সত্যি বলতে কি, আমি এখনও জানি না, আইনত ওগুলো কার প্রাপ্য। যতোদিন সেটা না জানবো, গোপনই রাখতে চাই খবরটা।
এতোদিন পর যার হাতে পড়বে তারই হওয়ার কথা। আর আপনার তো বিশেষ অধিকার রয়েছে। জিনিসগুলো আপনার পূর্বপুরুষের।
চোর-ডাকাত যারই হাতে পড়বে, তার? জেসনের প্রশ্ন।
জানি না, ভিকটর বললো। সেজন্যেই আর কারও হাতে পড়তে দিতে চাই না। অন্তত মেজরের হাতে তো নয়ই।
এখুন প্ল্যানটা কি বলে ফেলুন, তাড়া দিলো কিশোর। সময় বেশি নেই।
সেলারেই ঢুকবে মেজর, কোনো সন্দেহ নেই। খালি হাতে নিশ্চয় আসেনি, পিস্তল-টিল থাকবে। এখানে এসে তোমাকে দেখলে অবাক হবে না। কিন্তু জেসন আছে, কল্পনাই করবে না। সেজন্যেই ওকে সিঁড়ির আড়ালে লুকাতে বলছি। মেজরকে বলবো আমি গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলো বের করে দিতে বাধ্য করবে আমাকে সে। দেখাতে নিয়ে যাবো। ওই সময়টায় তোমার কথাও হয়তো ভুলে যাবে সে। ওই সুযোগে তুমি বেরিয়ে যাবে স্টোররুম থেকে। বাইরে, থেকে তুমি আর জেসন মিলে দরজাটা লাগিয়ে দেবে। আর তুমি যদি বেরোতে না। পারো, জেসন একাই লাগাবে।
কিন্তু আপনি তো ওদের সঙ্গে ভেতরে আটকা পড়বেন।
আমার কাছে পিস্তল আছে। স্টোররুম থেকে বিরাট একটা পুরনো তালা এনে। জেসনের হাতে দিলো ভিকটর। একেবারে তালা লাগিয়ে দেবে। আমার জন্যে ভেবো না। ওদেরকে ঠিকই আটক করতে পারবো আমি। আটকে রাখবো। তোমরা তখন গিয়ে মুসা আর রবিনকে মুক্ত করবে। ওরা গিয়ে পুলিস নিয়ে। আসবে।
ওই যে, আসছে, ফিসফিস করে বললো জেসন।
যাও, সিঁড়ির নিচে লুকাও গিয়ে। কিশোর, তুমি আমার পেছনে থাকো।
ঘরের ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়ালো ভিকটর। খুলতে আরম্ভ করেছে সুড়ঙ্গের দরজা। বেগুনী জলদস্যু
পিস্তল হাতে ঘরে ঢুকলেন মেজর আর টনি। ভিকটর আর কিশোরকে দেখেছেন।
তিন নম্বর গোয়েন্দা তাহলে এখানে, মেজর বললেন। গুড। মিস্টার ইভানসও আছেন। আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার। যাকগে, খারাপ। হয়নি। মিস্টার ইভানস, কোনো চালাকি চাই না। মালগুলো আপনি পেয়ে গেছেন। জানি। নইলে আমি পেতাম। বলুন, কোথায় সরিয়েছেন?
