আমি! মুসা বললো। ডাকাত এল ডিয়াবলোর গল্প বলবো আমি।
আগে বলার ইচ্ছে ছিলো কিশোরের, থেমে গেল। বসে পড়লো রবিনের পাশের চেয়ারটায়। মুসার মুখে আরেকবার শুনতে লাগলো মেকসিকান দস্যু ডিয়াবলোর বীরগাথা, মেকসিকান যুদ্ধের সময় কি করে আমেরিকান অনুপ্রবেশ কারীদের বাধা দিয়েছিলো। কিন্তু মুসা অর্ধেকও বলে সারতে পারলো না, তাকে থামিয়ে দিয়ে মেজর বললেন, ভালো। আমাদের সোসাইটির জন্যে চমৎকার সিলেকশন। কাজে লাগবে এল ডিয়াবলো, তাকে তুলে ধরা উচিত। এরপর কে বলবে?
শুরু করে দিলো কিশোর, আমি দুজনের কথা বলবো। একজন, ফরাসী প্রাইভেটিয়ার হিপোলাইট ডা বুচারড। আরেকজন তার চাকর উইলিয়াম ইভানস, পরে যার ডাক নাম হয়ে যায় বেগুনী জলদস্যু। ফরাসী জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ডা বুচার্ড, পরে আরজেনটিনা সরকারের চাকরি নিয়ে নেন। আঠারোশো আঠারো। সালে যুদ্ধে নেমেছিলো দেশটা। তার জাহাজের নাম ছিলো সান্তা রোজা, মাঝিমাল্লা আর যোদ্ধা মিলিয়ে লোক ছিলো দুশো পঁচাশিজন। দশটা দেশ থেকে যোগাড় করেছিলেন ওদেরকে। স্প্যানিশ জাহাজ আর ঔপনিবেশিকদের ওপর হামলা চালাতে পাঠানো হয়েছিলো তাঁকে। আলটা ক্যালিফোর্নিয়ার স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলেন তিনি। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেন মনটিরে অঞ্চল, পাবলো সোলার গভর্নরকে পরাজিত করেন, তারপর আসেন লস অ্যাঞ্জেলেসে হামলা চালাতে…
গুড! ভেরি গুড! হাততালি দিলেন মেজর। রবিনের দিকে ফিরে বললেন, তুমি কিছু বলবে?
হঠাৎ বাধা পেয়ে থমকে গেল কিশোর। চোখ মিটমিট করছে। মেজরের এই আচরণে খুবই অবাক হয়েছে সে। মুসার দিকে তাকালো। সে-ও তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ডন স্যাবাসটিয়ান অ্যালভারোর গল্প আরম্ভ করলো রবিন। কিন্তু মাঝপথে আসার অনেক আগেই হাত তুললেন মেজর। দারুণ! চমৎকার! ভালো ভালো গল্প নিয়ে এসেছে তোমরা। টেপে রেকর্ড করে রেখেছে নিক। পরে আবার বাজিয়ে শুনবো আমরা। তারপর যোগাযোগ করবো তোমাদের সঙ্গে।
যোগাযোগ করবেন? ভুরু কোঁচকালো মুসা।
কিন্তু বিজ্ঞাপনে লিখেছেন…
হেসে কিশোরকে থামিয়ে দিলেন মেজর। আমরা ওটুকু শুনেই ঠিক করবো, কার গল্প নেয়া যায়। তারপর পুরোটা শোনার জন্যে ডেকে পাঠাবো। এক ঘন্টার জন্যে পঁচিশ ডলার, কম তো না। ভালোমতো না শুনে দিই কি করে, তোমরাই বলো? ও হ্যাঁ, যাওয়ার সময় রিগোকে বলো পরেরজনকে পাঠিয়ে দিতে, প্লীজ।
মেজরের ব্যবহারে থ হয়ে গেছে তিন গোয়েন্দা। গেটের বাইরে বেরিয়ে রিগোকে জানালো তার মনিবের নির্দেশ। সারি দিয়ে অপেক্ষা করছে গল্প বলিয়েরা, তাদের পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে এগোলো ওরা। সাইকেলগুলো ঠিকমতোই রয়েছে।
প্রথমে মুখ খুললো মুসা, বিষ ঝাড়লো, আমাদেরকে ঠকিয়েছে!
