খাওয়া শেষ করেই মিস্টার পারকার বললেন, হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। তিনি। খবর জানার জন্যে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছেন জিনার আম্মা।
তাকে বলব, পারকার বললেন, দ্বীপে চলে গেছ তোমরা। খুব ভাল আছ। তবে তোমাদের অ্যাডভেঞ্চারের কথা এখন বলা যাবে না, দুশ্চিন্তা করতে পারে। বাড়ি এলেই বলব সব।
গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন তিনি।
তখুনি দ্বীপে চলে যাবে কিনা, এ নিয়ে আলোচনা শুরু করল। গোয়েন্দারা। যেতে কোন বাধা নেই, অসুবিধে হলো ডলকে নিয়ে। তাকে কি করবে বুঝতে পারছে না।
সমস্যাটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে ওরা, এই সময় বিরাট একটা গাড়ি এসে থামল গেটের বাইরে। লাফ দিয়ে নামলেন লম্বা একজন ভদ্রলোক, সঙ্গে খুব সুন্দরী একজন মহিলা।
জিনা বলল, ডল, দেখো তোমার আব্বা-আম্মা বোধহয় এলেন।
.
আদরের চোটে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড় হলো ডলের। জোর করেই শেষে বাবা-মা দুজনের কাছ থেকে সরে এল।
তাঁদেরকে জানানো হলো সব। মিনিটে অন্তত বিশবার করে গোয়েন্দাদেরকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন মিস্টার হুবার্টসন, তাতেও যেন মন ভরছে না, আরও বেশি করে দিতে চাইছেন।
যে কোন একটা পুরস্কার চাও তোমরা, বললেন তিনি। যা ইচ্ছে। কি খুশি যে হয়েছি আমি তোমাদের ওপর, বলে বোঝাতে পারব না।
আপনি যে খুশি হয়েছেন, এতেই আমরা খুশি, কিশোর বলল, এটাই আমাদের পুরস্কার। ডলকে শয়তানদের হাত থেকে বের করে আনতে পেরেছি, আর কি চাই।
কিন্তু আমার কাছ থেকে তোমাদের কিছু নিতেই হবে!
কি যেন ভাবছে জিনা। তার গা ঘেঁষে বসে আছে ডল। বাবা-মায়ের অলক্ষ্যে কনুই দিয়ে গুঁতো মারল জিনার পেটে।
সত্যিই দিতে চান? হঠাৎ প্রশ্ন করল জিনা।
চাই! কি চাও, বলো?
দেবেন তো?
দেব।
বেশ, ডলকে কয়েক দিন আমাদের সঙ্গে দ্বীপে থাকতে দিন।
থমকে গেলেন হুবার্টসন। বলো কি! কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল…এতদিন পর ফিরে পেলাম মেয়েকে, ছেড়ে দেব… না দেখে থাকব কি করে?
আব্বা, তুমি কথা দিয়েছ ওদেরকে, যা চায় দেবে। ছুটে এসে বাবার হাত চেপে ধরল ডল, আব্বা, আমাকে থাকতে দাও! দ্বীপটা যে কি সুন্দর। আর গুহাটা, উফ! দাও না, আব্বা! ওখানে যা একটা দুর্গ আছে না, মাটির নিচে ঘর…
রাফিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব আমরা, সুপারিশ করল রবিন, কোন ভয় নেই। বড় বড় চোর-ডাকাতকেও ঘায়েল করে ফেলতে পারে সে। ডলের কিছু করতে পারবে না কেউ। কি রে রাফি, পাহারা দিয়ে রাখতে পারবি না?
মাথা দোলাল রাফি। বলল, হাউ!
অবশেষে রাজি হলেন হুবার্টসন, এক শর্তে দিতে পারি। কাল আমি আর তোমার আম্মা দ্বীপে যাব দেখতে, জায়গাটা সত্যি থাকার মত কিনা। দিনটা তোমাদের সঙ্গে কাটাব। আমাদেরকে উৎপাত মনে করা চলবে না।
করব না আব্বা, করব না! খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠল ডল। বাপের গা বেয়ে কোলে উঠে চপাৎ চপাৎ করে চুমু খেলো দুই গালে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, আপনারা তো নিশ্চয় হোটেলে উঠবেন? ডল তাহলে আমাদের কাছেই থাক, নাকি?
