এতো জোরে কথা বলছে সে, ভয় পেয়ে গেল অন্য দুজন। তারপর ঠিক কি ঘটলো, বুঝতে পারলো না ছেলেরা। কানে এলো, একটা ঘুসির শব্দের পর পড়ে গেল একজন। তারপর আরেকটা ঘুসি, আরেকজন পড়ে গেল। খিকখিক করে হেসে উঠলো টেড। কুৎসিত হাসি।
কয়েক সেকেণ্ড পরেই কটেজের জানালায় দেখা দিলো মিস্টার ডাউসন আর ডরির মুখ। শোনা গেল উদ্বিগ্ন কণ্ঠ, কে ওখানে? কি হয়েছে?
ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙলো। বড় একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে কাঁচের ঘর সই করে ছুঁড়েছে টেড। এতো জোরে হলো আওয়াজ চমকে গেল কিশোররা।
কিছু না, স্যার, চেঁচিয়ে জবাব দিলো টেড। কে যেন ঘোরাফেরা করছিলো এখানে। চোর মনে করে দেখতে বেরোলাম। ঠিকই আন্দাজ করেছি। আমার সাড়া পেয়েই বোধহয় দৌড়ে পালাতে গিয়ে কাঁচের ঘরের ওপর পড়ে কাচ ভেঙেছে।
ধরতে পারলে না?
চেষ্টা তো করলাম। পালালো। তারপর যেন ভাগ্য তার প্রতি সদয় হয়েই দেখিয়ে দিলো তিন কিশোরকে। টর্চ জ্বাললো সে। আর আলো এসে পড়লো একেবারে কিশোরদের ওপর। চেঁচিয়ে উঠলো সে, কে? এই তো, পেয়েছি। তোমরাই, অ্যাঁ? তাহলে তোমরাই এসেছো চুরি করতে? কাঁচের ঘরের দেয়াল ভেঙেছো? দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা!
১৩
পালানোর চেষ্টা করলে অবশ্য সবাই ধরা পড়তো না, কিন্তু সে চেষ্টা করলো না ওরা। জনি আর মুসার কজি চেপে ধরলো টেড। অবাক হলো মুসা। সাংঘাতিক জোর লোকটার গায়ে। হাতই নাড়াতে পারছে না সে, এতো জোরে ধরেছে।
বেরিয়ে এলেন মিস্টার ডাউসন আর ডরি। কিশোরকে ধরলেন।
এখানে কি করছো? কাচের ঘর ভাঙলে কেন? রেগেমেগে বললো ডাউসন। ভাঙা ফোকর দিয়ে এখন আমাদের সমস্ত প্রজাপতি বেরিয়ে যাবে!
ছাড়ুন, হাত ছাড়ন, কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো কিশোর। আমরা ভাঙিনি।
ও-ই ভেঙেছে! চিৎকার করে বললো টেড। আমি দেখেছি।
মোটেই দেখোনি, মিথ্যুক কোথাকার। ভাঙলে তো তুমি! এখন বলছো আমাদের নাম! পাল্লা দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো জনি। ছাড়ো আমাকে। আমি জোনার কলিউড। ভালো চাইলে ছাড়ো আমাকে, নইলে আমার বাবা তোমার মুণ্ডু চিবিয়ে বাবে!
ও জনি, দাঁত বের করে হাসলো টেড। জোনার কলিউড। যার বাবা টেডকে খারাপ লোক বলে ফার্মে চাকরি দিতে চায় না। অথচ দিনমজুরী করাতে বাধে না। দাঁড়াও, এইবার পেয়েছি সুযোগ। অপমানের প্রতিশোধ নেববা আমি। মুরগী চুরি করতে আসার অপরাধে পুলিশ যখন তার ছেলেকে কান ধরে টেনে নিয়ে যাবে, তখন টের পাবে কে খারাপ আর কে ভালো।
ডাউসনকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিশোর, কিন্তু তিনিও কিছুই শুনতে চাইলেন না।
মুসা আর জনিকে টানতে টানতে ছাউনির দিকে চললো টেড। ডাউসন আর ডরিকে বললো, ওদেরকেও নিয়ে আসুন। সারারাত অন্ধকার ঘরে বন্দী থাকলে সকালে আপনিই তেজ কমে যাবে।
হাত ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করলো না কিশোর।
এই সময় শোনা গেল কুকুরের ঘেউ ঘেউ।
রাফিয়ান! শান্তকণ্ঠে কিশোর বললো, কামড় খেতে না চাইলে হাত ছাড়ন।
রাফি! রাফি! চেঁচিয়ে ডাকলো মুসা। এদিকে আয়! আমরা এখানে!
