মুসা বলল, সবই তো হলো। আসল জিনিসই বাকি।
কী? জানতে চাইল রবিন। রু
টি।
ও নিয়ে ভাবনা নেই, কিশোর বলল। সকালে বেকারি থেকে নিয়ে নিলেই হবে।
কিন্তু এত সকালে দোকান খুলবে?
না খুললে ঘর থেকে ডেকে বের করে এনে খোলাব, জিনা বলল, অসুবিধে হবে না।
বেঙের গোষ্ঠী যখন দেখবে আমরা নেই, হেসে বলল মুসা, আকাশ থেকে পড়বে। তাজ্জব হয়ে ভাববে, কোথায় উধাও হলাম আমরা। ভয়ও পাবে নিশ্চয়।
উঁহু, ভয় পাওয়ানো চলবে না, কিশোর বলল। ওরা পারকার আংকেলকে বলে দেবে তাহলে। হয়তো ছুটে আসবেন তিনি। আমাদের বাড়ি ফিরতে বাধ্য করবেন।
করলে কি? আমরা না গেলেই হলো।
তার মুখের ওপর না বলতে পারবে না। থাক, এসব নিয়ে ভাবার অনেক সময় আছে। জরুরী কাজটা আগে সারি। অন্ধকার থাকতে থাকতেই মালপত্রগুলো নিয়ে নৌকায় তুলতে হবে।
মালের বোঝার দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। এত জিনিস নেব কি করে? নিতে নিতেই ভোর হয়ে যাবে তো। কবার যেতে-আসতে হবে ভেবে দেখেছ?
একমুহূর্ত চিন্তা করে জিনা বলল, ছাউনিতে দুটো ঠেলাগাড়ি আছে আমাদের। একটাতে করেই সব নেয়া যাবে। গাড়িটা আবার জায়গামত রেখে দিয়ে গেলেই হবে।
গাড়ি বের করা হলো। চাকার অতি মৃদু শক্তও ঠিকই কানে গেল। ডারবির, কিন্তু একবার চাপা গলায় গোওও করে. উঠল শুধু। রাফির ভয়ে জোরে চিৎকার করার সাহস পাচ্ছে না। তার গোঙানিটা মিসেস টোডের কানে গেল না। গভীর ঘুমে অচেতন। নাক ডাকছে জোরে জোরে। জানতেই পারল না, নিচে কি চলছে।
নৌকায় মাল বোঝাই করা হলো। গাড়িটা রেখে দেয়া হলো আবার ছাউনিতে। রাত এখনও বাকি। এত জিনিস এভাবে নৌকায় ফেলে সবার চলে যাওয়াটা ঠিক হবে না ভেবে মুসাকে পাহারায় থাকতে বলল কিশোর।
মুসারও আপত্তি নেই। কম্বল বিছিয়ে শুয়ে পড়ল নৌকার পাটাতনে।
সব নেয়া হয়েছে তো? প্রয়োজনীয় কিছু নেয়া বাকি আছে কিনা দেখছে কিশোর। নাহ্, হয়েছে…ওহহো, আসল জিনিসটাই তো ভুলে গেছি, টিন ওপেনার। টিনের মুখ কাটব কি দিয়ে?
রাফির জন্যে একব্যাগ ডগ-বিস্কুটও নিতে হবে, জিনা বলল।
তা নেয়া যাবে। মুসা, চলি। আরামসে ঘুমাও। ভোরেই চলে আসব আমরা।
বাড়ি রওনা হয়ে গেল কিশোররা, সঙ্গে গেল রাফি।
সাগরের পাড়ে বেশ ঠাণ্ডা, শীত লাগে। কম্বল মুড়ি দিয়ে আকাশের তারা গুণতে লাগল মুসা। কখন জড়িয়ে এল চোখ, বলতে পারবে না।
.
