনা বলল। শয়তান মহিলাটাকে যে কেন জায়গা দিতে গেল মা…
ওই দেখো, ডার্টি, বলে উঠল মুসা।
রাফি, যাসনে, যাসনে! কলার ধরে আটকানোর জন্যে থাবা মারল কিশোর। ধরতে পারল না।
কেউ নেই ভেবে বেরিয়ে পড়েছিল ডারবি। রাফিকে দেখেই এমন এক চিৎকার দিল, মনে হলো মেরে ফেলা হচ্ছে ওকে।
তার ঘাড় কামড়ে ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল রাফি।
লাঠি নিয়ে বেরোল মিসেস টোড। এলোপাতাড়ি বাড়ি মারতে শুরু করল। কোন কুকুরটার গায়ে লাগছে, দেখল না। রাগে অন্ধ হয়ে গেছে।
পানির পাইপের দিকে দৌড় দিল রবিন।
দরজায় দেখা দিল টেরি। রবিনকে পাইপের দিকে যেতে দেখেই ঘরে ঢুকে গেল আবার। গা ভেজাতে চায় না।
গায়ে পানির ঝাপটা লাগতে লাফিয়ে সরে দাঁড়াল রাফি। চোখের পলকে লাফিয়ে উঠে গিয়ে মিসেস টোডের স্কার্টের নিচে লুকাল ডারবি।
বিষ খাওয়াব আমি কুত্তাটাকে! মুখচোখ ভয়ঙ্কর করে গজরাতে লাগল। মিসেস টোড। এত্তবড় শয়তান! বিষ খাইয়ে না মেরেছি তো…
গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেল সে।
আগের জায়গায় এসে বসল গোয়েন্দারা।
উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিনা বলল, সত্যিই কি বিষ খাওয়াবে?
বলা যায় না, কিশোর বলল, ওই মহিলাকে বিশ্বাস নেই। চোখে চোখে রাখতে হবে রাফিকে। আমাদের নিজেদের খাবার থেকে ভাগ দিতে হবে।
কুকুরটাকে কাছে টেনে নিল জিনা। গলা জড়িয়ে ধরল। ইস, আম্মা আব্বা যে কবে আসবে! এই যন্ত্রণা থেকে তাহলে মুক্তি পাই!
হঠাৎ টেলিফোনের শব্দ চমকে দিল সবাইকে। লাফিয়ে উঠে দৌড় দিল ওরা। প্রায় উড়ে এসে ঘরে ঢুকল জিনা। থাবা দিয়ে তুলে নিল রিসিভার।
জিনা? বাবার গলা শুনে দুরুদুরু করে উঠল জিনার বুক।
আব্বা, আম্মা কেমন আছে? জলদি বলো!
পরশুর আগে বলা যাবে না। নানা রকম টেস্ট করছে ডাক্তাররা।
তুমি কবে আসছ?
বলতে পারছি না। তোমার মাকে ফেলে আসি কি করে? চিন্তা কোরো না। কাল সকালে আবার ফোন করব।
আব্বা, ককিয়ে উঠল জিনা, তোমরা নেই, খুব অশান্তিতে আছি। মিসেস টোড একটুও ভাল না।