অন্যেরা আগেই বেরিয়ে গেছে। বেরিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল মুসা।
পাল্লার ওপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল টেরি। কিল মেরে মেরে চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগল, দোহাই তোমাদের, আমাকে বের করো! ভুতে খেয়ে ফেলবে আমাকে!
ভূতের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই, তোমাকে খেতে আসে! আর যদি তোমার মত কোন ছ্যাচড়া ভূত চলেই আসে, পচা পচা ছড়া শুনিয়ে দেবে। তোমার ওই জঘন্য ছড়া ভূতেরাও সইতে পারবে না।
গরুগুলো আসবে…
না, আসবে না। মানা করে দেব।
খিদেয় মারা যাব।
দু-একদিন না খেয়ে থাকলে মানুষ মরে না। চলি। যত খুশি চিল্লাও ওখানে বসে।
ফিরে চলল ওরা।
চিৎকার করে কাঁদতে লাগল টেরি।
লজ্জাও নেই! জিনা বলল, ঘেন্না লাগে এসব ছেলেকে দেখলে! এত্তবড় ছেলে, বাচ্চাদের মত কাঁদে, দেখো!
জলদি চলো, এতক্ষণে খিদে টের পাচ্ছে মুসা, আমার পেট জ্বলে গেল, খিদেয়।
আমারও খিদে পেয়েছে, মূসার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল ডল। ঘরটাতে যখন ছিলাম, তখন পায়নি। এখন খেতে ইচ্ছে করছে। তোমরা খুব ভাল, আমাকে বের করে এনেছ।
তোমাকে বের করে বেঙাচিটাকে যে রেখে আসতে পেরেছি, এতে আমরাও খুশি।
যেমন কুকুর তার তেমনি মুগুর, রবিন বলল। পাতালঘরে এসে ছেলেকে দেখলে আক্কেল হবে টোডদের।
যদি আক্কেল থাকে, জিনা বলল।
অনেক গলি-ঘুপচি আর ঘর পেরিয়ে অবশেষে সিঁড়ি বেয়ে আবার ওপরে উঠে এল ওরা।
উজ্জল রোদে বেরিয়ে যেন হা করে আলো-বাতাস গিলতে লাগল উল। ওহ, কি সুন্দর, কি সুন্দর! কোথায় আনা হয়েছে আমাকে?
একটা দ্বীপে, জবাব দিল জিনা, আমাদের দ্বীপ। এই যে ভাঙা দুৰ্গটা, এটাও আমাদের। কাল রাতে একটা নৌকায় করে তোমাকে এখানে আনা হয়েছিল। তোমার চিৎকার শুনতে পেয়েছি আমরা। তাতেই বুঝেছি, তোমাকে জোর করে ধরে আনা হয়েছে।
একের পর এক বিস্ময় অপেক্ষা করছে যেন ডলের জন্যে। ফোকর দিয়ে ঢুকে দড়ি বেয়ে গুহায় নেমে তাজ্জব হয়ে গেল।
কিশোরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল রবিন, সাহস আছে মেয়েটার! দেখলে, কেমন দড়ি বেয়ে নেমে পড়ল। ইকটু বাধাও দিল না। ভয় পেল না!
মুসা বলল, জিনার বোন হলে ভাল মানাত। এক্কেবারে এক চরিত্র মনে হচ্ছে।
জিনা নামটা কানে গেল জিনার। ঘুরে জিজ্ঞেস করল, আমার কথা কি বলছ?
না, কিছু না, তাড়াতাড়ি হাত নাড়ল মুসা, তোমাকে কিছু বলছি না!
.
১৫.
ট্রাংকটার দিকে চোখ পড়ল ডলের। দেখল, পুতুলগুলো পড়ে আছে মাটিতে। চেঁচিয়ে উঠল, আমার পুতুল! কোথায় পেলে তোমরা? ইস, কত কেঁদেছি ওগুলোর জন্যে। ছুটে গিয়ে কুড়িয়ে নিতে নিতে বলল, আমার টিনা, আমার রুবি, আমার শেলিতোমরাও কেঁদেছ, না? …পিটার দুষ্টুটাও আছে দেখি, খেলনা ভালুকটাকে আদর করল সে। এ কি! জেনির পেট কে কাটল! হায় হায়!
