কি করবে? খসখসে গলায় বলল টোড, ওর সঙ্গে পারা যাবে না। কিন্তু আমি ভাবছি, কিশোর ছেলেটা জানল কি করে টেরি কোথায় আছে? মাথায়ই কিছু ঢুকছে না আমার!
ঘরে ঢুকল ওরা। বন্ধ দরজার দিকে এগোল। পায়ে পায়ে রয়েছে ডারবি। লুকিয়ে থাকা গোয়েন্দাদের গন্ধ পেয়ে মৃদু গোঁ গোঁ করে উঠল।
লাথি মেরে ওকে সরিয়ে দিল টোড। শয়তান কুত্তা, কাজের কাজ কিচ্ছু নেই, খালি ভয়ে কেঁৎ-কোৎ করে!
বাবার গলা শুনেই ভেতর থেকে ককিয়ে উঠল টেরি, বাবা! এসেছ! জলদি খোলো! মরে গেলাম!
পাল্লার ওপর গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল মিসেস টোড। টান দিয়ে খুলে ফেলল খিল।
মাকে এসে জড়িয়ে ধরল টেরি। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল।
কে রেখে গেছে তোকে এখানে! জলদি বল! তোর বাবা ওদের গুলি করে মারবে! মারবে না, জন? ছোট্ট একটা দুধের শিশুকে এভাবে আটকে রেখে যায়, কোন শয়তান! মায়াদয়া নেই প্রাণে!
থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন পুলিশ অফিসার। টর্চের আলো ফেললেন টোডের মুখে। এমন চমকান চমকাল দুই টোড, যেন ভূত দেখেছে।
ঠিকই বলেছ, ডোরিয়া টোড, ভারি গলায় বললেন তিনি, একটা দুধের শিশুকে এভাবে আটকে রেখে যাওয়াটা শয়তানের পক্ষেই সম্ভব, যাদের প্রাণে বিন্দুমাত্র মায়াদয়া নেই। তোমরা সেই শয়তান, তাই না? ডলের মত একটা শিশুকে এনে আটকে রেখেছিলে, টাকার লোভে। তারপর তাকে একা ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলে। একবারও ভাবনি, বাচ্চাটা এরকম জায়গায় একা থাকবে কি করে।
মাছের মত নিঃশব্দে মুখ হাঁ করে আবার বন্ধ করল মিসেস টোড। কথা। আটকে গেছে।
ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরের মত চি-চি করে উঠল টোড, তাকাও এদিকে!
চার বছরের শিশুর মত কাঁদতে শুরু করল টেরি। এত্তবড় ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখে ঘৃণায় আরেকবার মুখ বাকাল গোয়েন্দারা।
হঠাৎ ওদের ওপর চোখ পড়তেই হিসিয়ে উঠল মিসেস টোড, তোমরা! মেয়েটাও আছে দেখি! ও, তাহলে বসকে খামোকা দোষ দিয়েছি। সব শয়তানি তোমাদের! টেরিকে কে আটকেছিল, বলো, জলদি বলো!
থানায় চলে আগে, ধমকের সুরে বললেন অফিসার, সব প্রশ্নের জবাব পাবে। টোডের পিস্তলটা কেড়ে নিলেন তিনি।
আর কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে যেতে হলো টোডদের।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে টেরি। বুঝতে পারছে, তার মা আর বাবাকে জেলে দেয়া হবে। তাকে পাঠানো হবে হয়তো কোন কঠিন স্কুলে, যেখানকার নিয়ম-কানুন ভীষণ কড়া। কত বছর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না, জানে না। ওদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াটা এক হিসেবে ভালই হবে ওর জন্যে, স্কুলে গেলে অন্তত মানুষ হওয়ার সুযোগ পাবে, কাছে থাকলে, যেটা হত না। ক্রিমিন্যালই হত বাবা-মার মত।
বাইরে বেরিয়ে অফিসারকে বলল কিশোর, আমাদের আর সঙ্গে যাওয়ার দরকার নেই নিশ্চয়। টোডদের বোটে করেই চলে যেতে পারবেন।
কুত্তাটাকেও নিয়ে যান, জিনা বলল। ওই নোংরা জানোয়ার আমার দ্বীপে রাখব না।
টোডদের নৌকাতেই তোলা হলো ওদেরকে। বলতে হলো না, টেরিকে উঠতে দেখেই লাফিয়ে তাতে চড়ে বসল ডারবি। রাফির জ্বলন্ত দৃষ্টির কাছ থেকে দূরে যেতে পারলে বাঁচে সে।
পুলিশের বোটের সঙ্গে নৌকাটা বাঁধা হলো, টেনে নিয়ে যাবে।
ঠেলা দিয়ে নৌকাটা পানিতে নামিয়ে দিল তিন গোয়েন্দা।
হাত নেড়ে বিদায় জানাল মুসা, বিদায় জনাব বেঙ, জেলে গিয়ে আবার কোনও বাচ্চাকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করুন। বিদায় জনাবা বেঙনি, বেঙাচিকে কোলে বসিয়ে রাখবেন, যাতে আরও বেশি করে কাঁদতে পারে সে। বিদায় বেঙচি, স্কুলে গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করে ভাল ছেলে হওয়ার চেষ্টা কোরো। বিদায় ডার্টি, তীরে নেমেই ভাল করে আগে গোসল করে নিবি। তোর গন্ধ রাস্তার কুত্তাও সহ্য করবে না, দূর দূর করে খেদাবে।
মুসার কথা আর বলার ভঙ্গি দেখে পুলিশরাও হাসতে শুরু করল।
হাত নেড়ে বিদায় জানালেন পুলিশ অফিসার।
গোমড়া মুখে নৌকায় বসে আছে দুই টোড, চোখ নামানো, তাকাতে পারছে না কারও দিকে।
পাহাড়ের একটা মোড়ের ওপাশে অদৃশ্য হয়ে গেল বোট দুটো।