হাঁটতে হাঁটতে কিশোর বলল, সকাল আটটায় একটা ট্রেন আছে। রেলওয়ের একটা টাইম-টেবল নিয়ে ডাইনিং টেবিলে খুলে ফেলে রাখব। টোডদের। দেখিয়ে দেখিয়ে চলে যাব স্টেশনের দিকে। তারপর ঘুরে আরেক দিক দিয়ে গিয়ে উঠব নৌকায়।
ওরা ভাববে আমরা রকি বীচে ফিরে গেছি, হেসে বলল রবিন। কল্পনাই করবে না, খাবার-দাবার নিয়ে দ্বীপে চলে গেছি পিকনিক করার জন্যে।
চমৎকার বুদ্ধি, জিনা বলল, এতে খানিকটা দুশ্চিন্তায়ও থাকবে ওরা। পুলিশকে ভয় পায়, ওদের সাহায্য নিতে পারবে না। আব্বাকেও কিছু বোঝাতে পারবে না। বোরতে গেলেই তো নিজেদের শয়তানির কথা ফাঁস। করতে হবে। কিন্তু দশদিনের আগেই যদি আব্বা-আম্মা চলে আসে, জানব কি করে?
তা-ও তো কথা, কিশোর বলল। এখানে এমন কেউ আছে, যাকে বিশ্বাস করে সব কথা বলে যেতে পারো?
একমুহূর্ত ভাবল জিনা। আছে। ফগ। ওই যে, সেই জেলের ছেলেটা, যার কাছে রাফিকে লুকিয়ে রেখেছিলাম…
হ্যাঁ, মনে আছে। তাহলে তাকে বলে যেতে হবে।
বাড়ি ফিরে মায়ের লেখার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা টাইম-টেবল বের করে আনল জিনা।
কোন ট্রেনটায় যাচ্ছে ওরা, মোটা করে তার নিচে দাগ দিয়ে রাখল কিশোর। বইটা খোলা রেখেই উপুড় করে ফেলে রাখল টেবিলে।
এরপর একটা টিন ওপেনার বের করে পকেটে ভরল কিশোর।
শেষ হয়ে আসছে রাত। ঘুমানোর আর সময় নেই। বসার ঘরেই বসে রইল ওরা।
.
ফর্সা হয়ে এল পুবের আকাশ। সোনালি রোদ এসে পড়ল বাগানে।
এত সকালে কি বেকারি খুলবে, জিনা? জানতে চাইল কিশোর।
ছটা তো বাজে। চলো, গিয়ে দেখি।
দোকান খোলেনি রুটিওয়ালা। সামনের রাস্তায় পায়চারি করছে। ছেলেমেয়েদের চেনে। হেসে জিজ্ঞেস করল, এত সকালে এদিকে? কি ব্যাপার?
রুটি লাগবে, জিনা বলল।
ক’টা?
ছটা। বড় দেখে।
এত রুটি! কি করবে?
খাব, হেসে জবাব দিল জিনা।
অবাক হলেও আর কিছু বলল না রুটিওয়ালা। দিয়ে দিল।
দোকান খুলে সবে ঝাড়পোছ করছে এক মুদী। তার কাছ থেকে একব্যাগ কুকুরের বিস্কুট কিনল জিনা।
জিনিসগুলো নৌকায় রাখতে চলল ওরা।
কম্বল মুড়ি দিয়ে কুঁকড়ি-বুকড়ি হয়ে তখনও ঘুমাচ্ছে মুসা।
ডাক দিল রবিন, এই মুসা, ওঠো। আরামেই আছো দেখি…
আরাম আর কই, হাই তুলতে তুলতে জবাব দিল মুসা, উফ, শীতে মরে গেছি।
কিশোর বলল, এত মালপত্রসহ নৌকাটা এখানে থাকলে লোকের চোখে পড়ে যাবে। জিনা, কি করা যায়? এটাকে লুকাতে হবে।
হাত তুলে একদিক দেখিয়ে জিনা বলল, ওদিকে একটা সরু খালমত আছে, একটা গুহার ভেতরে ঢুকেছে। গুহাটাতে লুকানো যেতে পারে। মুসা, বেয়ে নিয়ে যেতে পারবে?
আশা তো করি।
তাহলে যাও, কিশোর বলল।
খিদে পেয়েছে। কিছু খেয়ে নিলে কেমন হয়?
খিদে পেলে খাবে। খাবারের কি অভাব আছে নাকি? আগে নৌকাটা। এখান থেকে সরাও, তারপর খেয়ো।
তোমরা খাবে না?
পরে এসে। আগে কাজ সেরে নিই।
সবাই মিলে ঠেলে নৌকাটা পানিতে নামাল। দাঁড় তুলে নিল মুসা।