ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে লাগল সবাই। কিন্তু আর কোন উপায়ই দেখল
শেষে ওই গুহাতেই নৌকা ঢোকানো হলো। চাঙড়ের ওপাশে নেয়ার পরও পুরোটা আড়াল হলো না নৌকার। উজ্জ্বল লাল রঙের জন্যে হয়েছে বিপদ। তবে এই সমস্যারও সমাধান হলো। ডুব দিয়ে দিয়ে জলজ আগাছা আর শ্যাওলা তুলে ঢেকে দিল জিনা আর মুসা।
গুড। এপাশ থেকে ওপাশ থেকে দেখে মাথা ঝাঁকাল কিশোর, দেখা যায় না। চলো, চায়ের সময় হয়েছে। গুহা থেকে বেরিয়ে আসার পর বলল, একটা বোকামি কিন্তু করে ফেলেছি। পাহারা দেয়ার জন্যে একজনকে পাহাড়ের চুড়ায় বসে থাকা উচিত ছিল।
তাই তো! একমত হয়ে বলল রবিন, বোকামিই হয়ে গেছে। কি আর, করা। তবে আমার মনে হয় না দিনে কেউ উঠবে। স্মাগলাররা এলে আসবে রাতের বেলা।
নিজেদের আস্তানায় ফিরে চলল, ওরা।
কিছুদূর এসে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল রাফি। গরগর শুরু করল।
দুর্গের দিকে এগোচ্ছিল ওরা, ওখান দিয়ে ঘুরে এসে ফোকর দিয়ে গুহায় নামার ইচ্ছে ছিল। এই সময় হুঁশিয়ার করল রাফি।
কিশোরের নির্দেশে তাড়াতাড়ি একটা ঝোপে ঢুকে পড়ল ওরা। রাফিকে চুপ থাকতে বলল জিনা।
আস্তে ডাল সরিয়ে ফাঁক করে উঁকি দিল কিশোর। কাঁটার খোঁচা লাগল। কিন্তু উত্তেজনায় খেয়ালই করল না সেটা। চত্বরে মানুষ দেখতে পেয়েছে। সে–তাকাতে না তাকাতেই অদৃশ্য হয়ে গেল লোকগুলো।
জিনাও দেখতে পেয়েছে। ফিসফিস করে বলল, কিশোর, পাতালঘরে চলে গেল না তো?
মনে হয়। ঢাকনা ওরাই সরিয়েছে। চোরাই মাল জমা করে রেখেছে হয়তো নিচে। মানুষ লুকিয়ে থাকতেও অসুবিধে নেই। চোর-ডাকাতের জন্যে স্বর্গ। ভাবল একমুহূর্ত। এখান থেকে ভালমত দেখতে পারব না। চলো, গুহায়। নিচের মুখটা দিয়ে ঢুকব। তারপর একজন উঠে বসে থাকব ফোকরের কাছে। দেখব, ব্যাটারা কি করে।রাফি, একদম চুপ, একটা শব্দ করবি না!
ওপর দিয়ে আর গেল না ওরা। নিচে নেমে দ্বীপের কিনার ঘুরে চলে এল গুহামুখের কাছে। ভাল করে তাকাল একবার আশপাশে। কেউ নেই। দেখছে না ওদেরকে। তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়ল ভেতরে।
ঢুকেই রবিনকে পাঠিয়ে দেয়া হলো নজর রাখার জন্যে।
দড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল রবিন। ফোকর দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে রইল দুর্গের দিকে। ঝোপের ডাল তার মাথা আড়াল করে রেখেছে, ওদিক থেকে কেউ দেখতে পাবে না।
নিচে হঠাৎ এক কাণ্ড করে বসল রাফি। ঘেউ ঘেউ করে দু-বার ডাক দিয়েই বেরিয়ে গেল গুহা থেকে। তাকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারল না। জিনা।
গুহামুখের কাছে এলে ডাকল সে, রাফি! কোথায় গেলি তুই! এই রাফি?
