কেন, এত কিসের ভয়? তার মুখের সামনে হাত নেড়ে বলল মুসা, গরুর? কিন্তু গরু তো বেঙাচি খায় না।
উদ্বিগ্ন হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে টেরি, আমার বাবা-মা কোথায়?
আছে, আছে, ভয় নেই। বাজারে গেছে তোমার জন্যে দুধের বোতল আনতে। চলে আসবে।
হেসে উঠল অন্য তিনজন। টেরির চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এমন বিপদে আর পড়েনি।
গর্তের মুখের ঢাকনাটা চাপা দিয়ে গেছে টোডেরা। তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে বড় বড় পাথর।
তোমার বাবা-মা কত্তবড় শয়তান, দেখো, জিনা বলল। ছোট্ট একটা মেয়েকে অন্ধকার ঘরে তো রেখেই গেছে, তার ওপর গর্তের মুখও বন্ধ করে গেছে, যাতে কোনমতেই বেরোতে না পারে। তোমার বিপদের জন্যেও ওরাই দায়ী, আর কাউকে দোষ দিতে পারবে না।
এটাকে দিয়েই পাথরগুলো সরানো যাক, টেরিকে দেখিয়ে প্রস্তাব দিল। মুসা। বাবা-মায়ের কাজ ছেলেরাই তো করে দেয়…
মাথা নাড়ল কিশোর, ও করে দেবে, আর লোক পেলে না। ও তো জানে খালি খাওয়া আর শয়তানি, অকাজের ধাড়ি। সময় নেই, এসো, হাত লাগাও সবাই।
পাথর সরানোর কাজে সাহায্য করতে টেরিকেও বাধ্য করল রাফি।
সিঁড়িতে পা রাখতে যাবে কিশোর, এই সময় একটা ঝোপের দিকে হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠল টেরি, ওই যে, ডারবি!
রাফির ভয়ে গিয়ে ওখানে ঢুকেছে নোংরা কুকুরটা। টেরিকে দেখে বেরিয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। একবার মুখ বের করছে, আবার ঢুকে পড়ছে।
যেমন মনিব, তার তেমন কুকুর, হুহ! তীব্র ঘৃণা জিনার কণ্ঠে।. এই রাফি, ছেড়ে দে। ওটাকে কামড়ে মজা পাবি না। নিজের শরীরই দুর্গন্ধ করবি।
কিন্তু রাফি জানে, জিনা ভুল বলেছে, কামড়ে খুব মজা পাবে সে। বাধা দেয়ার কেউ নেই এখন, সহজেই কেটে নিতে পারে কুকুরটার একটা কান। মাঝে মাঝে জিনার এসব নির্দেশের কারণ বুঝতে পারে না সে। শত্রু কুকুরকে কামড়াতে মানা করে, খরগোশ তাড়া করতে দেয় নাঃ..এসব সময় মনে হয়, তার কুকুর-জন্মই বৃথা। মুখটাকে করুণ করে ফেলল সে।
কিন্তু তার অভিমান দেখার সময় নেই এখন জিনার। তাড়াহুড়ো করে অন্যদের সঙ্গে পাতালঘরে নেমে যেতে লাগল। দেয়ালে যে চকের চিহ্ন দিয়ে . রেখেছে কিশোর, তা দেখে সহজেই এগোতে পারছে ওরা।
যে ঘরে রাত কাটায় টোডরা সেটার সামনে এসে দাঁড়াল দলটা। দরজা লাগানো। বাইরে থেকে খিল তুলে দেয়া। ভেতরে কোন শব্দ নেই। দরজার গায়ে নখের আঁচড় দিতে দিতে মৃদু গোঁ গোঁ করতে লাগল রাফি। বুঝে গেছে, ভেতরে মানুষ আছে।
চিৎকার করে কিশোর বলল, কেউ আছ ভেতরে? আমরা তোমাকে বের করে নিয়ে যেতে এসেছি।
খসখস শব্দ হলো। উঠে দাঁড়াল যেন কেউ। দৌড়ে এল দরজার দিকে। জবার দিল একটা ছোট্ট কণ্ঠ, কে তোমরা! আমাকে বের করে নিয়ে যাও! আমার খুব ভয় লাগছে!
