তোতলাচ্ছো কেন, রামছাগল! শোনো, ছেলেদুটোকে আরও শক্ত করে বাঁধো। ওদের ওয়াকি-টকিগুলো কেড়ে নিয়ে চলে এসো আমাদের কাছে, সুড়ঙ্গ দিয়ে। এখুনি। গাধামি করবে না।
না, বস। এখুনি আসছি, বলতে বলতেই রবিনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো রিগো।
তাড়াহুড়োয় রবিন আর মুসাকে আরও শক্ত করে বাঁধার কথাও ভুলে গেল সে। ওয়াকি-টকিদুটো বের করে নিয়েই বেরিয়ে গেল ভ্যান থেকে। মুহূর্ত পরেই পানিতে শোনা গেল তার ভারি পায়ের আওয়াজ।
রিগো বেরিয়ে যাওয়ার মিনিটখানেক পরেই খুলে গেল বোটহাউসের দরজা। ভ্যানে এসে ঢুকলো জেসন। মুসা আর রবিনের বাঁধন খুলে দিলো দ্রুতহাতে। হেসে জানালো, মেজর আর টনিকে কিভাবে স্টোররুমে আটক করেছে।
গুপ্তধন পেয়ে গেছেন মিস্টার ইভানস? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো রবিন।
পেয়ে গেছেন। আমিও খোঁজা শুরু করার আগেই।
আপনিই তাহলে বেগুনী জলদস্যু সেজে এসেছিলেন সেদিন। আমাদের ভয় দেখিয়েছেন, মুসা বললো।
একটা জিনিস ফেলে গিয়েছিলাম, আরেক দিকে তাকিয়ে বললো জেসন। সেটা নিতে এসেছিলাম আড্ডায়, রাতের বেলা। বোটহাউস থেকে বেরোতে দেখলাম কয়েকজন লোককে। সন্দেহ হলো। খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম। সুড়ঙ্গমুখটা খুঁজে বের করতে দুদিন লেগেছে। লুকিয়ে থেকে শুনে বুঝলাম, কোনো মূল্যবান। জিনিস খুঁজছে ওরা। আমিও ওই কাজে লেগে পড়লাম। তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বিশ্বাস করো, কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।
বাদ দিন ওসব কথা, রবিন বললো। তাড়াতাড়ি বেরোনো দরকার। রিগো ফিরে আসতে পারে।
টাওয়ারের কাছে অন্ধকারে অপেক্ষা করছে কিশোর। ওদেরকে আসতে দেখেই ওয়াকি-টকির ওপর কুঁকলো। এই গাধা, শুনছো?, বোটহাউসে ফিরে যাও। তোমার আসার আর দরকার নেই। গিয়ে পাহারা দাও ওদের। যদি ওরা পালায়, পিঠের ছাল তুলবো আমি তোমার! জলদি যাও! বলে আপনমনেই নীরবে হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান।
কিশোরের কথা মুসার কানেও গেছে। কাছে এসে হাসলো সে। আহারে, বেচারার জন্যে কষ্টই লাগছে আমার!
এখন কি করবো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
পুলিসের কাছে যেতে হবে, কিশোর জবাব দিলো।
.