সাড়া দিল না কুকুরটা।
একটু পরেই তাকে দেখতে পেল রবিন। এক ঝোপ থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে আরেক ঝোপে ঢুকল রাফি। যেন শিকারের সন্ধান পেয়েছে। চিতাবাঘ, ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছে এখন।
কিসের সন্ধান পেয়েছে সেটা জানতে ও দেরি হলো না। চত্বরের দিক থেকে ল্যাগব্যাগ করতে করতে বেরিয়ে এল একটা ছোট্ট কুকুর। চোখের পলকে ঝোপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রাফি।
এমন চিৎকার জুড়ে দিল ছোট কুকুরটা, যেন খুন করে ফেলা হচ্ছে। তাকে। কউউ উউ করে যেন চেঁচিয়ে বলছে, বাবাগো! মেরে ফেললগো! বাঁচাওগো!
শঙ্কিত হলো রবিন। সর্বনাশ করে দিল রাফি। চেঁচামেচি শুনে এখন বেরিয়ে আসবে স্মাগলাররা। রাফিকে সরে আসার জন্যে ডাক দিতে গেল
কিন্তু মুখ খোলার আগেই যারা বেরিয়ে এল, তাদের দেখবে কল্পনাই করেনি সে। টোড পরিবার–মা, বাবা, ছেলে, তিনজনেই আছে। ও, এ কারণেই কুত্তাটাকে চেনা চেনা লাগছিল!
ঝট করে ফোকরে মাথা নামিয়ে ফেলল রবিন। তার ধারণা, নিশ্চয় কোনভাবে টোডরা জেনে গেছে ওরা দ্বীপে পালিয়ে এসেছে। ধরে নিতে এসেছে এখন। খবরটা বন্ধুদের জানানোর জন্যে তাড়াতাড়ি নেমে এল নিচে।
কুকুরের ঝগড়া গুহার ভেতর থেকেও শোনা যাচ্ছে। রবিন বলল, জিনা, রাফিকে জলদি ডাকো! ডারবির সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়েছে।
অবাক হলেও প্রশ্ন করল না জিনা। আগে রাফিকে ডেকে আনা দরকার। দুই আঙুল মুখে পুরে তীক্ষ্ণ শিস দিল। ডাকটা শুনতে পেল রাফি। এই আদেশ না মানার অর্থ তার জানা আছে। ভীষণ রাগ করবে জিনা। পিটুনিও লাগাতে পারে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডারবির কান কাঁটা স্থগিত রেখে ফিরে আসতে হলো তাকে। প্রথমবার যে ভাবে ঢুকেছিল, সে ভাবেই ফোকর গলে ধপ করে এসে পড়ল গুহার মেঝেতে। আরেকটু হলেই পড়েছিল মুসার মাথায়।
রাফির পিছু পিছু ছুটে এসেছে টেরি। হঠাৎ দেখল, কুকুরটা নেই। চোখের সামনে হাওয়া। একেবারে ভোজবাজি! চোখ ডলল। বিশ্বাস করতে পারছে না।
তার কাছে এসে দাঁড়াল তার বাবা-মা।
মিসেস টোড জিজ্ঞেস করল, কুত্তাটা গেল কোথায়? দেখতে কেমন?
মা, বললে বিশ্বাস করবে না, টেরি বলল, কুত্তাটা দেখতে ঠিক জিনার শয়তান কুত্তাটার মত!
গুহায় বসে তাদের কথা স্পষ্ট শুনতে পেল গোয়েন্দারা। ফিসফিস করে রাফিকে সতর্ক করল জিনা, শব্দ না করার জন্যে।
তা কি করে হয়! মিসেস টোড বলছে, ওরা তো গেছে রকি বীচে। কুত্তাটাকেও নিয়ে গেছে। নিজের চোখেই তো দেখলাম স্টেশনের দিকে যেতে। নিশ্চয় এটা অন্য কুত্তা। কেউ ফেলে গেছে।
তা তো বুঝলাম, শোনা গেল টোডের খসখসে কণ্ঠ, কিন্তু গেল কোথায়?
মাটিতে তলিয়ে গেছে! জবাব দিল টেরি।
তোর মাথা! ধমকে উঠল টোড। গাধা যে গাধাই রয়ে গেছে! মাটিতে তলায় কি করে! তুই তলাতে পারবি? মাটি কি পানি? এক হতে পারে, চুড়া থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। পড়লে মরবে। না মরলেও হাড্ডিগুড্ডি ভাঙবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।