শ্রাগ করলেন ভিকটর। যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, এমন ভঙ্গিতে বললেন, ঠিক আছে, কি আর করা! ছেলেগুলোর ক্ষতি হোক, এটা চাই না। স্টোররুমে পেছনের দেয়ালের কাছে একটা আলমারি আছে, তার মধ্যে।
উত্তেজনায় হুঁশ হারিয়ে ফেললো টনি। সোজা দৌড় দিলো আলমারির দিকে। বলতে না বলতেই যে এতো সহজে রাজি হয়ে গেছে ভিকটর, কেন হলো, ভাবলো না একবারও। পিস্তল ঢুকিয়ে ফেলেছে হোলস্টারে।
কিন্তু মেজরের মাথা এতোটা ফাঁকা নয়। টনি! বলে চিৎকার করে উঠলেন। তিনি। মাঝপথে থমকে দাঁড়ালো টনি। ভিকটরের দিকে পিস্তল নাচালেন তিনি। আপনি আগে যান, মিস্টার ইভানস। হাঁটুন।
ঘুরে দাঁড়ালো ভিকটর। ঠিক পেছনেই রইলো টুনি আর মেজর। একবারের জন্যেও তার চওড়া কাঁধ থেকে চোখ সরালেন না মেজর। কিশোরের দিকে নজরই নেই দুজনের কারো।
নিঃশব্দে বেরিয়ে চলে এলো কিশোর। সিঁড়ির আড়াল থেকে বেরোলো জেসন। দুজনে মিলে, ঠেলে বন্ধ করে দিলো ভারি পাল্লাটা। তালা লাগিয়ে দিলো।
দরজা যে বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা বুঝতেও দেরি করে ফেললেন মেজর। তারপর শুরু হলো ভেতরে চেঁচামেচি, হট্টগোল। দরজায় জোর ধাক্কা পড়লো।
তার পর শোনা গেল ভিকট্টর ইভানসের কঠোর কণ্ঠ, খবরদার! পিস্তল ফেলো! নইলে খুলি ছাতু করে দেবো!
চলুন! জেসনকে বলেই আর দাঁড়ালো না কিশোর। সিঁড়ির দিকে ছুটলো।
.
২০.
ভ্যানের ভেতরে পড়ে রয়েছে রবিন আর মুসা। হাত-পা বাঁধা। ওদেরকে পাহারা। দিচ্ছে রিগো। সে নিজেই অস্বস্তিতে ভুগছে, বন্দি পাহারা দেবে কি। তার হাতের টর্চের কাঁপুনি দেখেই বোঝা যায়। মাঝে মাঝেই কিছু না করার জন্যে হুঁশিয়ার করছে বন্দিদের। শেষে একটা খচমচ আওয়াজ শুনে আর থাকতে না পেরে উঠে চলে গেল, বোটহাউসের বাইরে কেউ আছে কিনা দেখার জন্যে।
ফিসফিস করে উঠলো রবিনের ওয়াকি-টকি।
নথি, নিচু গলায় বললো মুসা, কিশোর! দেখো, সুইচটা অন করতে পারো। কিনা! তাহলে ট্রান্সমিট করতে পারবে।
হাত-পা বাঁধার আগে ওদের যার যার জিনিস আবার ফেরত দিয়েছে রিগো।
শরীর অনেক মুচড়ে-টুচড়ে, হাতের আঙুল কোনোমতে সুইচের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো রবিন। কাপড়ের ওপর দিয়েই সুইচ টিপে দিলো। বললো, রবিন বলছি!
রিগো আছে? ভেসে এলো কিশোরের কণ্ঠ।
বাইরে গেছে। কেউ আসছে কিনা দেখতে।
ওকে বলো, মেজর কথা বলতে চায়।
কিন্তু মেজরের কাছে তো ওয়াকি-টকি নেই। ও জানে।
বললো, আমারটা কেড়ে নিয়েছে।
মুসা ডাকলো, রিগো? মেজর ডাকছেন!
দুপদাপ করে ছুটে এসে ভ্যানে ঢুকলো হাতির বাচ্চা। কী?
মেজর আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, রবিন বললো।
কথা? চারপাশে তাকালো রিগো। মেজরকে দেখতে পেলো না।
ওয়াকি-টকিতে বলবেন, মুসা বুঝিয়ে দিলো।
ওহ্! শরীর ঢিল করলো রিগো। কিন্তু তিনি ওয়াকিটকি পেলেন কোথায়?
আমাদের আরেক বন্ধু আছে না, তারটা কেড়ে নিয়েছেন। সে-ও ধরা পড়েছে। আমাদের মতোই।
ভালো হয়েছে…
হঠাৎ শোনা গেল ভারি কণ্ঠ, এই বলদ, এতো কথা বলছো কেন? কথা বলতে বলেছি, বলো?
অবাক হলো না মুসা আর রবিন। কিশোরের অভিনয় ক্ষমতার কথা জানা, আছে ওদের। তবে রিগো চমকে গেল। ব-ব্বলুন, বস্!