এটাতে করেই দুদিন আগে চলে গিয়েছিলো টনি।
মোট তিনটে ট্রাক এখন চত্বরে। একটা, টনির ট্রাক। দ্বিতীয়টা একটা আইস ক্রীম ভ্যান। আর তৃতীয়টা বিরাট এক লরি, পেছনে প্ল্যাটফর্ম লাগানো রয়েছে ইচ্ছেমতো নামানো যায়, ওঠানোও৷ যায়। পাশে বড় করে লেখা রয়েছেঃ হ্যারিসনস ট্রী সার্ভিস। দুজন ট্রাক ড্রাইভারের একজনের পরনে আইস ক্রীম বিক্রেতার শাদা ইউনিফর্ম। আরেকজনের পরনে মালির পোশাক। কোমরের ভারি বেল্ট থেকে ঝুলছে নানারকম যন্ত্রপাতি। রবিনের দিকে পেছন করে রয়েছে ওরা। মেজর নিচু গলায় কথা বলছেন ওদের সঙ্গে। দুটো লোককেই চেনা চেনা লাগছে। রবিনের। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারলো না কোথায় দেখেছে। কথা শেষ করে যার যার ট্রাকে গিয়ে উঠলো ওরা। বেরিয়ে গেল। ভোলাই রইলো। গেটটা।
আবার আগের ঘরে ফিরে এলেন মেজর নিরেক।
দেয়াল থেকে নেমে পড়লো রবিন। গুঁড়ি মেরে চলে এলো দোকানের সামনের দিকে। কানে এলো মেজরের কথা, হ্যাঁ, বুঝেছি, গাধা কোথাকার! দশ মিনিট সময় দিলাম! খটাস করে রিসিভার আছড়ে রাখলেন ক্রেডলে।
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে কিশোরের দেয়া যন্ত্রটা বের করে চত্বরে দাঁড়ানো ট্রাকটার দিকে চললো রবিন। নিচের ইস্পাতের ফ্রেমে এমন ভাবে লাগালো ওটা, যাতে ড্রপারের মুখটা নিচের দিকে থাকে। লাগিয়ে আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না, এক দৌড়ে এসে ঢুকলো ঝোঁপের ভেতর।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দোকান থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলেন মেজর। গেটের বাইরে ট্রাকটা বের করে থামালেন। নেমে এসে লাগিয়ে দিলেন গেটটা।
ট্রাকটা চলে যাওয়ার শব্দ শুনলো রবিন। দৌড়ে এলো দেয়ালের কাছে। দেয়াল টপকে ওপাশে নেমে চলে এলো একটা টেলিফোন পোস্টের কাছে, যেটাতে সাইকেল বেঁধে রেখে গিয়েছিলো। তাড়াতাড়ি খুলে নিয়ে তাতে চড়ে এলো গেটের কাছে। আলট্রাভায়োলেট টর্চ বের করলো।
সহজেই খুঁজে বের করলো চিহ্ন। অতিবেগুনী রশ্মি পড়ে জ্বলজ্বল করছে। বেগুনী ফোঁটাগুলো। আপনমনেই হাসলো রবিন। এগিয়ে চললো ওই ফোঁটা অনুসরণ করে।
প্রথমে সাগরের দিকে গেছে চিহ্নগুলো, তারপর গিয়ে উঠেছে হাইওয়েতে। উদ্বিগ্ন হলো রবিন। গাড়িতে করে গেছেন মেজর। এই খোলাপথে গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইকেলে করে অনুসরণ করা অসম্ভব। খানিক দূর এগিয়ে আবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। চিহ্নগুলো হাইওয়ে থেকে আরেক দিকে মোড় নিয়েছে, চলে গেছে বড় একটা শপিং সেন্টারের দিকে।
অনেক গাড়ি পার্ক করা রয়েছে বাজারের পার্কিং লটে। ওগুলোর ভেতর দিয়ে চললো রবিন। চোখ খুঁজছে ভ্যানটাকে। এই দিনের আলোয় মাটির দিকে আলো জ্বালার ভঙ্গিতে টর্চ ধরে রাখতে সঙ্কোচ লাগছে তার, বোকা ভাবতে পারে লোকে। তবে বাইরে লোকজন তেমন নেই, বেশির ভাগই ভেতরে, কেনাকাটায় ব্যস্ত।