কথা শেষ হওয়ার আগেই খিল খুলতে শুরু করেছে কিশোর। ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল পাল্লা। ভেতরে একটা হ্যারিকেন জ্বলছে। সেই আলোয় দাঁড়িয়ে। থাকতে দেখল ছোট্ট মেয়েটাকে। কাগজের মত সাদা হয়ে গেছে মুখ। বড় বড় বাদামী চোখে আতঙ্ক। কাঁদছিল, গালে পানির দাগ, তাতে ময়লা লেগে কালচে হয়ে আছে।
সোজা গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল মু। হেসে বলল, আর ভয় নেই, আমরা এসে গেছি। কেউ আর কিছু করতে পারবে না তোমার।
আমি মার কাছে যার! ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটা। আমাকে এখানে। রেখেছে কেন? এখানে আমার ভাল লাগে না!
তা তো লাগবেই না। এমন জায়গায় কি কারও ভাল লাগে? কোমল গলায় বলল কিশোর। তোমার মার কাছেই নিয়ে যাব আমরা। আগে চলো আমাদের গুহায়। নাস্তা খাবে। তারপর নৌকায় করে চলে যাব আমরা।
তোমাদের সঙ্গে যাব আমি, চোখ ডলতে ডলতে বলল মেয়েটা। তোমরা খুব ভাল। তোমাদেরকে আমার ভাল লাগছে। অন্য মানুষগুলোর মত খারাপ না তোমরা। ওদেরকে আমার ভাল লাগে না।
ওদেরকে কারোরই ভাল লাগে না, রবিন বলল।
রাফির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল জিনা, দেখো, ও হলো রাফি, আমাদের কুকুর। ও তোমার বন্ধু হতে চায়।
শরীর মুচড়ে মুসার কোল থেকে নেমে গেল মেয়েটা। রাফির গলা জড়িয়ে ধরে বলল, খুব ভাল কুকুর, লক্ষ্মী কুকুর ও। কুকুর আমার খুব ভাল লাগে। আমারও আছে একটা।
গাল চেটে মেয়েটার মুখের পানি মুছিয়ে দিল রাফি।
তোমার নাম কি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
ডরোথি হুবার্টসন। মা ডাকে, ডল।
ডলই তুমি, এক্কেবারে পুতুল। আদর করে ওর গাল টিপে দিল জিনা।
তুমিও খুব ভাল ছেলে।
হাসল জিনা। আমি ছেলে নই, মেয়ে, তোমার মতই।
তাহলে ওরকম ছেলেদের মত কাপড় পরে আছ কেন?
পরে থাকতে আমার ভাল লাগে।
দাঁড়াও, আমিও পরব ওরকম। বাড়ি গিয়ে মাকে বলব এই কাপড় দিতে। তোমরা কে?
এক এক করে নিজেদের পরিচয় দিল গোয়েন্দারা।
ও কে? টেরিকে দেখাল ডল।
ও? বেঙাচি, মুসা বলল। ও আমাদের কেউ নয়। ওর বাবা-মাই তোমাকে এনে আটকে রেখেছে এখানে। তোমার জায়গায় এখন ওকে রেখে যাব আমরা। ওর বাবা-মার জন্যে একটা সারপ্রাইজ।
পাতালঘরে একা থাকার কথা শুনেই চেঁচিয়ে গলা ফাটাতে শুরু করল টেরি। সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু মুসার সঙ্গে কি আর পারে। একটানে তাকে ঘরের মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
তোমাদের মত শয়তানদের এই শাস্তিও খুব কম হয়ে গেল। তবু যা হোক, তোমার বাবা-মার ছোট্ট একটা শিক্ষা অন্তত হবে। অন্যের বাচ্চাকে ধরে এনে আটকে রাখলে তাদের কেমন লাগে, বুঝতে পারবে। থাকো এখানে। একা থাকতে ডলের কেমন লেগেছিল, বুঝিয়ে বোলো বাবা-মাকে। চলি। গুডবাই।