পরিজের প্লেট এনে ঠকাস করে টেবিলে ফেলল মিসেস টোড।
এটা কি রকম হলো? ধমকে উঠলেন আংকেল, আস্তে রাখতে পারো না!
তাঁকে ভয় পায় মহিলা। তাড়াতাড়ি চলে গেল। এরপর অন্যান্য প্লেট এনে যতটা সম্ভব ভদ্রভাবে শব্দ না করে রাখল।
কয়েক মিনিট নীরবে খাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের বিষণ্ণ মুখগুলো দেখে মায়া হলো পারকারের। কণ্ঠস্বর কোমল করে জিজ্ঞেস করলেন, আজ তোমাদের কি কি করার প্ল্যান?
ভাবছি কোথাও পিকনিকে চলে যাব, জবাব দিল জিনা।
যাও না, মন্দ কি। বাড়িটা শান্ত থাকবে।
যাব যে, খাব কি? মিসেস টোড কি স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেবে?
দেবে না কেন, নিশ্চয় দেবে। তাকে রাখাই হয়েছে খাবার তৈরির জন্যে। না দিলে আমার কথা বলবে।
চুপ হয়ে গেল জিনা। মিসেস টোডকে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেয়ার কথা বলার সাহস বা মানসিকতা কোনটাই নেই তার। মহিলার সামনে যেতেই ইচ্ছে করে না তার।
কুত্তাটাকে কিছু কোরো না, তাহলেই আর রাগবে না তোমাদের ওপর, পারকার বললেন।
ডার্টিটাকে যে কেন আনতে গেল…
ডার্টি! ভুরু কোঁচকালেন পারকার, ছেলেটার নাম বুঝি? এটা একটা নাম হলো।
ছেলে নয়, কুত্তাটার নাম। ওরা ডাকে ডারবি। এক্কেবারে নোংরা তো; গোসল করায় না, গায়ের গন্ধে ভূত পালায়, উকুনে ভরা, তাই আমি রেখেছি ডার্টি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন পারকার। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন। মাঝপথেই হাসি থামিয়ে আবার গম্ভীর হয়ে গেলেন। খবরদার, মিসেস টোডের সামনে ডার্টি বলবে না। আর যেন ঝগড়াঝাটি না শুনি। আমি কাজ করতে চললাম।
নিজে বলতে গেল না জিনা, স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেয়ার কথা মাকে দিয়ে বলাল।
মুখ কালো করে মিসেস টোড বলল, আরও তিনজনের খাবার রান্না করার কথা কিন্তু ছিল না আমার।
ছিল না, তো কি হয়েছে, জিনার আম্মা বললেন। এসেছে ওরা, তাড়িয়ে দেব নাকি? তোমাকে যা করতে বলা হয়েছে করো, বেতন দেয়ার সময় বিবেচনা করব আমি। আমার শরীর ঠিক হয়ে গেলে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। ওদের যেন কোন অসুবিধে না হয়।
খাবারের প্যাকেট নিয়ে বেরোল গোয়েন্দারা।
বাগানে টেরির সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছ?
তাতে তোমার কি দরকার! ঝাঁঝাল জবাব দিল জিনা।
আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে, খাতির করতে চাইছে ছেলেটা। চলো না, ওই দ্বীপটায় যাই?
না! চাবুকের মত শপাং করে উঠল জিনার কণ্ঠ। ওটা আমার দ্বীপ তোমার মত ছেলেকে ওখানে নিয়ে যাব ভাবলে কি করে…
কে তোমার দ্বীপ? হি-হি! গুল মারার আর জায়গা পাও না! উনার দ্বীপ, ছাগল পেয়েছে আমাকে।
ছাগল না, বেঙাচি। এই চলো, এটার সঙ্গে কে কথা বলে…
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে গেটের দিকে এগোল জিনা।
পেছনে সুর করে গেয়ে উঠল টেরি, জিনা, ঘিনা… ঘুরে দাঁড়াল মুসা।
খপ করে তার হাত চেপে ধরল জিনা, না না, মুসা, যেয়ো না। কিছু করলেই ভ্যা করে কেঁদে ফেলবে, আর ওর মা এসে হাউকাউ শুরু করবে।
এত্তবড় ছেলে কাঁদে! রবিন অবাক।
এই বেঙাচিটা কাঁদে।
অ্যাই, এভাবে কথা বলবে না… রেগে উঠল ছেলেটা।
তুমিও তাহলে খেপাবে না, মুসা বলল।
কি করবে?