ভ্যানটা চোখে পড়লো না। টর্চ দিয়ে না খুঁজে উপায় নেই। যে যা খুশি ভাবুকগে, বলে মন থেকে জোর করে অস্বস্তি দূর করে দিলো রবিন। চিহ্ন ধরে ধরে এগোলো আবার। একটা হার্ডওয়্যারের দোকানের পাশ দিয়ে চলে গেছে। ফোঁটাগুলো।
সাইকেল থেকে নেমে সাবধানে দোকানটার কোণায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো সে। দোকানের পাশের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভ্যানটা। পেছনের দরজা খোলা। একটু পরেই দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন মেজর। পেছনে হস্তীদেহী রিগো। হাতে কয়েকটা বস্তা, আলুর বস্তার মতো।
বস্তাগুলো ভ্যানে তুললো সে। আবার দুজনে গিয়ে ঢুকলো দোকানে। ভ্যানের ভেতরে উঁকি দেয়ার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে ঠেকালো রবিন। বেশি ঝুঁকি নেয়া হয়ে। যাবে। যে-কোনো মুহূর্তে বেরিয়ে আসতে পারেন মেজর আর রিগো। এবং তা-ই করলো ওরা। এবারও আগে আগে বেরোলেন মেজর। পেছনে রিগো বেরোলো হাতে কতগুলো ব্যাটারির মতো জিনিস নিয়ে। ওগুলোও ভ্যানের পেছনে। তুলে দরজা লাগিয়ে দিলো।
এত ঢিলা, ছাগল! ধমক লাগালেন মেজর। জলদি ওঠো। আমার খিদে পেয়েছে।
ভ্যানের সামনের সীটে উঠলো দুজনে।
চট করে সরে গেল রবিন। মেজরের চোখে পড়তে চায় না।
বেগুনী ফোঁটা ধরে ধরে আবার ভ্যানটাকে অনুসরণ করলো সে। এতো জোরে চলেছে, পার্কিং লটের মোড় ঘুরে আরেকটু হলেই গিয়ে পড়েছিলো ভ্যানটার গায়ে। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। কাঁচের দরজার ওপাশে মেজর আর রিগোকে দেখতে পেলো সে। খেতে গেছে, বেরোতে সময় লাগবে। এটাই সুযোগ!
ভ্যানের পেছনের দরজা খুলে ভেতরে তাকালো রবিন। আলুর বস্তাগুলো দেখলো। ব্যাটারিগুলো দেখলো। আরও জিনিস পড়ে আছে মেঝেতে। কতগুলো বেলচা আর গাইতি। মাটি লেগে আছে ওগুলোতে। সদ্য খোঁড়া মাটি!
০৬.
ভটভট-ভটভট করে পাইরেটস কোবের দিকে চলেছে ব্ল্যাক ভালচার। বাতাস, ঢেউয়ের গর্জন, আর জলদস্যুদের কোলাহল ছাপিয়ে লাউডস্পীকারে গম গম করে উঠলো ক্যাপ্টেন ফিলিপের কণ্ঠ, বেগুনী জলদস্যুর আড্ডায় স্বাগতম। উত্তর লস। অ্যাঞ্জেলেসের সব চেয়ে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এসেছেন। আপনারা। কুখ্যাত বেগুনী জলদস্যু আর তার ভয়ংকর সহকারীদের নিষ্ঠুর। কাণ্ডকারখানা দেখবেন আপনারা পাইরেটস কোভে। তবে তার আগে ওই দসর্দারের কথা কিছু জানা থাকা দরকার আপনাদের, আমি মনে করি। কাহিনীর শুরু আঠারোশো আঠারো সালে, যেদিন আলটা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে এসে নোঙর ফেলেছিলো দুটো কালো জাহাজ। একটা থারটি এইট-গান ফ্রিগেট, নাম আরজেনটিনা। কমাণ্ডার ছিলেন একজন ফ্রেঞ্চ প্রাইভেটিয়ার, ক্যাপ্টেন হিপোলাইট ডা বুচার্ড। দ্বিতীয় জাহাজটা টোয়েন্টি সিক্স-গান, ওটার কমাণ্ডার একজন জলদস্যু, পেড্রো কনডে। তার প্রধান সহকারী ছিলো লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম ইভানস। জাহাজের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড।