তবে বোটহাউসে ভ্যান লুকানো সম্ভব, কিশোর বললো। রবিন ঠিকই বলেছে। দেখা দরকার।
দাঁড়াও, আবার বাধা দিলো রবিন। ভিকটর লোকটার মাথায় ছিট আছে। কাল আমাকে যেরকম করে ধরেছিলো! ক্যাপ্টেনকে নিয়ে আসা উচিত আমাদের।
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো কিশোর। তা-ও বটে।
ভিকটর এখন টাওয়ারে নেই, মুসা বললো। আমি ঢোকার সময় দেখলাম। পার্কিং লট থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চলো তাহলে, তুড়ি বাজালো কিশোর। এটাই সুযোগ।
হালকা বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলো ওরা, জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে আছেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ। কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা বলছেন। ঘড়ি দেখলেন একবার। গেটের কাছে টিকেট বুদটা খোলা রেখেছে এখনও মারিয়া। প্রথমে বোটহাউসের দিকে এগোলো ওরা। ডাঙার দিকের দরজাটা বেশ বড়, তালা নেই। দরজার ঠিক ভেতরেই কাঠের মেঝে, ভ্যান রাখা সম্ভব ওখানে। তবে টায়ারের চিহ্ন কিংবা তেলটেল পড়ে নেই। কালো পানির ওপর যেন ঠেলে বেরিয়ে আছে ডক, নৌকা বাঁধার জায়গা রয়েছে দুপাশে। একটা নৌকাও নেই। শেষ মাথায় দরজা ছিলো একসময় নৌকা ঢোকানোর জন্যে, তবে এখন এমনভাবে বসে গেছে পানিতে, ঢোকানোর আর উপায় নেই। ডকের ওপরে ছাতের কাছে। পাল রাখার জায়গা। ওখানে এখনও বেশ কিছু পাল, মাস্তুল আর দড়ি রয়েছে। ডকের নিচে কাঠের গায়ে ঢেউ ভাঙছে। সব কিছুই খুব স্বাভাবিক, মাটি খোঁড়ার চিহ্নই নেই।
টাওয়ারে যাওয়ার পথেও কোথাও খোঁড়ার চিহ্ন দেখা গেল না।
মুসা, কিশোর বললো, বনের ভেতর গিয়ে পাহারা দাও। ওয়াকি-টকি বের করে দিলো। নাও। ভিকটরকে আসতে দেখলেই হুঁশিয়ার করবে। সারাক্ষণ অন করে রাখবো আমাদের যন্ত্র।
টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে কিশোর। একতলায় দুটো দরজা আর কয়েকটা জানালা। দোতলা-তিনতলায় একটা করে খুদে জানালা। আর চারতলার প্রায় পুরোটাই কাঁচের, লাইটহাউসের মতো। জানালার মাঝে দেয়ালের গা থেকে বেরিয়ে আছে ইটের ধাপ, মইয়ের মতো অনেকটা, উঠে গেছে একেবারে চ্যাপ্টা ছাত পর্যন্ত।
সামনের একটা দরজায় ঠেলা দিলো কিশোর। তালা নেই। খুলে গেল। ছোট একটা লিভিং রুম দেখা গেল, গোল, ছাতটা উঠে গেছে গম্বুজের মতো গোল হয়ে। ডানে ওই একই আকারের বেডরুম, বাঁয়ে রান্নাঘর। ওখান থেকে বেরোনোর। আরেকটা দরজা আছে, ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো। একটা কাঠের সিঁড়ি নেমে গেছে মাটিরতলার ঘরে, এক পাশের দেয়ালে তার দরজা। আরেক পাশের দেয়ালে আরেকটা দরজা, সেখানে একটা মোটা পাইপের মতো দেখা গেল, সিমেন্টের তৈরি। ভেতর দিয়ে লোহার মই। উঠে গেছে ওটা।