জ্বলে উঠলো রবিন, বিজ্ঞাপনে বলেছে অন্য কথা! যে কেউ গল্প শোনালেই টাকা দেবে বলেছে!
হুম! আনমনে মাথা নাড়লো কিশোর। ভাবছে কিছু।
প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো! রবিন বললো।
শুরু করেছিলাম তো, বললো মুসা। পাত্তাই দিলো না!
হ্যাঁ। বড়দেরকে এভাবে ঠকাতে পারতো না। আমরা ছেলেমানুষ বলেই…
বড়দেরকে টাকা দিলে তখন গিয়ে ধরবো মেজরকে! দুই সহকারীর মুখোমুখি হলো গোয়েন্দাপ্রধান। চলো, মেজরের ওপর নজর রাখবো।
.
০৩.
সাইকেলগুলো যেখানে আছে সেখানেই রেখে, দৌড়ে দেয়াল ঘুরে চত্বরের পেছনে চলে এলো তিন গোয়েন্দা। দেয়ালে চড়ে বসলো। দোকানগুলোর পেছনে। পুরনো একটা ওক আর একটা জ্যাকারাণ্ডা ডালপালা ছড়িয়েছে, ওসবের আড়ালে মোটামুটি লুকিয়ে থেকে দৃষ্টি দিলে মেজরের ঘরে। আরেকটা ছেলের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। জানালা বন্ধ, তার ওপর এয়ারকুলারের গুঞ্জন, ভেতরের কথা কিছুই। শুনতে পেলো না গোয়েন্দারা। তবে কি ঘটছে, আন্দাজ করতে একটুও অসুবিধে হলো না।
দেখো! নিচু গলায় বললো মুসা।
তিনজনেই দেখলো, ঘরের ছেলেটার চোখে হঠাৎ বিস্ময় দেখা দিয়েছে। তর্ক শুরু করলো। একরকম জোর করেই তাকে ঠেলে বের করে দিলেন মেজর।
হু, মাথা দোলালো রবিন, শুধু আমাদের সঙ্গেই এরকম করেনি।
কিশোর বললো, এই, টনির ওপর চোখ রাখো!
রাখছিই তো, মুসা বললো। আর কি দেখবো?
দেখোই না কি করে।
পনেরো-ষোল বছরের একটা ছেলে ঘরে ঢুকলো। কথা বলতে আরম্ভ করলো। কয়েক মিনিট শুনেই তাকে বের করে দিলেন মেজর। ছেলেটা বেরিয়ে যেতেই টেপ রেকর্ডারের একটা বোতাম টিপলো টনি। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার আরেকটা বোতাম টিপে মাইক্রোফোনটা রেডি করলো। পরের ছেলেটা যখন এলো, আবার ঘুরতে শুরু করেছে মেশিনের টেপ।
রিওয়াইন্ড করে নিয়ে আবার রেকর্ড করছে, মুসা বললো ধীরে ধীরে। কি দেখতে বললে বুঝলাম না…
বুঝেছি! বলে উঠলো রবিন। বার বার একই কাজ করছে। একটা। ফিতাকেই টেনে টেনে বার বার তাতে রেকর্ড করছে!
এবং, যোগ করলো কিশোর, আগের বার যেটা রেকর্ড করছে, পরের বারই সেটা মুছে ফেলছে।
মুছে ফেলছে? হাঁ হয়ে গেছে মুসা। তারমানে আমরা যা বলে এসেছি, সেসবও মুছে ফেলেছে?
কারো কথাই রাখছে না, সেকেণ্ড, সব মুছে ফেলছে।
তাহলে আবার ডাকবে কিভাবে?
ডাকবে না, জবাব দিলো রবিন।
ভালো প্রশ্ন করেছো, কিশোর বললো। কেন…, সতর্ক হয়ে গেল সে। এই একজন বড় মানুষ! দেখা যাক, এবার নতুন কিছু করে কিনা?