শুধু ডাকাডাকি করেই থামল না কিশোর, এমন করে লাথি মারতে লাগল, মনে হচ্ছে সাংঘাতিক, রেগে গিয়ে মেঝেতে পা ঠুকছে সাংঘাতিক জানোয়ারটা।
ঘরের দরজার কাছে সরে এল মিসেস টোড। ভয়ে ভয়ে বলল, হেই হেই, যাহ, যাহ্!
ফিক করে হেসে ফেলল রবিন। কিন্তু তার হাসিটা শুনতে পেল না মিসেস টোড, কিশোরের চিৎকারে। নাকি স্বরে চেঁচিয়ে টেনে টেনে বলল গোয়েন্দাপ্রধান, সাঁব-ধাঁন! তারপর আবার গাধার ডাক, মেঝেতে পা ঠোকাঠুকি।
লাফ দিয়ে গিয়ে ঘরের ভেতরে পড়ল মিসেস টোড। দড়াম করে লাগিয়ে দিল ভারি কাঠের দরজাটা। কাঁপা গলায় বলল, রোজ রাতেই যদি এই কাণ্ড চলে, এখানে থাকা যাবে না!
দাঁতাল শুয়োর রেগে গেলে যেমন করে তেমনি ভাবে ঘোৎ-ঘোৎ করে উঠল মুসা।
হা-হা করে হেসে ফেলল রবিন। ভীষণ প্রতিধ্বনি উঠল।
কিশোরও হাসছে। বলল, আর পারি না! চলো এখান থেকে! বেরোও!
বিকৃত হয়ে প্রতিধ্বনিত হলো তার কথা ও পারি না! পারি না। পারি না!…খান থেকে! খান থেকে! খান থেকে!…বেরোও! বেরোও! বেরোও।
সিঁড়ির ওপরে উঠেও তাদের হাসি থামল না।
সব শুনে জিনাও হেসে গড়িয়ে পড়ল।
গুহায় ফিরে চলল, ওরা। কিন্তু হাসি আর থামতে চায় না। কিছুই না বুঝে ঘউ ঘউ করল কয়েকবার রাফি।
আস্তে আস্তে কমে এল হাসি।
কিশোর বলল, ওরা যে আমাদের খুঁজতে আসেনি, তাতে আর কোন সন্দেহ নেই। স্মাগলারদের সঙ্গে জড়িত। এ কাজে সুবিধে হবে বলেই হয়তো মিসেস টোড চাকরি নিয়েছিল জিনাদের বাড়িতে।
এবার তো তাহলে বাড়ি ফেরা যায়, রবিন বলল।
চোরগুলোকে হাতেনাতে না ধরেই?
কথা বলতে বলতে পাহাড়ের চূড়ায় চলে এল ওরা। ফোকর দিয়ে গুহায়। নামবে। টর্চ জ্বালতে যাবে কিশোর, এই সময় তার হাত খামচে ধরল মুসা। ফিসফিস করে বলল, ওই দেখো!
সাগরের মাঝে একটা আলো, জ্বলছে নিভছে।
কিশোরের মনে হলো, কোন বোট কিংবা জাহাজ থেকে টর্চের সাহায্যে সঙ্কেত দেয়া হচ্ছে। আবার বোধহয় পুরানো জাহাজের লকারে চোরাই মাল রেখে যাওয়া হয়েছে। সঙ্কেত দিচ্ছে টোডকে সে কথা জানানোর জন্যে।
অনেকক্ষণ ধরে চলল এই সঙ্কেত দেয়া।
এতক্ষণ কেন? রবিনের প্রশ্ন।
হয়তো এপাশ থেকে জবাব আশা করছে। না পেয়ে সঙ্কেত দিয়েই চলেছে।
আবার হাসতে শুরু করল মুসা, তাহলে জবাবের আশা আজ ওদের ছাড়তে হবে। মেরে ফেললেও জনাব বেঙ আজ আর গর্ত থেকে বেরোবে না।
একসময় থেমে গেল আলোর সঙ্কেত। আর জ্বলল না।
গুহায় ঢুকল গোয়েন্দারা।
কোন রকম অঘটন ঘটল না আর। নিরাপদে কাটিয়ে দিল রাতটা।
.
১২.
