জিনার দ্বীপে, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর।
ছেলেমেয়েদের বসতে বললেন শেরিফ। একজন সহকারীকে ডাকলেন নোট নেয়ার জন্যে।
গোড়া থেকে সমস্ত কাহিনী বলে গেল কিশোর। কিছুই বাদ না দিয়ে। লিখে নিল শেরিফের সহকারী।
শুনতে শুনতে এমন অবস্থা হলো মিস্টার পারকারের, কোটর থেকে যেন ছিটকে বেরিয়ে আসবে চোখ।
শেরিফ জিজ্ঞেস করলেন, যে বোটটা দিয়ে আনা হয়েছে ডলকে, সেটার ক্যাপ্টেনের নাম কি?
বলতে পারব না, মাথা নাড়ল কিশোর। টেরি কেবল বলেছে, তার মাকে নাকি মারিয়া নামটা বলতে শুনেছে।
মারিয়া! ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম, জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিলেন শেরিফ। পুলিশের খাতায় নাম আছে ওটার, বদনাম। ক্যাপ্টেনের নাম হিউগো ব্রোকার, মারিয়া তার বোটের নাম। ডাকাতির দায়ে জেল খেটেছে বহুবছর হিউগে। বেরিয়েই আবার শুরু করেছে। টোডদের সঙ্গে জোট পাকিয়ে মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেছে। কদিন ধরে এদিকের সাগরে তার বোটটাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে, রিপোর্ট পেয়েছি। কিডন্যাপের খবরটা শুনেই সন্দেহ হয়েছিল আমার, তার কাজ হতে পারে। হলোও তাই।
ওকে ধরা দরকার, কিশোর বলল। টোডদেরকেও।
বোটটা আটকানো কোন ব্যাপারই না। এখনই অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি, আমি। টোডরাও পালাতে পারবে না। কিন্তু ওরা তো সব অস্বীকার করবে। প্রমাণ করব কি করে এই কিডন্যাপিঙে ওরা জড়িত?
আমরা সাক্ষি দেব। তবে স্বীকারোক্তির সহজ একটা পথ আমি বাতলে দিতে পারি…
কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালেন শেরিফ, কি ভাবে?
চমকে দিয়ে। ওদের ছেলেকে পাতালঘরে আটকে রেখে এসেছি আমরা। সেই খবরটা কোনভাবে ওদের কানে তুলে দিতে হবে। ওরা তখন ছেলেকে বের করে আনতে পাতালঘরে নামবে। ডলকে যে নিয়ে এসেছি। আমরা, সেটা ওদেরকে জানানো হবে না। ওখানে ছেলেকে দেখে, ভীষণ চমকে যাবে ওরা। ডল কোথায় জিজ্ঞেস করবে। কাছেই লুকিয়ে থাকবে পুলিশ। আড়াল থেকে সব শুনবে। পুলিশ অফিসারের সাক্ষি নিশ্চয় আদালত গ্রহণ করবে।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন শেরিফ। হাসি ফুটল মুখে। ধীরে ধীরে চওড়া হলো হাসিটা। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দিলেন তাঁর সহকারীকে।
পুলিশকে সহায়তা করার জুন্যে বার বার ছেলেমেয়েদের ধন্যবাদ দিলেন তিনি। হাত বাড়ালেন ফোনের দিকে, ডলের বাবাকে খবর জানানোর জন্যে।
জিনার দিকে তাকিয়ে মিস্টার পারকার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি বাড়ি ফিরে যাবে?
গিয়ে আর কি করব এখন? কাজের মানুষ নেই, কিছু নেই…
আইলিনকে খবর পাঠিয়েছি। ও আজই চলে আসবে।
আম্মা না আসা পর্যন্ত আমরা দ্বীপেই থাকতে চাই, আব্বা। আম্মার ঘর খালি দেখলে ভাল লাগে না আমার। আইলিন যখন আসছে আর তো কোন চিন্তা নাই। ঘরদোর সে-ই দেখেশুনে রাখবে।
রাজি হয়ে গেলেন পারকার, বেশ। তবে তোমার আম্মা আসার পর আর একদিনও দেরি করতে পারবে না।
দেরি করব মানে? তাকে দেখার জন্যে পাগল হয়ে আছি আমি।
খবর পাবে কি করে?
হাসল জিনা। সে তোমাকে ভাবতে হবে না। আম্মা আসার সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছে যাবে আমার কাছে।
পারকারের দিকে তাকিয়ে হাসলেন শেরিফ। গোয়েন্দাগিরি করে ওরা, ভুলে যাচ্ছ কেন, জনাথন। একআধজন স্পাই থাকবে না, এটা কি হয়?
.
১৬.
সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন মিস্টার পারকার। ডল ইচ্ছে করেই চলে এসেছে তাদের সঙ্গে। শেরিফকে অনুরোধ করে এসেছে, তার বাবা-মা এলে যেন গোবেল ভিলায় পাঠিয়ে দেন।
হাসিমুখে বাগানের গেট খুলে দিল আইলিন। জরুরী তলব পেয়ে ছুটতে ছুটতে চলে এসেছে। কি ব্যাপার, কিছুই জানতে চাইল না। সবাইকে হাত মুখ ধুয়ে এসে আগে খেতে বসতে বলল, রান্না শেষ।
খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করল ছেলেমেয়েদের। গোবেল বীচে আসার মজা এতদিনে আরম্ভ হয়েছে।
খেতে খেতে আইলিনকে তাদের অ্যাডভেঞ্চারের গল্প শোনাল ওরা।
অবাক হলো না আইলিন। এরকম অ্যাডভেঞ্চার অনেক করেছে ওরা। এসব দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গেছে তার।
হঠাৎ জানালার বাইরে চোখ পড়ল রবিনের। মুখের কাছে থেমে গেল চামচ। পাতাবাহারের বেড়ার ওপাশে উঁকিঝুঁকি মারছে একজন লোক।
এই, দেখো দেখো!
মুখ ফিরিয়ে তাকিয়েই মুসা বলে উঠল, খাইছে! বড়-বেঙটা এখানে কি করছে।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। তোমরা বসো এখানে। আমি আসছি। ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।
বেড়ার কাছে এসে ডাক দিল, মিস্টার টোড, শুনুন। টেরিকে খুঁজছেন?
চমকে গেল টোড। তাকিয়ে রইল কিশোরের দিকে। কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
দুর্গের নিচে পাতালঘরে আছে ও, জানাল কিশোর। গেলেই পাবেন।
তাকাও এদিকে!ওর কথা তুমি জানলে কি করে? ছিলে কোথায় এ কদিন? বাড়ি যাওনি?
ওসব আপনার জানার দরকার নেই। টেরিকে পেতে চাইলে দ্বীপে চলে যান। পাতালঘরে আটকা পড়ে কান্নাকাটি করছে বেচারা।
চোখে চোখে তাকাল টোড। কিশোরের মনে কি আছে বোঝার চেষ্টা করল। তারপর ঘুরে হাঁটতে শুরু করল।
দৌড়ে ঘরে ফিরে এল কিশোর, থানায় ফোন করার জন্যে। সে নিশ্চিত, মিসেস টোডকে গায়ের ভেতর কোথাও রেখে এসৈছে টোড, টেরিকে খুঁজতে খুঁজতে নিজে চলে এসেছে এখানে। কিশোরদের এখানে দেখতে পাবে কল্পনাও করেনি। এখন গিয়ে মিসেসকে বলবে সব, যত তাড়াতাড়ি পারে চলে যাবে। দ্বীপে, টেরিকে বের করে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করবে।