কাটা পুতুলটাকে তুলে নিল ডল।
প্রমাদ গুণল কিশোর। এমন জানলে কি আর ফেলে রাখে ওখানে। তাড়াতাড়ি ঢলের পাশে এসে বুঝিয়ে বলল, আমিই কেটেছি। ওকে না কাটলে তোমাকে বের করে আনা যেত না…
কেন, যেত না কেন?
ওকে কেটে সূত্র বের করার চেষ্টা করেছি আমরা।
সূত্র তো বের করে গোয়েন্দারা। মা বলেছে আমাকে।
আমরা গোয়েন্দা।
চোখ বড় বড় হয়ে গেল ডলের। জেনির শোক ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, তোমরা গোয়েন্দা! কি মজা! তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল হলো। ইস্কুলের সবাইকে গিয়ে বলতে পারব। …আমার খিদে পেয়েছে। খাবার দাও।
হাঁপ ছেড়ে বাঁচল কিশোর। দাঁড়াও, এখনই দিচ্ছি।
খাবারের টিন কাটতে বসল রবিন। একটিন স্যামন, দুই টিন পিচ, একটিন দুধ কেটে রেখে, বড় একটা রুটি টেনে নিয়ে স্লাইস করল। মাখন মাখাল। বড় এক জগ কোকা গুলল।
খেতে বসল সবাই। গপ গপ করে গিলতে লাগল ডল। আস্তে আস্তে গালের ফ্যাকাসে ভাব কেটে গিয়ে গোলাপী হয়ে উঠল।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, ডল, এখানে কি করে এলে তুমি, বলতে পারবে?
আমার নার্সের সঙ্গে বাগানে খেলছিলাম আমি। আমার দুধ আনতে ঘরে গেল নার্স। হঠাৎ একটা লোক দেয়াল টপকে ঢুকে, আমার গায়ে একটা কম্বল ফেলে দিল। সেটা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে তুলে নিয়ে চলে গেল। একটু পরে সাগরের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পেলাম। সাগর আমি চিনি। ছুটির দিনে আব্বা সৈকতে নিয়ে যায় আমাকে। আমার গা থেকে কম্বল সরিয়ে ফেলল লোকটা। তারপর একটা বোটে তুলল। একটা ঘরে বন্ধ করে রাখল দুদিন। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। কত কাঁদলাম, কেউ শুনল না।
লোকটাকে তুমি চেনো?
না। আগে কখনও দেখিনি। এখানে আনার পর মহিলাটাকে চিনলাম। আমাদের বাড়িতে রান্না করত। মিসেস টোড। খুব খারাপ। আমার কোন কথাই শুনল না। আমাকে বের করে বাড়িতে নিয়ে যেতে বললাম। ধমক মারল। মারবে বলেও ভয় দেখাল।
হুঁ, তাহলে এই ব্যাপার! আসল কিডন্যাপার তাহলে অন্য লোক, যার একটা বোট আছে। তোমাকে কিডন্যাপ করতে তাকে সাহায্য করেছে টোডেরা। তোমাকে ওদের কাছে তুলে দিয়েছে লোকটা, এখানে এনে লুকিয়ে রাখার জন্যে।
তারমানে, রবিন বলল, সেদিন যে দ্বীপে ধোঁয়া উঠতে দেখেছিলাম, ওই লোকই নেমেছিল এখানে। জায়গাটা দেখেছে। এখানে ডলকে লুকিয়ে রাখা যাবে কিনা বুঝতে চেয়েছে। শলা-পরামর্শ করেছে টোডের সঙ্গে।
ধরতে পারলে ওকে আমি দ্বীপে নামা বার করব! দাঁতে দাঁত চেপে বলল জিনা।
নাস্তা শেষ হলো।
কিশোর বলল, ডলকে থানায় নিয়ে যেতে হবে। পত্রিকাগুলো নিশ্চয় ওকে নিয়ে খবর ছেপে গরম করে ফেলেছে। পুলিশ দেখলেই চিনতে পারবে।