দোকানে একটা নকশা দেখছিলো, মনে আছে? রবিন বললো। মনে হয় ওটাতেই রয়েছে সুড়ঙ্গের নির্দেশ।
হতে পারে, একমত হলো কিশোর।
বনের ভেতর দিয়ে জেটিতে চলে এলো ওরা। প্রথম অভিযান শেষ করে ফিরে এসেছে ব্ল্যাক ভালচার। যাত্রীরা নেমে গেছে, তবে ক্যাপ্টেন ফিলিপ, পিটার আর জেসন এখনও রয়েছে ডেকে। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে ভিকটরকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন। বলে উঠলেন, এই, তোমাদেরকে না বলেছিলাম…
হেসে অভয় দিলো ভিকটর, হয়েছে হয়েছে, ধমকাতে হবে না। ওরা কি করছে, জানি আমি। এখন আমিও চাই রহস্যটার সমাধান হোক। কি যেন নাম বললে? মেজর… মেজর…
মেজর নিরেক, ধরিয়ে দিলো কিশোর। ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো, শো কখন শুরু করেছিলেন, স্যার?
পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে। মোনতা জেসনের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। দূরে তাকিয়ে রয়েছে লোকটা। দেরিটা হলো ওর জন্যে। ওকে বাদ দিয়েই শুরু করে দিয়েছিলাম আমরা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে হাজির হলো, আমরা তখন প্রথম দ্বীপটার কাছে চলে গেছি।
খবরটা আর চেপে রাখতে পারলো না মুসা। কোথায় খোঁড়া হয়েছে, দেখে। ফেলেছি, স্যার আপনাকে আর পিটারকে কেন সরিয়ে রাখতে চেয়েছে, তা-ও বোঝা গেছে। বোটহাউস থেকে টাওয়ারে ঢোকার একটা সুড়ঙ্গ আছে। ওটার। ভেতরেই খুঁড়েছে ওরা, মাটি আর পাথর পরিষ্কার করেছে।
টাওয়ারে ঢোকার পর থেকে কি কি ঘটেছে খুলে বললো ছেলেরা।
জেসনের দিকে তাকালো কিশোর। আপনার এতো দেরি হলো যে আজ?
গাড়িটা ট্রাবল দিচ্ছিলো, বলেই মুখ কালো করে কিশোরের মুখোমুখি হলো নোনতা জেসন। তাতে তোমার কি?
তার কথার জবাব না দিয়ে ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, বেগুনী জলদস্যুর পোশাকটা কোথায় রাখেন, স্যার?
দ্বীপে। একটা ছাউনিতে। কাজের সময় হাতের কাছে পেয়ে যায় ওরা।
তালা দেয়া থাকে?
নাহ।
তারমানে যে খুশি গিয়ে পরতে পারে?
পারে।
নিরাশ মনে হলো কিশোরকে। পরক্ষণেই উজ্জ্বল হলো আবার চেহারা। যা-ই। হোক, এখন আমরা জানি, কোথায় খুঁড়ছেন মেজর। কি খুঁজছেন জানি না। টাওয়ারে হয়তো লুকানো আছে কিছু। সুড়ঙ্গেও থাকতে পারে। মিস্টার ইভানস, আপনি কিছু জানেন?
শ্রাগ করলো ভিকটর। মুখ বাঁকালো। মাথা নেড়ে বললো, না।
আপনি? ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
বেগুনী জলদস্যুর রেখে যাওয়া কোনো জিনিস হয়তো খুঁজছে। লোকে তো ঘাঁটাঘাঁটি কম করেনি একশো বছর আগে। উপদ্বীপের কোথাও খোঁজা বাদ রাখেনি।
তার রেখে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পরে অবশ্য অনেক চোর-ডাকাত আস্তানা গেড়েছিলো এখানে। তারাও রেখে যেতে পারে কিছু।
রবিন বললো, যা-ই রেখে যাক, এখনও নিশ্চয় আছে। কারণ খোঁজাখুঁজি চলছেই।
হ্যাঁ, কিশোর বললো, কাল রাতেও এসেছিলেন মেজর। মুসা, দেখগে তো পাহারা এখনও চলছে কিনা?
মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুতপায়ে গেটের দিকে রওনা হয়ে গেল গোয়েন্দা সহকারী। ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকালো ভিকটর। পাহারা? কিসের পাহারা?
পাহারা দেয়ার লোক রেখে গেছেন মেজর নিরেক, জানালো রবিন। দিন রাত পাহারা দেয় বেগুনী জলদস্যুর আড়া। কখনও একজন, কখনও দুজন, থাকেই। চোখ রাখে।
চোয়াল ডললো ভিকটর। সারাক্ষণই?
এই আরেকটা ব্যাপার, জবাব দিলো কিশোর, আমাকে অবাক করেছে। মেজরের যেন ভয়, এখান থেকে লুকানো জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যাবে কেউ। হতে পারে, অন্য কেউও ওই জিনিসের পেছনে লেগেছে। ভয়টা হয়তো সেকারণেই পাচ্ছেন।
বেগুনী জলদস্যুর পোশাক পরা লোকটা না তো? রবিন বললো।
ফিরে এলো মুসা। আইসক্রীম ভ্যানটা আছে।
আজ রাতে আবার গল্প শোনাতে যাবেন, স্যার? ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
নিশ্চয় যাবো, বাবার হয়ে আগ বাড়িয়ে জবাবটা দিলো পিটার।
তাহলে, বেশ জোর দিয়ে বললো কিশোর, আজ রাতে আবার আসতে হবে আমাদের। সারাটা রাতই জেগে থাকতে হতে পারে। বাড়ি গিয়ে এখন কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া দরকার।
ভিকটর আর জেসনের দিকে তাকালো সে। আপনাদেরকে একটা অনুরোধ করবো। আজ রাতে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে আপনাদের। মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। তখন সাহায্য লাগবে। একা হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারবো না আমরা।
.
১৮.
আবার বেগুনী জলদস্যুর আড্ডায় এসে ঢুকলো তিন গোয়েন্দা। টর্চ আর ওয়াকি টকি নিয়ে এসেছে। ওরা এসে দেখলো, শেষ শো-এর দর্শকরা বেরিয়ে যাচ্ছে।
ঘন্টাখানেক পর নোনতা জেসন এসে ঢুকলো ট্রেলারে।
নির্দিষ্ট সময়ে গল্প রেকর্ড করার জন্যে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ।
সময় হয়েছে, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর।
ট্রেলার থেকে বেরিয়ে ছায়ায় ছায়ায় এগোলো ওরা। কালো কাপড় পরে। এসেছে, প্রহরীর চোখে পড়বে না সহজে।
বোটহাউসে এসে ঢুকলো চারজনে, তিন গোয়েন্দা আর নোনতা জেসন। মই বেয়ে পাল রাখার তাকে উঠে পড়লো রবিন, মুসা আর জেসন। কিশোর নেমে পড়লো পিয়ারের নিচের পানিতে। সুড়ঙ্গমুখের তক্তা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দ্রুত চলে এলো শেষ মাথায়। লিভার চেপে গোপন দরজা খুলে ঢুকলো টাওয়ারের সেলারে। ওখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে ভিকটর ইভানস।
তাকের ওপরে ঘাপটি মেরে রয়েছে মুসা, রবিন আর জেসন। জুনের ঠাণ্ডা রাত। বাইরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের শব্দ হচ্ছে। গাঁয়ের ভেতরে একটা কুকুর। ডাকলো। পানির কিনারে দূরে কে যেন গান গাইছে চড়া বেসুরো গলায়। একটা বিমান উড়লো। একটা ভ্যানের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ হলো। শব্দটা এলো। গেটের কাছ থেকে।