আগে নিচে নামি, কিশোর বললো।
রবিন কিছু বললো না। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো গাঢ় অন্ধকার সেলারে। হাতড়ে হাতড়ে সুইচবোর্ড বের করলো কিশোর।
একটা মাত্র বা ঝোলানো রয়েছে ছাতে, অল্প পাওয়ারের। আলো খুব। সামান্য। তবে তাতে দেখতে অসুবিধে হয় না। নিচু ছাতওয়ালা একটা ঘরে ঢুকেছে ওরা। পাথরের দেয়াল। মেঝেটা কাঁচা, কিন্তু সিমেন্টের মেঝের চেয়ে কম শক্ত না। মসৃণ। দেয়ালে ধুলো জমে রয়েছে কতো বছর ধরে, বলার জো নেই।
এখানেও কেউ খোড়েনি, রবিন বললো।
তাই তো মনে হচ্ছে। বার বার নিরাশ হতে ভালো লাগছে না কিশোরের।
দেয়ালের ওপাশে আরেকটা ঘর আছে। স্টোররুম। তাতে পড়ে আছে। জমকালো সব আসবাবপত্র, ধুলোয় মাখামাখি। জানে পাবে না, তবু ওগুলোর তলায় উঁকি দিয়ে দেখলো দুজনে, খোঁড়ার চিহ্ন আছে কিনা।
কেউ আসেনি এখানে, রবিন বললো।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো।
পেছনে বিকট চিৎকার শুনে চরকির মতো পাক খেয়ে ঘুরলো দুজনে।
দাঁড়িয়ে রয়েছে বেগুনী জলদস্যু। হাতে ভোজালি।
মিস্টার জেসন, রবিন বললো, আমরা।
কথা বললো না বেগুনী জলদস্যু। বেগুনী মুখোশের ফুটো দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে জ্বলন্ত চোখে। নাকের নিচে পুরু গোঁফ।
আপনি মিস্টার জেসন না? সন্দেহ হলো কিশোরের।
জবাবে ভোজালি উঁচিয়ে ছুটে এলো লোকটা। লাফ দিয়ে পাশের একটা মস্ত আলমারির ওপর গিয়ে পড়লো রবিন। কিশোর পড়লো কয়েকটা চেয়ারের ওপর। রবিনের পায়ে পা বেধে হুমড়ি খেয়ে লম্বা এক টেবিলের ওপর গিয়ে পড়লো। জলদস্যু। পিছলে চলে গেল পেছনের দেয়ালের কাছে।
একটা মুহূর্ত নষ্ট করলো না দুই গোয়েন্দা। লাফ দিয়ে উঠে দিলো দৌড়। পেছনে তাকালো না একবারও, সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলে এলো ওপরে। রান্নাঘরে ঢুকতেই কানে এলো মুসার কণ্ঠ, শুনছো! ভিকটর! এই শুনছো? ভিকটর এসেছে!
চোখের পলকে গিয়ে পেছনের দরজাটার ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিশোর। দেখলো, ছিটকানি তো আছেই, তালাও লাগানো। নিচে সেলারে পায়ের আওয়াজ হচ্ছে। নিশ্চয় সিঁড়ির দিকে আসছে লোকটা। বাইরে, সামনে দিয়ে আসছে ভিকটর ইভানস।
আটকা পড়েছে দুই গোয়েন্দা। পালানোর পথ নেই।
.
১৫.
আরও হালকা হয়ে এসেছে কুয়াশা। বনের মধ্যে বসে আছে মুসা। ওয়াকি-টকি মুখের কাছে ধরা। আবার বললো সে, হুশিয়ার! ভিকটর আসছে! বেরিয়ে এসো!
জবাব এলো না।
ভিকটরের দিকে ফিরে তাকালো সে। গেট দিয়ে ঢুকে হেঁটে আসছে বনের দিকে। এখন না বেরোলে আর ভিকটরের চোখ এড়িয়ে বেরোতে পারবে না। কিশোর আর রবিন। করছে কি ওরা?
রবিন! কিশোর! হুঁশিয়ার! আবার সতর্ক করলো মুসা। জলদি বেরিয়ে এসো!