এমন বিকট গর্জন করে উঠলো রাফিয়ান, টেড পর্যন্ত ভয় পেয়ে গেল। লাফিয়ে কাছে চলে এলো। কামড় বসানোর আগে টেডের পায়ের কাছে মুখ এনে খটাস করে বন্ধ করলো হাঁ। ভয় দেখানোর জন্য। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেয়ে যে আওয়াজ হলো, তাতেই ভয়ে সিটিয়ে গেল টেড। কখন যে ছেড়ে দিলো মুসা আর জনিকে নিজেই বলতে পারবে না। ডাউসন আর ডরি কিশোরকে ছেড়ে দিয়ে আগেই দৌড় দিয়েছে দরজার দিকে।
টেডও তাদের পিছু নিলো। তেড়ে গেল রাফি।
চলো দেখি, কিশোর বললো, লোক দুটোর কি হলো?
কিন্তু নেই ওরা। ঘুসি খেয়ে পড়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু গোলমালের সুযোগে গা ঢাকা দিয়েছে।
পালিয়েছে! জনি বললো। তো, এখন? আর তো কিছু করার নেই এখানে?
না, কিশোর বললো। আমরা ক্যাম্পে ফিরে যাবো। খুব একটা কিছু জানতে পারলাম না। শুধু জানা গেল, ডাউসন সত্যি কথাই বলেছেন, চশমাওয়ালা লোকটা ডরি নয়। টেড ডেনভার খারাপ লোক, বাজে লোকের সঙ্গে তার মেলামেশা…
এবং ওদেরকে কোনোভাবে সাহায্য করেছে, কিশোরের কথাটা শেষ করলো মুসা। ওদেরকে এখানে এনে লুকিয়েছে। কাজের বিনিময়ে পয়সা পায়নি। কিন্তু কাজটা কি করেছিলো?
জানি না। মাথা আর কাজ করছে না এখন। চলো, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কাল এসব নিয়ে ভাববো। জনি, বাড়ি চলে যাও।
অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে রবিন আর জিনা। কিশোরদেরকে দেখেই বলে উঠলো, কি ব্যাপার? কি হয়েছিলো? এতো রাত করলে? রাফি তাহলে ঠিকমতোই খুঁজে পেয়েছে তোমাদের?
এক্কেবারে সময়মতো, হেসে বললো মুসা। আমাদের দেরি দেখে পাঠিয়েছিলে, না?
হ্যাঁ, জিনা বললো। আমরাও যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রবিন বললো, আগে রাফিই যাক। ও যদি না ফেরে তাহলে আমরা যাবো। তা হয়েছিলো কি?
সব কথা ওদেরকে জানালো মুসা আর কিশোর।
অবাক কাণ্ড! রবিন বললো। হচ্ছেটা কি ওই প্রজাপতির খামারে! টেড ওই লোক দুটোকে কি সাহায্য করেছে? কিভাবে বের করা যায়, বলো তো?
হাজার চেষ্টা করেও টেডের কাছ থেকে জানা যাবে না, কিশোর বললো। দেখি, কাল আবার যাবো খামারে। টেড যদি তখন না থাকে, তার মাকে ফুসলেফাঁসলে কিছু কথা আদায়ের চেষ্টা করবো।
হ্যাঁ, ওই মহিলা নিশ্চয় অনেক কিছু জানে, রবিন বললো। দুজন লোককে কটেজে লুকিয়ে রেখেছিলো তার ছেলে। এর মানে ওদের খাওয়া মিসেস ডেনভারকেই জোগাতে হয়েছে। কিন্তু বলবে তো?