খেপিয়েই দেখো! গেয়ে উঠল টেরি, জিনা, ঘিনা…
তাকে শেষ করারই সুযোগ দিল না মুসা। সুর করে পাল্টা জবাব দিল,
ব্যাঙাচি করে ঘ্যানর-ঘ্যান
চাইরডা পয়সা ভিক্ষা দ্যান!
হেসে ফেলল জিনা।
রবিন আর কিশোরও হাসতে লাগল।
লাল মুখ আরও লাল হয়ে গেল টেরির, চিৎকার করে মাকে ডাকল, মা, দেখো, কেমন করে! জিনার সেই দ্বীপ।
ভুরু নাচাল মুসা, এখন কেমন লাগে? অন্যকে যে খেপাও?
বেশি বেশি করলে তোমাকেও খেপাব।
আমি অত সহজে খেপি না।
এই, চলো চলো, এটার পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই, গেটের দিকে পা বাড়াল কিশোর।
পেছনে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করল টেরি,
মুসা, ঘুসা, রামছাগলের ডিম...
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে গেল মুসা। তবে রে, শয়তান ছেলে…
একটা মুহূর্ত দেরি করল না আর টেরি। লাফিয়ে উঠে. একদৌড়ে একেবারে রান্নাঘরে, মায়ের কাছে। জানালা দিয়ে মুখ বের করে ভেঙচাল।
ঘুসি তুলে শাসাল মুসা, ধরতে পারব তো একবার না একবার, হাড্ডি গুড়ো করে দেব তখন!
আবার মুখ ভেঙুচাল টেরি।
গর্জে উঠল মুসা, কান ছিঁড়ে ফেলব কিন্তু বলে দিলাম!
আহ, কি শুরু করলে! ওর হাত ধরে টান দিল কিশোর, তুমি নাকি সহজে খেপো না?
কিন্তু ওটা একটা শয়তান! বিতিকিচ্ছি জন্তু! ইঁদুর, বিড়াল, বেঙ, ছুঁচো, হনুমান…
.
০২.
কোথায় যাবে ঠিক করলে? বাগান থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল রবিন।
রাগ এখনও পড়েনি মুসার। ফোঁস ফোঁস করছে।
কিশোর প্রস্তাব দিল, চলো, দ্বীপে চলে যাই।
আমার নৌকাটা রঙ করতে দিয়েছি, জিনা বলল। হলো নাকি দেখি। হলে যাওয়া যাবে।
নৌকা মেরামতের কারখানায় এসে দেখা গেল রঙ করা হয়েছে। লাল রঙ। দাঁড়গুলোর রঙও লাল।.
যে লোকটা মেরামত করে তার নাম ডক হুফার। জিনাকে দেখে বলল, ও, জর্জ, এসে গেছ। কেমন লাগছে রঙ?
জিনা যে ছেলে সেজে থাকতে পছন্দ করে, হুফার একথা জানে। জর্জ বলে ডাকলে যে খুশি হয় তা-ও জানে।
খুব সুন্দর হয়েছে, আংকেল, মাথা দুলিয়ে জিনা বলল। নিতে পারব?
মাথা নাড়ল হুফার। রঙ তো শুকায়নি। কাল নাগাদ হয়ে যাবে।
আজ বিকেলেও হবে না?
না। পানিতে নামালেই নষ্ট হবে।