চূড়ার কাছে গর্তটর্তও থাকতে পারে, মিসেস টোড বলল। হয়তো তাতে লুকিয়েছে। এসো না, দেখি।
নিথর হয়ে বসে রইল গোয়েন্দারা। রাফির কলার চেপে ধরে রাখল জিনা। ঝোপঝাড়ের ডালপাতা সরানোর শব্দ কানে আসছে। সেই সঙ্গে কাঁটার আঁচড় খেয়ে উহ-আহ। ফোকরের মুখের কাছ থেকে দূরে রইল ওরা। বলা যায় না, যে কোন মুহূর্তে না জেনে গর্তে পা দিয়ে বসতে পারে কোন টোড, গুহায় এসে পড়তে পারে।
কিন্তু কাঁটার জন্যেই বোধহয়, গর্তটার বেশি কাছে এল না ওরা। ফলে দেখতেও পেল না।
মিসেস টোডের কথা শোনা গেল, টেরি, সত্যি ওই কুত্তাটাকেই দেখেছিস তো? তোর তো আবার কথার কোন ঠিকঠিকানা নেই।
খোদার কসম, মা, ওটার মতই লাগল!
হুঁ! বাড়ি থেকে পালিয়ে এখানেই এসে লুকিয়েছে হয়তো বিচ্ছুগুলো। আমাদের বুঝিয়েছে, ট্রেনে করে চলে গেছে। এখানে এসে থাকলে আমাদের কাজ সব গড়বড় করে দেবে। নৌকা ছাড়া তো আসতে পারবে না, সেটা কোথায় আছে বের করা দরকার।
অত অস্থির হওয়ার কিছু নেই, টোড বলল। এসে থাকলে খুঁজে পাবই। এত ছোট দ্বীপে লুকানোর জায়গা কম। বিশেষ করে নৌকাটা পেয়েই যাব।
এখন খুঁজতে অসুবিধে কি?
অসুবিধে নেই। টেরি, তুই ওদিক দিয়ে ঘুরে যা। ডোরিয়া, তুমি দুর্গের দিকে যাও। আমি এদিকটায় খুঁজছি।
গুহার মধ্যে গা ঘেষাঘেঁষি করে বসে রইল ছেলেমেয়েরা, যেন এভাবে থাকলেই আর খুঁজে পাবে না ওদেরকে। আল্লাহ আল্লাহ করছে, যাতে নৌকাটা চোখে পড়ে না যায়।
তিন গোয়েন্দা, জিনা, রাফি; এদের কারও সামনেই পড়তে চায় না। টেরি। ভয়ে ভয়ে এগোল। চলে এল ছোট্ট সৈকতে। বালিতে নৌকার দাগ দেখতে পেল বটে, কিন্তু চিনতে পারল না। জোয়ারের সময় পানি এসে অনেকখানিই মুছে দিয়ে গেছে দাগ। পানি ঢুকে থাকা ছোট গুহাটার দিকে তাকাল ভয়ে ভয়ে। একবার এগোয় একবার পিছোয়, এরকম করতে করতে শেষমেষ এসে উঁকি দিল ভেতরে। অন্ধকার। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তার। ভেতরে ঢোকার আর সাহস করতে পারল না। ভাবল, কাজ কি বাবা ঢুকে! কোন জলদানব লুকিয়ে আছে এখানে কে জানে! ফিরে এল তার বাবা যেখানে খোঁজাখুজি করছে সেখানে।
ওদিকটায় কিছু নেই, জানাল টেরি।
তার মা-ও সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেল না, ফিরে এল।
টোডও কিছু না পেয়ে বলল, না, ওই ছেলেমেয়েগুলো নয়। তাহলে নৌকা থাকতই। ওটা অন্য কুত্তা। কেউ ফেলে গেছে এখানে। আস্তে আস্তে বুনো হয়ে উঠেছে। সে জন্যেই কামড়াতে এসেছে ডারবিকে।
তাহলে তো ভয়ের কথা, মিসেস টোড বলল। আবারও আসতে পারে। আমাদেরকেই যে কামড়ে দেবে না তার ঠিক কি?
