রেডিও অফ করে দিয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল মিসেস টোড, কি চাই?
রাতের খাবার দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন?
রুটি আর কিছু পনির পাবে, ব্যস, আর কিছু না। নিয়ে যাও।
কেন, আপনার বাবার টাকায় কেনা খাবার, ভাল কিছু দিতে এত কষ্ট হয়?
ক্ষণিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল মিসেস টোড। চেঁচিয়ে উঠল, গাল দিচ্ছ কোন সাহসে!
কথা না শুনলে আরও খারাপ কিছু করব, কোনও বয়স্ক মহিলার সঙ্গে এতটা অভদ্র আচরণ জীবনে করেনি কিশোর। সহ্যের শেষ সীমায় চলে গেছে সে। রাফি, খেয়াল রাখ। সোজা কামড়ে দিবি, বলে রাখলাম তোকে।
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল রাফির চেহারা। গরগর করে গজরাতে লাগল।
জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করল না কিশোর, মৃদু শিস দিতে দিতে এগোল ভাঁড়ারের দিকে। জানে তার এই আচরণ আরও খেপিয়ে দেয় মিসেস টোডকে, সেজন্যেই আরও বেশি করতে লাগল এরকম। বাহ, ভাড়ার কি করে বোঝাই করে রাখতে হয় আপনি জানেন, মিসেস টোড। মুরগীর রোস্ট। আহ, গন্ধেই পানি এসে যাচ্ছে জিভে। মনে হচ্ছে কত বছর খাই না। নিশ্চয় আজ সকালে জবাই করেছে মিস্টার টোড। অনেক কঁক-কঁক শুনেছি। আরে, টমেটো! চমৎকার! গাঁয়ের সবচেয়ে ভালটা নিয়ে আসা হয়েছে, বুঝতে পারছি। আরি সব্বেনাশ, আপেল-পাইও আছে। আপনি সত্যি ভাল রাঁধেন মিসেস টোড, স্বীকার করতেই হবে।
বড় একটা ট্রে নিয়ে এক এক করে তাতে পাত্রগুলো তুলতে শুরু করল সে।
চিৎকার করে বলল মিসেস টোড, জলদি রাখো! ওগুলো আমাদের খাবার!
ভুল করলেন, মোলায়েম স্বরে বলল কিশোর। এগুলো আমাদের খাবার। আজ সারাদিন খাওয়াটা ভাল হয়নি, রাতেও না খেয়ে থাকতে পারব না।
দেখো ছেলে, এদিকে তাকাও!এত সুস্বাদু খাবারগুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে ঘোৎ-ঘোৎ করে উঠল মিস্টার টোড।
আপনার দিকে তাকাব? কেন? যেন সাংঘাতিক অবাক হয়েছে। কিশোর, এমন কি মহামানব হয়ে গেছেন আপনি? শেভ করেছেন? গোসল করেছেন? মনে তো হয় না। না, মিস্টার টোড, আপনার দিকে তাকানোর রুচি হচ্ছে না।
বাকহারা হয়ে গেল মিস্টার টোড। একটা ছেলের জিভে যে এতটা ধার থাকতে পারে, কল্পনাই করেনি। আরও দু-বার আনমনেই বিড়বিড় করল, দেখো, এদিকে তাকাও,এদিকে তাকাও!
উফ, আবারও সেই একই কথা! অসহ্য! আচ্ছা মিস্টার টোড, দুনিয়ায় এত নাম থাকতে আপনার নাম টোড রাখতে গিয়েছিল কেন? টোড কাকে। বলে জানেন তো? রেঙ। তা-ও ভাল জাতের হলে এককথা ছিল, গড়িয়ে গড়িয়ে যেগুলো চলে সেগুলো:
চুপ করো পাজি ছেলে কোথাকার! আর সহ্য করতে না পেরে ধমকে উঠল মিসেস টোড।
কিশোরকে কিছু বলতে হলো না, ঘাউ করে বিকট হাঁক ছাড়ল রাফি।
চমকে উঠে পিছিয়ে গেল মিসেস টোড। কণ্ঠস্বর নরম করে বলল, সব নিয়ে গেলে আমরা কি খাব, বলো?
