কিন্তু ডলকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শুনলেই তো পালাবে টোডেরা। একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, রবিন বলল। ওদের ধরা দরকার।
দেখি, বুদ্ধি একটা বের করেই ফেলব।
চলো তাহলে, মুসা বলল। দেরি করে লাভ কি?
এখানে আমার খুব ভাল লাগছে, ডল বলল। গুহাটা খুব সুন্দর। আমার থাকতে ইচ্ছে করছে। আমাকে রেখে তোমরা আবার এখানে আসবে?
হাসল জিনা। আসব। কেন?
আমিও আসব তোমাদের সঙ্গে। উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছে তার চোখ। কোনদিন গুহায় থাকিনি তো, থাকতে ইচ্ছে করছে। কি সুন্দর গুহা, দ্বীপ, রাফির মত ভাল কুকুর…জিনাআপু, আমি তোমার মত প্যান্ট-শার্ট পরে আসব।
লও ঠ্যালা! চট করে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। চোখে চোখে কথা হয়ে গেল।
মুচকি হাসল তিন গোয়েন্দা।
কিন্তু তোমার আব্বা-আম্মা তো তোমাকে আসতে দেবে না, জিনা বলল। তবু, বলে দেখতে পারো। তুমি এলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। বরং মজাই হবে। তুমি খুব ভাল মেয়ে।
রতনে রতন চেনে, ফস করে বলে ফেলেই জিভ কামড়াল মুসা।
ভুরু কোঁচকাল জিনা, কি বললে?
না, কিছু না, আরেক দিকে তাকিয়ে বলল মুসা।
জিনা রেগে গেলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলা যায় না। তাড়াতাড়ি রবিন বলল, বসে আছি কেন আমরা এখনও, যেতে হবে নাঃ..
খাঁড়ির গুহা থেকে নৌকাটা বের করা হলো। সেটা দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে উঠল ডল। বার বার বলতে লাগল, যে ভাবেই হোক, এই দ্বীপে সে ফিরে আসবেই।
নৌকায় উঠল সবাই। পঁাড় তুলে নিল মুসা ও জিনা।
অবাক হয়ে ডল বলল, জিনাআপু, তুমি নৌকাও চালাতে পারো! দাঁড়াও, আমি তোমার কাছে দাঁড় বাওয়া শিখব।
.
ঘাটের কাছেই দেখা হয়ে গেল জেলের ছেলে ফগের সঙ্গে। জিনার নৌকাটা দেখে দৌড়ে এসে ওটা তীরে টেনে তুলতে সাহায্য করল।
আমি এখনই রওনা হতাম, বলল সে। দ্বীপে যেতাম, তোমাদের খবর দেয়ার জন্যে। মাস্টার জর্জ, তোমার আব্বা চলে এসেছেন। কাল রাতে। তোমার আম্মা আসেননি। তবে তার শরীর এখন অনেক ভাল, তোমার আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ছয়-সাতদিনের মধ্যেই বাড়ি চলে আসবেন।
আব্বা এসেছে কেন? জানতে চাইল জনা।
আসবেন না? তোমাদের কাছে টেলিফোন করেন, কেউ ধরে না। চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। আমার কাছে তোমাদের খবর জানতে এসেছিলেন। আমি বলিনি। কি রাগা যে রেগেছেন তোমাদের ওপর। বাড়ি ফিরে দেখেন, জিনিসপত্র সব তছনছ। তোমরা নেই, টোডেরা নেই। এখন গেছেন থানায়, রিপোর্ট করতে।
ভাল হয়েছে, ওখানেই দেখা হবে আমাদের সঙ্গে। আমার কথায় কান না দিয়ে মিসেস টোডকে বিশ্বাস করার ফল তো পেল। আক্কেল হয়েছে।
ডলকে জিনাদের সঙ্গে দেখে খুব অবাক হয়েছে ফগ। বার বার তার দিকে তাকাতে লাগল।
জিনা বলল, সব তোমাকে বলব, ফগ। এখন সময় নেই। আমরাও থানায় যাচ্ছি।
সারি দিয়ে থানার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল গোয়েন্দাদের বিচিত্র দলটা। গেটে ডিউটিরত সেন্ট্রি ওদের চেনে। ভুরু কুঁচকে তাকাল। কি ব্যাপার, জিনা? তোমার আব্বা এল একটু আগে, তুমিও…।
জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করল জিনা, আব্বা কোথায়?
শেরিফের রুমে।
আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করল না জিনা। সোজা এসে ঢুকল শেরিফের ঘরে।
দরজা খোলার শব্দে ফিরে তাকালেন মিস্টার পারকার। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। এসেছ, না! ছিলে কোথায়? বাড়িঘর সব খালি ফেলে..ডাকাতি করে তো সব নিয়ে গেছে…
করেছে তো তোমার সেই অতি বিশ্বাসী বেঙের দল
কার দল!
বেঙ, বেঙ! বাবার ওপর প্রচণ্ড অভিমানে খেপে আছে জিনা। টোড মানে যে বেঙ, ভুলে গেছ!…জাহান্নামে যাক ঘরবাড়ি! আম্মা কেমন আছে, বলো!
ভাল। আগের চেয়ে অনেক ভাল, জিনাকে রেগে উঠতে দেখে শান্ত হয়ে গেলেন মিস্টার পারকার। জিনা যেমন তাকে ভয় পায়, তিনিও তাকে ভয় পান। ও রেগে গেলে ওর মা ছাড়া আর কেউ ঠাণ্ডা করতে পারবে না, জানেন। ঝামেলার মধ্যে গেলেন না। বসে পড়লেন আবার। তোমার মা-ই তো আমাকে পাগল করে দিল। আসতে বাধ্য করল। খালি এককথা, ছেলেমেয়েগুলো কেমন আছে, কি খাচ্ছে না খাচ্ছে…আমি এদিকে ফোন করে জবাব পাই না। তাকে কি জবাব দেব? মিথ্যেই বলতে হলো, ভাল আছ। কিন্তু কত আর মিথ্যে বলা যায়। শেষে দেখতে এলাম। এসে তো দেখি এই অবস্থা। ছিলে কোথায়?
দ্বীপে। কিশোরের মুখেই সব শোনো।
বাপ-মেয়ের এই ঝগড়া খুব উপভোগ করেন শেরিফ লিউবার্তো জিংকোনাইশান। জিনার বাবার বন্ধু তিনি, বাড়িতে যাতায়াত আছে। মুচকি মুচকি হাসছেন।
পাল্লা আবার ঠেলে খুলে ডাক দিল জিনা, কিশোর, এসো।
নাটকীয় ভঙ্গিতে ডলের হাত ধরে ঘরে ঢুকল গোয়েন্দাপ্রধান। পেছনে তার দলবল।
ডলকে দেখে হাঁ হয়ে গেলেন শেরিফ। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। একে কোথায় পেলে! এই খুকি, তুমি ডরোথি না?
ডরোথি হুবার্টসন, জবাব দিল সে। আম্মা ডাকে ডল।
খোদা! পুরো এলাকা চষে ফেলেছে পুলিশ, হন্যে হয়ে খুঁজছে একে, আর ও নিজেই এসে হাজির।
কি বলছ, কিছুই তো বুঝতে পারছি না! অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছেন মিস্টার পারকার। কেন খুঁজছ?
খবরের কাগজ পড়ো না নাকি…
না, কদিন ধরে পড়তে পারছি না..জিনার মাকে নিয়েই ব্যস্ত…
এ জন্যেই জানো না। কোটিপতি হুবার্টসনের মেয়ে ও। সাংঘাতিক প্রভাবশালী লোক। গরম করে ফেলেছে সব। ধমক দিয়ে দিয়ে অস্থির করে ফেলেছে আমাদের। মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নোট পাঠিয়েছে, দশ লক্ষ ডলার দিলে ফিরিয়ে দেয়া হবে।…কিশোর, তোমরা একে পেলে কোথায়?