তা তো আছেই, ওই গরুগুলো
চুপ, গাধা কোথাকার!
নিচ থেকে ডারবির করুণ চিৎকার শোনা গেল।
মিসেস টোড বলল, বেচারা! ওপরে আসতেও ভয় পাচ্ছে। এই ডারবি, ডারবি, আয়, আয়। কেউ কিচ্ছু করবে না।
কিন্তু মিসেস টোডের কথায় ভরসা করতে পারল না কুকুরটা। এল না ওপরে।
যাই, নিয়ে আসিগে। খাবারও আনতে হবে। এখানে বসেই খাব, নিচে নেমে গেল মিসেস টোড। একটু পর গর্তের মুখ দিয়ে প্রায় ছিটকে বেরোল সে। উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল, এই শোনো, কিছুই নেই কিছু না..সব নিয়ে গেছে
বললাম না, গরুগুলোর কাজ! টেরি বলল, তোমরা তো বিশ্বাস করতে চাও না…
তার কথায় কান দিল না তার বাবা। নেমে গেল গর্তের ভেতর। পেছনে গেল অন্য দুজন।
মুসার গায়ে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরেই উঠে দৌড় দিল কিশোর।
চত্বরে ফেলে রাখা ট্রাংকটা বয়ে নিয়ে এল দু-জনে। গুহায় এনে রাখল। এরপর কি ঘটে দেখার জন্যে আবার বাইরে বেরিয়ে এল কিশোর।
গর্ত থেকে বেরিয়ে এল টোড। ট্রাংকটা যেখানে ছিল সেদিকে চোখ পড়তেই হাঁ হয়ে গেল। চিৎকার করে বলল, ডোরিয়া, দেখে যাও, ট্রাংকটাও নেই!
দেখে মিসেস টোডও হাঁ। টেরির ভঙ্গি দেখে তো মনে হলো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।
তার মা বলল, দ্বীপে যে, মানুষ আছে, আর কোন সন্দেহ নেই। ভূতেরা দিনের বেলা বেরোয় না। জন, তোমার পিস্তলটা আছে?
আছে, পকেটে চাপড় দিল টোড।
এসো, পুরো দ্বীপ খুঁজে দেখব আজ। বের করেই ছাড়ব।
তাড়াতাড়ি গুহায় ঢুকে বন্ধুদের খবরটা জানাল কিশোর। গুহার মধ্যে চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আপাতত আর কিছু করার নেই। রাফিকে চুপ থাকতে বলল জিনা।
খুঁজতে খুঁজতে গুহার ওপরে চলে এল টোডেরা।
টেরির গলা শোনা গেল, বাপরে বাপ, কি কাঁটার কাঁটা!
টোড বলল, ডোরিয়া, দেখো, এই ঝোপটায় কেউ বসেছিল! ঘাস দুমড়ে গেছে, দেখেছ? ডালও ভেঙেছে।
তাহলে সেই কেউটা এখন কোথায়?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না!
আস্তে আস্তে সরে গেল দুই টোডের কণ্ঠ।
যাক, এবারেও দেখতে পায়নি ফোকরটা। সবে শরীর ঢিল করে বসেছে গোয়েন্দারা, এই সময় ঘটল ঘটনাটা। ওপর থেকে ধুড়ুম করে এসে মেঝেতে পড়ল টেরি। ঝোপে ঢুকে খুঁজতে খুঁজতে ফোকরে পা দিয়ে ফেলেছিল সে। আর ঠেকাতে পারেনি। ঢালু সুড়ঙ্গ দিয়ে পড়েছে এসে গুহার ভেতরে। নরম বালিতে পড়েছে বলে রাফির মতই সে-ও ব্যথা পায়নি। তবে অবাক হয়েছে খুব।
বিমূঢ় অবস্থাটা কাটতে সময় লাগল তার। কিশোরদের এখানে দেখতে পাবে কল্পনাই করতে পারেনি। চিৎকার করে মাকে ডাকার জন্যে মুখ খুলতেই মুসার থাবা এসে পড়ল তার মুখে। চেপে ধরল। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, টু শব্দ করলেই রাফিকে ছেড়ে দেব। তোমাকে খাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে আছে ও।
কথাটা বিশ্বাস করল টেরি। চিৎকার করল না। ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে রাফির দিকে।
টেরির মুখ থেকে হাত সরিয়ে আনল মুসা।
সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল টেরি। মিন মিন করে জিজ্ঞেস করল, এখানে কি করছ তোমরা?
তোমার মুণ্ডু কাটতে এসেছি! ধমকে উঠল জিনা। এটা আমাদের দ্বীপ, ইচ্ছে হলেই আসব, কিন্তু তোমরা এসেছ কোন সাহসে? কাকে বলে এসেছ?
তার সঙ্গে সুর মিলিয়েই কড়া গলায় ধমক দিল রাফিও, খউ, অর্থাৎ, জবাব দাও!
এই, তুই থাম! বেঙগুলো শুনে ফেলবে!
ভয়ে কেঁচো হয়ে গেছে টেরি।
দ্বীপে এসেছ কেন তোমরা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
তা তো জানি না, ভোঁতা গলায় জবাব দিল টেরি। বাবা আসতে বলল, এলাম।
দেখো, মিথ্যে বলে পার পাবে না। স্মাগলিঙের সঙ্গে জড়িত না তোমার বাবা?
বিস্ময় ফুটল টেরির চোখে। স্মাগলিঙ!
হ্যাঁ, স্মাগলিঙ। চোরাচালান।
কি বলছ, কিছুই বুঝতে পারছি না। দেখো, আমাকে ছেড়ে দাও…
এহ, মামার বাড়ির আবদার! মুখ ভেঙচে বলল মুসা, ছেড়ে দাও! দিই, তারপর গিয়ে বলো বাপ-মাকে, পিস্তল নিয়ে তেড়ে আসুক…ওসব ঘ্যানর ঘ্যানর করে লাভ নেই, বেঙাচি, ছাড়া তোমাকে হবে না। এসেই যখন পড়েছ, এখানেই থাকতে হবে।
আমার বাবা আমাকে খুঁজে বের করবেই…
যেন তার কথায় সাড়া দিয়েই ডেকে উঠল টোড, টেরি, টেরি, কোথায় গেলি? এই টেরি!
জবাব দিতে যাচ্ছিল, রাফির ওপর চোখ পড়ে গেল টেরির। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে কুকুরটা। হাঁ করা মুখটা হাঁ-ই থেকে গেল তার, শব্দ আর বেরোল না। ঢোক গিলল সে।
খানিকক্ষণ ডাকাডাকি করে সেখান থেকে সরে গেল টোড।
অনেকক্ষণ পরও যখন আর কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া গেল না, কিশোর। বলল, ট্রাংকে কি আছে এবার দেখতে হয়।
রবিন বলল, তালা কি করবে?
একটা পাথর তুলে নিল মুসা, এই তালা কিছু না।
কয়েক বাড়িতেই তালা দুটো ভেঙে ফেলল সে।
ডালা তুলল।
ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে হুড়াহুড়ি করে এগিয়ে এল সবাই, টেরি বাদে। এসবে তার কোন আগ্রহ নেই। মুখটাকে করুণ করে রেখেছে সে। মনে হচ্ছে, ধমক দিলেই ভ্যা করে কেঁদে ফেলবে এখন।
ট্রাংকের একেবারে ওপরে রয়েছে একটা ছোটদের কম্বল, এমব্রয়ডারি করে তাতে সাদা খরগোশ আঁকা। টেনে বের করল ওটা কিশোর, নিচে কি আছে দেখার জন্যে। দেখে অবাক হয়ে গেল। এক এক করে জিনিসগুলো বের করে রাখল বালিতে।
দুটো নীল রঙের জার্সি, দুটো নীল স্কার্ট, একটা গরম কোট, এবং আরও কিছু জামা-কাপড়। কাপড়ের নিচে রয়েছে চারটে পুতুল আর একটা খেলনা– ভালুক।
এগুলোর মধ্যে করেই হেরোইন পাচার করে, মুসা বলল। দেখো কেটে, কাটলেই পেয়ে যাবে।