হাত থেকে গদিগুলো ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল টেরি। ভয় পেয়েছে।
আরেকটা ঢেলা নিয়ে আবার ছুঁড়ে মারল রবিন। নিশানা ঠিক হলো, পড়ল ডারবির ওপর। ঘেউক করে উঠে একলাফে গিয়ে সিঁড়ির গর্তে ঝাঁপ দিল কুকুরটা।
আবার আকাশের দিকে তাকাল টেরি। তারপর চারপাশে তাকাতে লাগল। ঢিল কোনখান থেকে আসছে বুঝতে পারছে না।
মুচকি হাসল মুসা। বুদ্ধিটা ভালই করেছে রবিন। টেরি ওদের দিকে পেছন করতেই অনেক বড় একটা ঢেলা তুলে ছুঁড়ে মারল সে। টেরির পায়ের কাছে পড়ে ভাঙল ঢেলাটা।
অবাক হয়ে নিচের দিকে তাকাল টেরি। তাকে কিছু বোঝার সামান্যতম সময় না দিয়ে ঢিল ছুঁড়ল রবিন।
কাঁধে পড়ল টেরির। মা-গো! করে চেঁচিয়ে লাফ দিয়ে সরে গেল সে।
চিৎকার করে গরুর ডাক ডেকে উঠল মুসা।
আর সহ্য করতে পারল না টেরি। দুই হাত তুলে চিৎকার করতে করতে গিয়ে তার কুকুরটার মতই লাফ দিয়ে পড়ল সিঁড়িতে।
শেষ চিলটা ছুঁড়ল মুসা। নিখুঁত নিশানা। সিঁড়ির গর্তে গিয়ে পড়ল ওটা। ভেতর থেকে আর্তচিৎকার শোনা গেল। নিশ্চয় মাথায় পড়েছে টেরির।
জলদি! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল রবিন, এটাই সুযোগ!
একদৌড়ে দু-জনে গিয়ে চত্বর থেকে গদিগুলো কুড়িয়ে নিয়ে ছুটে চলে এল ঝোপের কাছে।
ভেতরে কি আছে দেখে আসতে পারি, রবিন বলল। তুমি এক কাজ করো। সিঁড়ির মুখের কাছে গিয়ে বসে থাকো। টেরির মাথা দেখলেই গরু হয়ে যাবে। ব্যস, আর কিছু করা লাগবে না। মাটি ফেড়ে ভেতরে ঢুকে যেতে চাইবে ও। আমি গিয়ে কুয়ার ভেতর দিয়ে পাতালঘরে নামব। দেখে আসি, কি কি জিনিস চুরি করেছে ধাড়ি বেঙগুলো।
আঙটা ধরে নামতে মোটেও অসুবিধে হলো রবিনের। এই কাজ আগেও একাধিকবার করেছে সে। দুর্গের নিচে নামা লাগতে পারে, এ জন্যে তৈরিই হয়ে এসেছে ওরা। কোমর থেকে টর্চ খুলে জ্বালল। রাতে যে ঘর থেকে ভয় দেখিয়েছে টোডদের, তার পাশের ঘরটায় এসে ঢুকল।
জিনিসপত্র কম আনেনি টোডেরা, তিনজনের সাধ্যে যা কুলিয়েছে, এনেছে। কম্বল, তৈজসপত্র, খাবার তো আছেই, হাতে করে আনা যায় দামী এরকম যা যা পেয়েছে নিয়ে এসেছে। বেশ কিছুদিন থাকার ইচ্ছে এখানে ওদের।
কুয়া থেকে উঠে এসে দেখল রবিন, সিঁড়ির মুখের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে মুসা। তাকে নিয়ে সরে চলে এল ঝোপের কাছে। জানাল, কি দেখে এসেছে।
ফিসফাস করে কথা বলছে ওরা, এই সময় সেখানে এসে হাজির হলো কিশোর। বলল, পাথরের আড়ালে নৌকা লুকিয়ে রাখে টোড। বের করে নিয়ে ভাঙা জাহাজটায় গেছে, বোধহয় ট্রাংকটা আনতে। তীরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে মিসেস টোড।
মুসা আর রবিনও জানাল, ওরা কি কি করেছে।
শুনে হাসল কিশোর। তাহলে এটাই সুযোগ।
কিসের? ভুরু কোঁচকাল রবিন।
জিনিসগুলো নিয়ে আসার। মুখ বাঁকাল কিশোর, আস্ত চোর! কেন যে এগুলোকে জায়গা দিয়েছিলেন কেরিআন্টি দাঁড়াও, সব নিয়ে আসব। একটা জিনিসও রেখে আসব না।
মুসাকে আবার সিঁড়ির মুখে পাহারায় রেখে নিচে নেমে গেল কিশোর আর রবিন। টেরি আর তার ভীতু কুকুরটার ছায়াও চোখে পড়ল না। নিশ্চয় সিঁড়ির নিচে কোথাও লুকিয়ে বসে আছে।
ব্যাগে ভরে জিনিসগুলো এনেছে টোডেরা। সেই সব ব্যাগে ভরেই আবার দড়িতে বেধে কুয়া দিয়ে বের করে আনল গোয়েন্দারা। একটা জিনিসও রাখল না।
দুই টোড এখনও ফেরেনি। এখানে আর থাকার প্রয়োজন মনে করল না তিন গোয়েন্দা। জিনিসগুলো সব বয়ে নিয়ে এল ফোকরের কাছে। দড়িতে বেধে গুহায় নামাল।
সর্বনাশ করে দিয়েছিল শয়তানগুলো! ফুসতে লাগল জিনা। তবে তার রাগ বেশিক্ষণ থাকল না। টেরিকে কি ভাবে ভয় দেখিয়েছে রবিন ও মুসা, শুনে হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল।
কিশোর বলল, ট্রাংকটাও রাখতে দেব না ওদেরকে। মুসা, চলো, দেখি। এনে থাকলে ওটাও কেড়ে আনব।
ফোকর দিয়ে আবার বেরোল দু-জনে দেখে, ট্রাংকটা দূর্গের দিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুই টোড! চত্বরের কাছে গিয়ে ওটা নামিয়ে রেখে এদিক ওদিক তাকাল মিসেল, টেরি গেল কোথায়?…টেরি। টেরি!
মায়ের ডাক শুনে গর্ত থেকে বেরিয়ে এল টেরি।
তোকে না বললাম এখানে থাকতে? নিচে কি করছিস?
এখানে থেকে মরব নাকি!
মরব নাকি মানে?
আবার সেই ভূতুড়ে গরু এসে হাজির! ডাকাডাকি করল, আমাদের ঢিল মারল… ভয়ানক জানোয়ার! ওরা কি ওপরে থাকতে দেয়?
ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে টোড, যেন বোঝার চেষ্টা। করছে পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি। গরু তোকে ঢিল ছুড়ল?
ছুঁড়লই তো, মিথ্যে বলছি নাকি? ডারবিকে জিজ্ঞেস করে দেখো। কি আর বলব তোমাকে, বাবা, একটা-দুটো না, হাজারে হাজারে গরু! একেক শিঙ কি! আট-দশ হাত করে লম্বা। দেখো না, ভয়ে ডারবিটা আর বেরোচ্ছেই না।
ভীতুর ডিমটাকে তো খামোকা খাওয়াস
এই, ডারবিকে কিছু বলবে না বলে দিলাম! রেগে উঠল মিসেস টোড। ওর কি দোষ? গরুর সঙ্গে কুকুর কখনও পারে নাকি?
না পারলে ওটাকে রাখার কি দরকার? ছেলের দিকে তাকাল আবার টোড, গদিগুলো কোথায়? নিচে রেখে এসেছিস?
রাখলাম আর কখন। সবে এনেছি, গর্তে নামব, এই সময় গরুগুলো এসে হাজির।
কোথায় ফেলেছিস? আশপাশে তাকাল টোড।
এখানেই তো ছিল। ওরাই হয়তো নিয়ে গেছে!
গরুতে ঢিল ছোঁড়ে, গদি ছিনিয়ে নিয়ে যায়, একথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না, টোডও করল না। কেউ আছে এই দ্বীপে, আমি এখনও বলছি। সে-ই এই কাণ্ড করছে।