কেন, রুটি আর পনির রয়েছে না, যেগুলো আমাদের জন্যে রেখেছিলেন। তাই খেয়ে নিন।
কুকুরের কথা ভুলে গিয়ে একটা চামচ তুলে কিশোরকে বাড়ি মারতে গেল মিসেস টোড।
আবার ঘাউ করে লাফিয়ে এসে সামনে পড়ল রাফি। কামড়ে দিতে গেল।
বাবাগো! বলে লাফ দিয়ে সরে গেল মিসেস টোড। কি শয়তান কুত্তারে বাবা! আরেকটু হলেই আমার হাত কেটে নিয়েছিল!
আপনাকে তো বলেছি, গোলমাল করবেন না, করছেন কেন?
দাঁড়াও, এমন শিক্ষা দেব একদিন.. ফোঁস ফোঁস করতে লাগল মিসেস টোড।
চেষ্টা তো আজও কম করেননি, পেরেছেন? আজকে মাপ করে দিলাম, আবার যদি এরকম করেন, ওই যে বলেছি, সোজা পুলিশের কাছে যাব।
আগের বারের মতই পুলিশের কথায় ভয় পেয়ে গেল মহিলা। চট করে একবার স্বামীর দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে গেল।
সন্দেহ হলো কিশোরের, কোন অপরাধ করে এসে এখানে লুকায়নি তো লোকটা? নইলে পুলিশের কথা শুনলেই ঘাবড়ে যায় কেন? আসার পর থেকে একটিবারের জন্যে ঘরের বাইরেও যায়নি, এটাও সন্দেহজনক।
খাবারের ট্রে হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। পেছনে রাফি; খুব হতাশ হয়েছে কারও পায়ে একটা অন্তত কামড় বসাতে পারেনি বলে।
যুদ্ধজেতা বীরের ভঙ্গিতে বসার ঘরে ঢুকল কিশোর। ট্রে-টা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, এসো, দেখে যাও, কি নিয়ে এসেছি।
সব কথা শুনে হুল্লোড় করে উঠল সবাই।
রবিন বলল, সাহস আছে তোমার, কিশোর। ওই মহিলাটার সামনে যেতেই ভয় করে আমার।
ভয় কি আমারও কম করছিল। কেবল সঙ্গে রাফি থাকাতেই পার হয়ে এলাম।
ছুরি-চামচ-প্লেটের অভাব হলো না। সাইডবোর্ড থেকে বের করে আল জিনা। চায়ের সময় খাওয়ার পর রুটি বেঁচে গিয়েছিল, তারপরেও রান্নাঘর থেকে বড় আরেকটা নিয়ে এসেছে কিশোর। কারোরই কম পড়ল না, এমন কি রাফিরও পেট ভরল।
খাওয়ার পরই হাই তুলতে শুরু করল রবিন। আমি আর বসে থাকতে পারছি না।
আজকাল বড় বেশি ঘুমকাতুরে হয়ে পড়েছ তুমি, রবিন, অভিযোগ করল মুসা।
কি আর করব, বলো, হেসে বলল রবিন। সারাদিন থাকি খাবারের চিন্তায়। কখন পাব, কখন পাব এই টেনশনেই শরীর হয়ে থাকে ক্লান্ত। খাওয়ার পর আর থাকতে পারি না।
বিষণ্ণকণ্ঠে জিনা বলল, তোমাদের আসতে বলে এবার ভুলই করলাম…
সববারই তো শুদ্ধ হয়, এবার নাহয় একটু ভুল হলোই, পরিবেশটা হালকা করার জন্যে বলল রবিন, তাছাড়া তুমি তো আর জানতে না আন্টির শরীর এতটা খারাপ হয়ে যাবে।
শুতে গেল ওরা। গোয়েন্দারা তাদের ঘরে, জিনা তার ঘরে। রাফি শুয়ে থাকল জিনার বিছানার কাছে। কান পেতে রইল সন্দেহজনক শব্দ শোনার জন্যে। টোডদেরকে শুতে যেতে শুনল সে। দরজা বন্ধ হতে শুনল। ডারবি গোঙলি একবার, তারপর সব নীরব।