এতক্ষণে কথা বললেন ডলের আম্মা, সঙ্গে নিতে পারলেই খুশি হতাম। কিন্তু তোমাদের অখুশি করি কি করে। ঠিক আছে, থাক… হাসলেন তিনি।
গোয়েন্দাদের আরও কয়েকবার ধন্যবাদ জানিয়ে, গুডবাই জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন ডলের আব্বা-আম্মা।
মিনিটখানেক পর দরজায় টোকা পড়ল।
খুলে দিল জিনা। দেখে, একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছেন। বললেন, একটু আগে নৌকা নিয়ে দ্বীপে রওনা হয়েছে টোডরা। আমিও যাব। দ্বীপে ঢোকার রাস্তা চিনি না, পথটাও নাকি ভাল না শুনেছি। মিস জর্জিনা, তুমি তো সবচেয়ে ভাল চেনো। এলে ভাল হত।
আমি মাস্টার জর্জ, নট মিস জর্জিনা, গম্ভীর হয়ে বলল জিনা।
মুহূর্তের জন্যে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন পুলিশ অফিসার। সামলে নিয়ে বললেন, সরি, মাস্টার জর্জ। তো, আসবে?
খুশি হয়েই আসব। তবে একা নয়। আমার বন্ধুদেরও নিতে হবে।
কোন অসুবিধে নেই। এসো।
জিনার বোটে করে চলল সে আর তার বন্ধুরা। অফিসারও চললেন সেটাতে করেই। পেছনে বেশ কিছুদূর থেকে ওদেরকে অনুসরণ করে এল পুলিশের বোট।
দ্বীপের একটা ধারে নৌকা নিয়ে এল জিনা, যেখান দিয়ে ডাঙায় উঠতে কষ্ট হয়, তবে ওঠা যায়। সহজ পথ গোপন সৈকতটা অফিসারকে চেনাল না। ওটা ওদের নিজস্ব বন্দর।
টোডরা নামল ভাঙা জাহাজটার কাছ দিয়ে ঘুরে গিয়ে, যেখানে ওরা নেমেছে এ কদিন। পুলিশকে দেখতে পেল না।
অফিসারকে নিয়ে নিঃশব্দে দুর্গের কাছে চলে এল গোয়েন্দারা।
সিঁড়িমুখে আগে নামল জিনা। টর্চ হাতে আগে আগে চলল। পেছনে
পুরো দলটা। এখানকার গলিঘুপচি সবচেয়ে বেশি চেনে সে।
যে ঘরটায় আটকে রেখে গেছে টেরিকে, সেখানে এসে দেখল, দরজা। বন্ধই আছে। খিল লাগানো।
ফিসফিস করে কিশোর বলল, টোডরা এখনও আসেনি। লুকিয়ে পড়তে হবে।
লুকানোর জায়গার অভাব নেই। প্রচুর থাম আছে, দেয়াল আছে।
রাফিকে চুপ থাকতে বলল জিনা।
কয়েক মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। কথা বলতে বলতে আসছে টোডরা।
টেরিকে যদি ওখানে সত্যি আটকে রাখে, মিসেস টোড বলছে, যে রেখেছে, তার কপালে খারাপি আছে। দেখে নেব আমি! কিন্তু আটকাল কে, বলো তো? মেয়েটাই বা তাহলে কোথায়? আমার কি মনে হয় জানো, বস আমাদের সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আমাদের যে দশ হাজার ডলার দেবে বলেছিল, দেবে না। বোটে যে তল্লাশি চালাবে পুলিশ, বুঝে গিয়েছিল। সে জন্যেই সরিয়ে ফেলেছিল মেয়েটাকে। পুলিশ দেখেটেখে সন্দেহমুক্ত হয়ে চলে গেছে। ও এসে চুরি করে নিয়ে গেছে মেয়েটাকে। মাঝখান থেকে আমার ছেলেটাকে আটকে রেখে গেছে। আমি বসকে ছাড়ব না!