নিশ্চয় ওদেরকে ধরে ফেলেছে! জোরে কথা ভিকটরও বলছে না।
বাঁচাতে হবে ওদের! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
আস্তে, আস্তে কথা বলো! বোকামি করে বিপদ বাড়াবে…
মুসা! লোকটা কি চলে গেছে? আচমকা ওয়াকি-টকিতে ভেসে এলো যেন বিদেহী কারো কণ্ঠস্বর, মুসার সে-রকমই মনে হলো। ওকে দেখেছো?
কিশোর! কোথায় তুমি?
টাওয়ারের ওপরে। কেন, দেখতে পাচ্ছো না?
ওপর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা আর ভিকটর। অবাক। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।
কই, কোথায়? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
হাসলো কিশোর। আরও ওপরে, মুসা। জানালার ওপরে।
এই বার দেখতে পেলো মুসা। রবিন আর কিশোর দুজনেই হাসছে। জানালার ওপরে বেরিয়ে থাকা কার্নিশে উঠে গেছে ওরা।
উঠলে কি করে ওখানে!
ভয় পেয়ে কতো কিছুই তো করে বসে মানুষ, কিশোর জবাব দিলো। কথা সেটা না। ওঠার সময় তো উঠেছি, এখন নামি কি করে?
মাটি থেকে চারতলা ওপরে, ছাতের কাছাকাছি উঠে আছে কিশোর আর রবিন। ওখান থেকে পড়লে—নিজের অজান্তেই একটা গোঙানি বেরিয়ে এলো মুসার মুখ থেকে।
মুসা, রবিনের কণ্ঠ, তোমার সঙ্গে আরেকজন কে?
মিস্টার ভিকটর ইভানস। তিনি ভালো মানুষ, ভয়ের কিছু নেই।
ওয়াকি-টকিতে জানালো ভিকটর, তোমরা কি করছো, সব বলেছে আমাকে মুসা। অবশ্যই আমি সাহায্য করবো তোমাদেরকে। লোকটা কি চলে গেছে?
তিনতলায় নামতে তো শুনলাম, রবিন বললো। একেবারে নিচে নামলো। কিনা বুঝতে পারছি না।
ঠিক আছে, দেখছি আমরা। তোমরা যেভাবে আছো, থাকো।
সাবধানে টাওয়ারের সামনের দরজার দিকে এগোলো ভিকটর আর মুসা। কোনো শব্দ নেই। পেছনের দরজাটা তেমনি ছিটকানি লাগানো রয়েছে। সামনের দরজা দিয়ে লোকটা বেরোলে ওদের চোখে পড়তোই। সেলার, দোতলা আর তিনতলায় খুঁজে দেখা হলো। নেই লোকটা। ওপর তলায় উঠে এসে দেখলো, পেছনের একটা জানালা বেয়ে সবে নেমেছে কিশোর আর রবিন। মুসাকে দেখে হাসলো।
উঠলে কি করে ওখানে? জিজ্ঞেস করলো ভিকটর।
আসুন, দেখাচ্ছি, ডেকে একটা জানালার কাছে তাকে নিয়ে গেল রবিন। জানালার বাইরেটা দেখিয়ে বললো, ওগুলো বেয়ে।
মুসা আর ভিকটর, দুজনেই গলা বাড়িয়ে দিলো। দেয়ালের গায়ে জানালার লাগোয়া কতগুলো পাথর এমনভাবে বের করা, মইয়ের মতো ওগুলো বেয়ে উঠে যাওয়া যায়।
নিশ্চয় ছাতে যাওয়ার পথ ওটা, কিশোর বললো। আপনার পূর্বপুরুষরা বানিয়ে রেখে গেছেন, ইচ্ছে করেই। যাতে সময়ে কাজে লাগে।
হুঁ, মাথা দোলালো ভিকটর, তোমাদের যেমন লাগলো।
যদি পড়ে যেতে! অনেক নিচে মাটির দিকে তাকিয়ে এখনও ভয় পাচ্ছে। মুসা।
তখন কি আর অতো কথা মনে ছিলো, রবিন বললো। লোকটা উঠে আসছে। লুকানোর কোনো পথ দেখছি না। খুঁজতে খুঁজতে কিশোরের চোখে। পড়লো প্রথমে ওই মই। আর কি, উঠে গেলাম। ওই সময় তুমি হলেও পারতে।
তা ঠিক।
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিশোর। খাড়ির দিকে চোখ। রওনা হয়ে। গেছে ব্ল্যাক ভালচার। প্রথম শো, কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। অন্য দিনের চেয়ে আজ যাত্রী বেশি, তার কারণ বোধহয় দুটো শো-এর লোক একবারে উঠেছে। জেসন এসেছে। পিটার আর সে জলদস্যু সেজে আক্রমণের পাঁয়তারা করছে।
হঠাৎ ফিরে তাকালো সে। কাউকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলে?