পরদিন সকালে নাস্তা খেতে বসেও প্রথমেই টোডদের কথা উঠল।
রেগে উঠল জিনা, বুড়িটা নাম্বার ওয়ান চোর! আমাদের ঘরের জিনিসপত্র সব ডাকাতি করে নিয়ে এসেছে, দেখোগে!
তা তো কিছু এনেছেই, জকুটি করল কিশোর। আন্টি এসে তাঁর ঘরের এ হাল দেখলে খুব কষ্ট পাবেন।
ভালমত একটা শিক্ষা দিয়ে দেয়া দরকার, গজগজ করতে লাগল মুসা।
হ্যাঁ, একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল রবিন।
নৌকায় করে এনেছে, সেটা তো বোঝাই গেছে, বলল কিশোর। মালগুলো কোথায় রেখেছে দেখা দরকার। নিশ্চয় পাতালঘরে।
চলো, দেখে আসি।
ওরা যদি থাকে? মুনার প্রশ্ন।
আছে তো জানা কথাই, রবিন বলল। নজর রাখব। তারপর যেই দেখব সরেছে, অমনি নেমে যাব পাতালে।
বুদ্ধিটা মন্দ না, কিশোর বলল। চলো।
রাফিকে কি করব? জিজ্ঞেস করল জিনা।
এখানেই রেখে যেতে হবে। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে সব ভজঘট করে দিতে পারে।
একা থাকবে? কেঁদেই মরে যাবে ও। এক কাজ করো, তোমরা যাও। আমি বরং ওর সঙ্গে থেকে যাই, আসলে গুহার মধ্যেও রাফিকে একা রেখে যেতে ভয় পাচ্ছে জিনা। যদি কোন কারণে ডাকতে শুরু করে কুকুরটা? আর তার ডাক শুনে এসে হাজির হয় টোড?
থাকবে? ঠিক আছে, থাকো।
দড়ি বেয়ে ফোকরের কাছে উঠে এল তিন গোয়েন্দা। বড় একট ঝোপে ঢুকে চোখ রাখল দুর্গের ওপর।
উফ, কি কাঁটার কাঁটারে বাবা! কনুই ডলতে ডলতে গুঙিয়ে উঠল মুসা, সব ছিলে ফেলেছে!
চুপ! সাবধান করল রবিন, বেঙের গোষ্ঠী বেরোচ্ছে।
একে একে বেরিয়ে এল তিন টোড। পাতালঘরে অমাবস্যার অন্ধকার। সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় বেরিয়ে খুশি হয়েছে, ভাবভঙ্গিতেই বোঝা যায়।
এদিক এদিক তাকাতে লাগল ওরা। ডারবি রয়েছে মিসেস টোডের পা ঘেষে। পায়ের ফাঁকে ঢোকানো লেজ।
গরু-ছাগল খুজছে! হেসে ফেলল মুসা।
চুপ। আস্তে! সাবধান করল তাকে কিশোর, শুনে ফেলবে!
দু-তিন মিনিট কথা বলল মিসেস আর মিস্টার টোড, তারপর এগিয়ে গেল দুর্গের কিনারের দিকে, যেখান থেকে ভাঙা জাহাজটা দেখা যায়। টেরি গেল দেয়াল ধসে পড়া একটা ঘরের দিকে। ছাতও বেশির ভাগই নেই ওটার।
আমি টোডদের পিছে যাচ্ছি, কিশোর বলল। টেরি কি করে দেখো তোমরা।
ঝোপের আড়ালে আড়ালে এগিয়ে গেল সে।
মুসা আর রবিনও ঝাৈপ থেকে বেরিয়ে নিঃশব্দে চলে এল, দুর্গের কাছাকাছি, টেরি দেখে ফেলার আগেই চট করে বসে পড়ল আরেকটা ঝোপের আড়ালে।
খোলা চত্বরে ছোটাছুটি করছে ডারবি। শিস দিতে দিতে ভাঙা ঘরটা থেকে বেরিয়ে এল টেরি। দু-হাতে বুকের সঙ্গে জাপটে ধরে রেখেছে কয়েকটা গদি।
জিনাদের জিনিস! দাঁতে দাঁত চেপে বলল মুসা,সবচেয়ে ভালগুলো নিয়ে এসেছে!
দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা, বলে একটা মাটির ঢেলা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারল রবিন। টেরি এবং ডারবির মাঝখানে পড়ে ভাঙল ওটা।