হ্যাঁ, স্যার।
কিন্তু কেন? আর এতো পাহারার ব্যবস্থাই বা কেন করেছে?
এখনও জানি না। তবে অনুমান করতে পারি। বেগুনী জলদস্যুর গুপ্তধন। আছে হয়তো এখানে, আর সেটা জানা আছে মেজর আর তার চেলাদের। ম্যাপও আছে একটা। টেবিলে ম্যাপ বিছিয়ে যে দেখেছিলেন মেজর, সেকথা জানালো কিশোর।
সন্দেহ যাচ্ছে না ক্যাপ্টেনের। পাইরেটস কোভে গুপ্তধন আছে, একথা কারো কাছে শুনিনি। কোনো গুজব নেই। তবে উইলিয়াম ইভানস ফিরে এসে মারা। যাওয়ার পর লোকে ভাবতে শুরু করেছিলো, সে গুপ্তধন লুকিয়ে রেখে গেছে। খোঁজাখুঁজিও করেছে। কেউ কিছু পায়নি। তারপর আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। কেউ।
গুপ্তধন না-ও হতে পারে। তবে মাটি যে খোঁড়া হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোন জায়গায় খুঁজছে, এখন গিয়ে সেটা বের করা দরকার।
পাওয়া যাবে! উত্তেজনায় চকচক করছে পিটারের চোখ। তিন দিন ধরে খুঁড়ছে, নিশ্চয় বেশ বড় গর্ত!
তাহলে পাওয়া সহজই হবে, ক্যাপ্টেন বললেন।
আমার তা মনে হয় না, সন্দেহ রয়েছে কিশোরের। মাটি খুঁড়ে বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছে, এটা অতি সাবধানতা। যাতে সহজে কারো চোখে না পড়ে।
আলাদা আলাদা হয়ে খুঁজতে বেরোই আমরা, কি বলো? রবিন বললো। তুমি ক্যাপ্টেনকে নিয়ে যাও। আমি আর পিটার যাচ্ছি। দুদিকে যাবো। দুজনেই এলাকা চেনেন, অসুবিধে হবে না।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর।
ঠিক হলো দুদিক থেকে খুঁজে এসে জাহাজটার কাছে মিলিত হবে ওরা।
কফি স্ট্যাণ্ডের পেছন দিকটায় খুঁজতে চললো কিশোর আর ক্যাপ্টেন। কুয়াশা। এখনও কাটেনি। মাথার ওপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে, হালকা মেঘের মতো।
এটা আর মিউজিয়ম করা হয়েছে যে বাড়িটায়, ক্যাপ্টেন বললেন, আগে আস্তাবল ছিলো। ওদিকে ওই গাছপালাগুলো দেখছো, ওখানে আরেকটা বাড়ি ছিলো। কোভ রোড তৈরি হওয়ার আগে।
ঘরের ভেতরেও মাটি খোঁড়া হয়ে থাকতে পারে, সন্দেহ করে একটা আস্তাবলের দরজা খুললেন তিনি। কোমল পানীয় আর টিনজাত খাবারের বাক্সে। ঘরটা বোঝাই। তবে ভ্যান রাখার জায়গা রয়েছে। মাটিতে টায়ারের কোনো চিহ্ন দেখা গেল না, গর্তটৰ্তও খোঁড়া হয়নি। কিছুই পাওয়া গেল না। বাইরে বেরিয়ে আশেপাশে খুঁজলো কিছুদূর। তারপর নিরাশ হয়ে এসে দাঁড়ালো ব্ল্যাক ভালচারের কাছে।
রবিন আর পিটারও ফিরে এলো।
পাইনি, হতাশ কণ্ঠে জানালো রবিন। একটা ইঞ্চি জায়গাও বাদ দিইনি।
ঘড়ি দেখলেন ক্যাপ্টেন। শো-এর সময় হয়ে যাচ্ছে। নোনতা তো এখনও এলো না। আসেই কিনা কে জানে! মাঝে মাঝেই এরকম করে। একা মারিয়া। সামলাতে পারবে না। লোক যদি বেশি হয়ে যায়, তোমরা কি সাহায্য করতে পারবে?
উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিশোরের চোখ। নিশ্চয় পারবো, স্যার। অভিনয়ও করতাম একসময়। জলদস্যুর অভিনয় ভালোই পারবো। প্রয়োজন হলেই বলবেন। আমরা আছি।
এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে, প্রস্তাবটা রবিনেরও মনে ধরেছে। কাজও করবো, ওদিকে খোঁজাও হয়ে যাবে, গর্তটা। মিউজিয়মের চাবিটা দিন।
পকেট থেকে চাবি বের করে দিলেন ক্যাপ্টেন। ছেলেকে নিয়ে চলে গেলেন, শো-এর জন্যে তৈরি হতে। তালা খুলে মিউজিয়মের ভেতরে ঢুকলো কিশোর আর রবিন।
কিশোর বললো, দেখ, মাটিতে চাকার দাগ আছে কিনা?
প্রথম ঘরটায় কোনো দাগ পাওয়া গেল না। মাটি খোঁড়ার চিহ্নও নেই। পরের ঘরটায়ও দাগটাগ মিললো না। বেরোনোর জন্যে পা বাড়িয়েই থেমে গেল রবিন। হাত তুলে হুঁশিয়ার করলো কিশোরকে।
বাইরে কুয়াশার মধ্যে নড়ছে কিছু। শব্দ শুনতে পেয়েছে সে।
দরজার দিকেই এগিয়ে আসছে শব্দটা।
.
১৪.
কুইক! ফিসফিসিয়ে বললো কিশোর। দরজার পেছনে!
কিন্তু লুকানোর আগেই দরজায় দেখা দিলো একটা ছায়া। কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
অ, তুমি! আমরা তো ভেবেছিলাম কে জানি! মুসাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফেললো রবিন।
কি করে বুঝলে এখানে আছি? কিশোর জিজ্ঞেস করলো। পিটারকে জিজ্ঞেস করেছো নাকি?
নাহ, দেখাই হয়নি। ভেতরে শব্দ শুনলাম, দরজাও খোলা। ভাবলাম, দেখি তো কে? কোথায় খুঁড়েছে দেখেছো?
মাথা নাড়লো কিশোর। না। তবে এ-বাড়ির একটা ঘর এখনও বাকি।
শেষ ঘরটারও তালা খুলে দেখলো ওরা। কিছু পেলো না।
বাইরে হালকা হয়ে এসেছে কুয়াশা। মিউজিয়ম বিল্ডিং আর ওকের জটলার মাঝের জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। কয়েকজন দর্শককে দেখতে পেলো, ব্ল্যাক ভালচারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কফি স্ট্যাণ্ডটা খোলা হয়েছে, কাউন্টারের পেছনে বসেছেন ক্যাপ্টেন। সাগরের কিনার, বেড়া আর ওকের সারির মাঝের জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজলো ছেলেরা।
খোঁড়ার কোনো লক্ষণই তো দেখছি না, রবিন বললো হতাশ কণ্ঠে।
হয়তো খুঁড়েছিলো, মুসা বললো। কালরাতে এসে আবার ভরে দিয়ে
তাহলে পরিষ্কার বোঝা যেতো, বললো কিশোর। সবখানেই, তো খুঁজলাম…
বাধা দিলো রবিন, না, সবখানে নয়! টাওয়ার আর বোটহাউসের ভেতরটা এখনও বাকি!
বাঁকাচোরা পুরনো ওকের ভেতর দিয়ে তাকালো ওরা টাওয়ারের দিকে। পানির কিনারে কাত হয়ে থাকা বোট-হাউসটা দেখলো। গাছপালার ভেতর দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে।
কিন্তু পাথরের টাওয়ারের ভেতরে খুঁড়বে কি করে? প্রশ্ন তুললো মুসা। বোটহাউসে পারা যাবে না। একটায় পাথর, আরেকটায় পানি।