পুলিস এসে আটক করলো মেজর নিরেক আর টনিকে। পাহারা দিচ্ছিলো আড্ডার বাইরে গুন, তাকেও ধরলো। কিন্তু রিগোকে ধরতে পারলো না। যেই এসে সে দেখেছে, মুসা আর রবিন নেই, আর দেরি করেনি। ভ্যান নিয়ে পালিয়েছে মেজরের ভয়ে। বোর্টহাউসের দরজা লাগানো ছিলো, সেটা খোলার প্রয়োজন মনে করেনি। গাড়ি দিয়ে গুতো মেরে দরজা ভেঙেই পালিয়েছে।
আলমারি থেকে কালো একটা বাক্স বের করলো ভিকটর। ডালার ওপরে তামার পাত বসিয়ে নাম লেখা রয়েছেঃ লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম ইভানস। একটা টেবিলে বাক্সটা রেখে ডালা তুললো সে।
খাইছে! বলে উঠলো মুসা।
গলা বাড়িয়ে এগিয়ে এলো পিটার, ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে।
সোনা আর রূপার নানারকম মূল্যবান অলংকার আর তৈজসপত্রে বাক্সটা। বোঝাই। ঝকঝক করছে ঘরের ম্লান আলোয়।
একটা আঙটি তুলে নিলো কিশোর। বাক্সের গায়ে আঙুল বুলিয়ে দেখলো।
কয়েক লাখ ডলারের জিনিস, বিড়বিড় করলো রবিন।
পুলিসের সঙ্গে ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারও এসেছেন। বললেন, আপনি যখন পেয়েছেন, আপনারই থাকবে জিনিসগুলো। হারানোর ভয় নেই। কারণ আপনি। উইলিয়াম ইভানসের বংশধর। তবে সেটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে কোর্টে। ভালো দেখে একজন উকিল রাখবেন, হয়ে যাবে।
আপনার পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ, বললো বটে ভিকটর, কিন্তু অস্বস্তি গেল না তার।
বন্দিদেরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পুলিস। ক্যাপ্টেন রইলেন শুধু। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আরেকটা রহস্যের সমাধান করলে। তোমাদের নিয়ে গর্বই হয় আমার। বাড়ি যাবার সময় হয়েছে নিশ্চয়। যাবে না? লিফট দিতে পারি।
আমার তরফ থেকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ওদের, ভিকটর বললো। চোর গুলোকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। কাল আসবে, নাকি তোমরা? আমাকে সাহায্য করতে? বাক্সটা সরিয়ে ফেলা দরকার। চোরগুলো জামিনে মুক্তি পেয়েই আবার এগুলো কেড়ে নিতে আসবে।
কাল দুপুরের আগে জামিন পাচ্ছে না ওরা, চীফ বললেন। ততক্ষণে বাক্সটা সরিয়ে ফেলতে পারবেন। কোনো ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে রেখে দিলেই হলো।
কিন্তু রিগো? সে তো ছাড়া রয়েছে। যদি আসে?
ও আসবে না। যা ভীতু লোক। আশা করছি, ওকেও খুব শীঘ্রি ধরে ফেলতে পারবো। আপনার ভয় নেই।
আমরা কি সাহায্য করতে পারি? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
জিনিসগুলোর একটা তালিকা করবো, ভিকটর বললো। তোমরা সাহায্য করলে তাড়াতাড়ি হবে।
তা করতে পারি।
আমিও করবো! বলে উঠলো পিটার। জলদস্যুর লুটের মাল! ঘটতেও ভালো লাগবে আমার!
পিটারের উত্তেজিত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো ভিকটর। বেশ, করবে। সাহায্য। আমার আপত্তি নেই। বেশি লোক পেলে বরং ভালোই হয়। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরলো সে। তোমাদেরকে একটা করে পুরস্কার দিতে চাই। নেবে তো? বলে জবাবের অপেক্ষা না করেই বাক্স থেকে একটা দামী আঙটি বের করে দিলো মুসাকে।
দ্বিধা করলো মুসা। এভাবে জিনিস নিতে ভালো লাগে না তার। কিশোরের দিকে তাকালো পরামর্শের আশায়। মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আঙটিটা নিলো মুসা। রবিন আর কিশোরকেও একটা করে আঙটি দিলো ভিকটর।
.
২১.
পরদিন সকাল আটটায় লাফিয়ে উঠে বসলো মুসা। কানে আসছে আঁচড়ানোর শব্দ। বিছানায় থেকেই ভালো করে চেয়ে দেখলো, জানালার কাঁচে ঘষা লাগছে হএকটা ডাল। হেসে আবার শুয়ে পড়লো। ঘুম যায়নি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার লাফ দিয়ে উঠলো। তার জানালার কাছে তো কোনো গাছ নেই! বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে এলো জানালার ধারে।