সাবধান থাকতে হবে। দেখলেই গুলি করে মারব এবার।
হাঁপ ছাড়ল গোয়েন্দারা। যাক, আপাতত ফাড়া কাটল। ফোকরটা দেখতে পায়নি কানাগুলো। নৌকাটাও না। তবে রাফির জন্যে শঙ্কিত হয়ে উঠল জিনা। তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার একটা বড় কারণ, টোডেরা বিষ খাইয়ে রাফিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে এসেও নিশ্চিত হওয়া গেল না। সেই মেরে ফেলার ভয়। এখন বলছে, গুলি করে মারবে!
কথা বলতে বলতে সরে গেল টোডেরা। শেকল দিয়ে রাফিকে বেঁধে ফেলল জিনা। গুহা থেকেই বেরোতে দেবে না আর। ডারবির গন্ধ পেলেই ও খেপে যায়, এ এক অদ্ভুত কাণ্ড! সাধারণত এমন করে না রাফি। অন্য কুকুর দেখলে বরং বন্ধুতই করতে যায়।
খিদে পেয়েছে। টিন খুলে খাবার বের করতে লাগল রবিন। তাকে সাহায্য করল মুসা।
কিশোর বলল, একটা ব্যাপার পরিষ্কার, আমাদের খোঁজে আসেনি ওরা। ট্রেনে করে রকি বীচে চলে গেছি, এটাই বিশ্বাস করেছে।
তাহলে কেন এল? মুসার প্রশ্ন।
সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
আমরা পালিয়েছি বলেই হয়তো ওরাও ভয়ে পালিয়েছে, আনারসের টিন খুলে রেখে মাংসের টিন টেনে নিল রবিন। পারকার আংকেলকে কি জবাব দেবে?
জবাব তো সহজ। বলবে, আমরা বাড়ি ফিরে গেছি। আংকেলও কিছু সন্দেহ করবেন না। তিনিই তো আমাদের চলে যেতে বলেছেন।
ভয়ে পালিয়েছে, না মরতে এসেছে, ওসব জানার দরকার নেই আমার। ফুঁসে উঠল জিনা, এটা আমার দ্বীপ! এখানে আসার কোন অধিকার নেই ওদের! চলো, ঘাড় ধরে গিয়ে বের করে দিয়ে আসি!
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর, ওদের সামনে যাওয়া যাবে না। আমাদের দেখলেই এখন গিয়ে বলে দেবে আংকেলকে। আংকেলেরও বিশ্বাস নেই। রেগেমেগে এসে হাজির হতে পারেন, আমাদের কান ধরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যে। টিন থেকে চামচ দিয়ে আনারসের একটা টুকরো বের করে মুখে পুরল সে। চিবিয়ে গিলে নিয়ে বলল, তাছাড়া, আরও একটা কারণে ওদের সামনে যাব না এখন আমরা।
কি কারণ? গলা বাড়াল মুসা।
অন্য দু-জনও আগ্রহ নিয়ে তাকাল।
কেন, সন্দেহটা ঢোকেনি তোমাদের মাথায়? কিশোর বলল, টোডরাও হয়তো স্মাগলিঙে জড়িত। ওরা এখানে আসে স্মাগলারদের রেখে যাওয়া মাল সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দেশের ভেতর চালান দিতে। টোড নাবিক। নৌকায় করে এখানে যাতায়াত করা তার জন্যে কোন ব্যপারই না। কি, খুব একটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে?
না, মাথা নাড়ল জিনা, মোটেও অসম্ভব না। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। টোডরা চলে যাক, তারপর গিয়ে পাতালঘরে ঢুকব আমরা। দেখব, কিছু আছে কিনা। ব্যাটাদের শয়তানি বন্ধ করতেই হবে!
.
১১.
গেল না টোডেরা।
ফোকর দিয়ে মুখ বের করে দুর্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা করে ফেলল গোয়েন্দারা, কিন্তু টোডদের যাওয়ার কোন লক্ষণই দেখতে পেল না। চত্বরে এক-আধবারের জন্যে বেরোনো ছাড়া তেমন একটা বাইরে বেরোতেও দেখা গেল না ওদের। যেন ছুচো হয়ে গেছে, পাতালঘরের অন্ধকারে বসে থাকাটাই বেশি আরামের, দিনের আলো সহ্য করতে পারে না।