শুধু বেড়ালটাকে, মুসা জানালো।
সেজন্যেই আমাদের বেগুনী সাহেব ভেবেছেন, সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি আমরা। বেরোতে দেখেনি তো, তাই। ভেবেছে, ভয়ে লেজ তুলে পালিয়েছি আমরা। এবং তাতেই সে খুশি।
শুধু কি আমাদের তাড়িয়েই সে খুশি? রবিনের প্রশ্ন।
তাছাড়া আর কি? মারতে নিশ্চয় চায়নি।
লোকটা কে, চিনেছো? জিজ্ঞেস করলো ভিকটর।
না, স্যার। মেজর নিরেক নয়। রিগোও নয়। গায়ে-গতরে আপনার সমান, কিন্তু আপনি তো ছিলেন মুসার সঙ্গে। তারমানে আপনিও নন। এটি
ভাগ্য ভালো, ছিলাম, হাসলো ভিকটর। নইলে আমাকেই সন্দেহ করে বসতে।
তা করতাম।
শুধু কি তোমাদের তাড়াতেই এসেছিলো সে?
মনে হয়, এসেছিলো অন্য উদ্দেশ্যে। আমাদের দেখে তাড়া করেছে আরকি। আমার ধারণা, কিছু লুকানো রয়েছে টাওয়ারে, সেটা খুঁজতেই এসেছিলো।
কি লুকানো আছে, কিশোর? রবিনের জিজ্ঞাসা। মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন খোঁজার কথা বলছিলে…
কি জিনিস, জানি না, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। তবে এখন মনে হচ্ছে, যা-ই থাকুক, মাটির তলায় নয় সেটা। লুকানো রয়েছে অন্য কোথাও।
তাহলে মাটি খুঁড়লো কেন? মুসার প্রশ্ন।
সেলারে গেলেই বোধহয় তার জবাব মিলবে। চলো, দেখিগে।
.
১৭.
বদ্ধ জায়গায় কাঠের সিঁড়িতে ওদের পায়ের শব্দ বড় বেশি হয়ে কানে বাজলো।
নথি, কিশোর বললো, লোকটার আসার শব্দ আমরা কখন পেয়েছি মনে আছে?,
নিশ্চয়ই। তখন স্টোররুমে ছিলাম। ঠিক পেছনেই গর্জে উঠলো লোকটা। মুখ ফিরিয়েই দেখি, প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়েছে।
ঠিক। তাহলে প্রথম আমরা শুনলাম গর্জন, স্টোররুমে, আমাদের পেছনে। এই যে এখন আমরা নামছি, কতো জোরে শব্দ হচ্ছে। অথচ লোকটার পায়ের। আওয়াজ কেন শুনতে পেলাম না?
হয়তো পা টিপে টিপে এসেছিলো।
অসম্ভব। ধাপগুলো নড়বড়ে, একটা চাপ লাগলেই কাঁচকাঁচ করে ওঠে। আরেকটা প্রশ্ন। মুসা, লোকটা যে ঢুকলো টাওয়ারে, কেন আমাদের হুঁশিয়ার করলে না?
দেখিইনি, সাবধান করবো কি?
ঠিক, আবার বললো কিশোর। তাহলে তুমি কাউকে টাওয়ারে ঢুকতে দেখোনি। আমি আর রবিন তার আসার শব্দ শুনিনি। রান্নাঘরের দরজা ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো।