কিন্তু কিশোর, রবিন বললো, যদি ওরা জানেই ওগুলো গুপ্তধন নয়, তাহলে…
হ্যাঁ, রবিন, মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো কিশোর, ঠিকই ধরেছো। কেন তাহলে বিনা প্রতিবাদে জেলে চলে গেল চোরের দল? পুলিসকে কিছুই বললো না? এই তো? কেন ভিকটরকে মাল নিয়ে পালাতে দিলো, এটাও নিশ্চয় তোমার প্রশ্ন। সহজ জবাব, চোরাই মাল। পুলিশে জেনে গেলেই সব খোয়াতে হতো। তাই চুপ করে গিয়েছিলো মেজর। আর তখনই পুরো সত্যটা বুঝে গেছি আমি।
ভিকটরের হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা। সেই অবস্থায়ই ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল কিশোরের ওপর। তাকে যখন আটকে ফেলা হলো, গালাগাল করতে লাগলো। চেঁচিয়ে বললো, বিশ্বাস করো না ওর কথা! ওটা একটা মিথ্যুক! সব বানিয়ে বলছে!
কেউ কান দিলো না তার কথায়।
সত্যটা কি, কিশোর? জিজ্ঞেস করলো পিটার।
মেজর নিরেক আর তার চেলারা জানে যে মালগুলো চোরাই। কারণ ওরাই। চুরি করে জমিয়েছে ওগুলো। ভিকটরও জানে। কারণ সে-ও একই দলের লোক। মাল নিয়ে পালিয়েছিলো ভিকটর, সেগুলো খুঁজতেই এসেছে মেজুর আর তার চেলারা। আবার না ওগুলো বের করে নিয়ে ভিকটর পালিয়ে যায়, সেজন্যই দিন রাত তার ওপর চাখ রাখা হতো। আসলে, সমস্ত মাল হাতিয়ে নিয়ে টাওয়ারে এসে লুকিয়েছিলো সে। তার জানা ছিলো, লুকানোর চমৎকার জায়গা ওটা।
তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারকে। দলবল নিয়ে পৌঁছে গেছেন তিনি।
সেদিকে তাকিয়ে আরেকবার নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসে উঠলো ভিকটর। চোখ পাকিয়ে কিশোরকে বললো, তোমাকে…তোমাকে দেখে নেবো আমি…
.
কয়েক দিন পর। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এসেছে তিন গোয়েন্দা, বেগুনী জলদস্যুর কেসের রিপোর্ট নিয়ে।
মন দিয়ে ফাইলটা পড়লেন পরিচালক। তারপর মুখ তুললেন। বুঝলাম। তবে একটা কথা এখানে লেখোনি। কি দেখছিলো সেদিন মেজর? নকশা?
ম্যাপ, স্যার, জবাব দিলো কিশোর। পাইরেটস কোভের। ওতে অবশ্য সুড়ঙ্গটা দেখানো নেই।
কিন্তু রিপোর্টে বলেছে, জানা না থাকলে ওই সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মেজর নিরেক কি করে পেলো?
হাসলো কিশোর। কয়েক বছর আগে একথা ভিকটরই জানিয়েছিলো মেজরকে। পুলিসের ভয়ে পালিয়ে আত্মগোপন করে আছে তখন ওরা। ভিকটর। অবশ্য তখনও জানতো না, সুড়ঙ্গটা ঠিক কোথায় আছে। গল্প করতে করতে এমনি বলেছিলো আরকি মেজরকে, পূর্বপুরুষের কাহিনী বলতে গিয়ে। তারপর একদিন। মাল হাতিয়ে নিয়ে পালালো ভিকটর। মেজর জানতো না, টাওয়ারটা কোথায়। তবে খুঁজে খুঁজে বের করে ফেললো। অনেক দিন লেগেছে খুঁজে বের করতে। এসে দেখলো, সত্যি, টাওয়ারেই এসে উঠেছে ভিকটর। বুঝতে অসুবিধে হলো না, মালগুলো টাওয়ারেই লুকিয়েছে ভিকটর। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না মেজর। কারণ তাহলে অন্য জায়গায় মাল সরিয়ে ফেলতে পারে। বোটহাউসে ঢুকে বের। করলো সুড়ঙ্গমুখ। মাটি কেটে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে টাওয়ারে ঢোকার পথ করে। নিলো।
তারপর?
ওরা মালগুলো পাওয়ার আগেই টের পেয়ে গেল ভিকটর, জবাব দিলো এবার রবিন। সতর্ক হয়ে গেল। শেষে মাল নেয়ার জন্যে শেষবার যখন ঢুকলো মেজর আর নিরেক, তখন জেসন আর কিশোরকে নিয়ে তৈরি হয়ে আছে সে, বাধা। দেয়ার জন্যে।
মেজর আর রিগোকে ঠেকালো বটে ভিকটর, রবিনের কথার খেই ধরলো কিশোর, কিন্তু আমরা তখন জেনে গেছি। বুঝলো, শেষ রক্ষা করতে হলে একটাই উপায়, পুলিসের হাতে ধরা দেয়া। ভিকটরকে মালগুলো নিয়ে পালাতে দেয়া। তাহলে শেষমেষ ভাগ একটা পাবার আশা আছে। সেরকমই চুক্তি হয়েছে ওদের মধ্যে, স্টোররুমে।
ওই চুক্তির কোনো অর্থ নেই, মাথা নাড়লেন পরিচালক। ভিকটরকে বিশ্বাস। করা যায় না।
না, তা যায় না, এতোক্ষণে মুখ খুললো মুসা। তবে এছাড়া আর কিছু করারও ছিলো না ওদের। ভিকটর নিয়ে পালালে পাওয়ার কিছুটা অন্তত আশা আছে। কিন্তু পুলিসের হাতে পড়লে একেবারেই নেই। তাই ওই বুদ্ধি করেছিলো।
হু। একমুহূর্ত চুপ করে রইলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তাহলে বেগুনী। জলদস্যুর গুপ্তধন আসলেই নেই?
আপাতত তো পেলাম না, মুচকি হাসলো কিশোর। তবে তদন্ত আমরা চালিয়ে যাবো ভাবছি। বলা যায় না, কিছু বেরিয়েও যেতে পারে।