.
ক্যাপ্টেন ফিলিপ আর পিটারকে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলো কিশোর। ট্রাক চলে যাওয়ার শব্দ শুনলো। ওরা চলে যেতেই খোলা জানালাটা চোখে পড়লো গুনের। বিড়বিড় করে কি বলে এসে বন্ধ করে দিলো। এয়ারকুলার চালু করলো। তারপর গিয়ে বসলো টেপ রেকর্ডারের সামনে। টেপ রিওয়াইন্ড করে মুছে ফেলতে শুরু করলো ক্যাপ্টেনের কথা। অযথাই বকবক করে গেছেন যেন ফিলিপ, কোনো মানেই নেই ওসবের।
এই সময় এলো রবিনের মেসেজ। ভ্যানের পেছনে বোঝাই বস্তার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। বোঝাই? যা-ই আছে, ওগুলোর জন্যেই গিয়েছিলো ওখানে ওরা! জিজ্ঞেস করো তো মুসাকে, কি আছে দেখতে পারবে কিনা?
পারবে না। ভ্যানটা চলে গেছে। এখনও পাহারা দিচ্ছে টনি। যে পথে ঢুকেছিলো সেপথেই ফিরে আসছে মুসা। হেডকোয়ার্টারে দেখা করবে, পরে।
ঠিক আছে, ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। তুমি জলদি চলে এসো এখানে।
পনেরো মিনিটের মধ্যেই একটা ভ্যানের শব্দ শুনলো কিশোর। চতুরে। থামলো। খানিক পরে ঘরে এসে ঢুকলেন মেজর আর রিগো। গুনের সঙ্গে কথা: বলতে লাগলেন তিনি, আর রিগো কেকের বাকিটা শেষ করায় মন দিলো। মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। জানালার বাইরে। ঝোঁপের ভেতর গুটিয়ে গেল। কিশোর। কথা শেষ করে রিগোকে ইশারা করলো গুন। নেহায়েতই অনিচ্ছা নিয়ে যেন তার পিছে পিছে চললো হাতির বাচ্চা। নিশ্চয় বেগুনী জলদস্যুর আড্ডায় পাহারা বদল করতে যাচ্ছে, কিশোর ভাবলো।
দেয়ালের পেছনে একটা খসখস কানে এলো তার। অন্ধকারে ঘুরে তাকালো।
রবিন এসেছে।
হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেল কিশোর। ফিসফিস করে বললো, এসেছে। ভালো হয়েছে। আমার জায়গায় গিয়ে বসো। বস্তাগুলোয় কি আছে দেখতে যাচ্ছি আমি। আমাদের যন্ত্রটাও খুলে আনবো। মেজরকে বেরোতে দেখলেই আমাকে হুঁশিয়ার করবে।
তাড়াতাড়িই ফিরে এলো কিশোর।
দেখেছো? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
দেখেছি। দশটা বস্তায়ই। যন্ত্রটাও খুলে নিয়ে এসেছি। চলো, বাড়ি যাবো।
কি আছে?
ততোক্ষণে চলতে আরম্ভ করেছে কিশোর। রবিনের কথার জবাব দিলো না। সাইকেল নিয়ে রওনা হলো দুজনে।
ওরা ইয়ার্ডে আসার কিছুক্ষণ পর এলো মুসা।
নষ্ট হয়ে যাওয়া ট্রেইলিং ডিভাইসটা টেবিলে ফেলে রেখেছে কিশোর। কিসের সঙ্গে যেন বাড়ি খেয়ে হয়েছে এই অবস্থা।
গেল! জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো রবিন। ওই জিনিস আরেকটা কেনার পয়সাও নেই এখন আমাদের।
যাক, হাত নাড়লো মুসা। পয়সা হলে কিনে নেবো আরেকটা। এই কিশোর, বস্তার ভেতর কি দেখলে?
মাটি।
মাটি! মুসা আর রবিন দুজনেই অবাক।
মাটি আর পাথর, আবার বললো কিশোর। দশ বস্তা বোঝাই খুব বাজে মাটি আর পাথর।
কিন্তু…কিছুই বুঝতে পারছি না! হাত ওল্টালো মুসা।
এটুকু বোঝা যাচ্ছে, কিশোর বললো, মাটি খুঁড়েছে জলদস্যুর আভজাতেই। কাল আবার যাবো আমরা। ক্যাপ্টেন ফিলিপকে বলবো গল্প রেকর্ডিংটা স্রেফ একটা ধাপ্পাবাজি। তারপর খুঁজে বের করবো, কোন জায়গায় খুঁড়ছেন মেজর, এবং কেন।
.
১৩.
পরদিন সকালে হেডকোয়ার্টারে রবিন দেখলো, রিসিভার ক্রেডলে নামিয়ে রাখছে কিশোর। মুসা আসছে না, জানালো সে। বাড়ি থেকে কাজ চাপানো হয়েছে ওর ওপর। ওকে রেখেই যেতে হচ্ছে আমাদের। যতো তাড়াতাড়ি পারে কাজ শেষ। করে আড্ডায় আমাদের সঙ্গে দেখা করবে বলেছে।
হাসলো ররিন। মায়ের ওপর রেগে নিশ্চয় ভোম হয়ে আছে।
যা-ই হোক, অন্তত খুশি মনে হলো না। চলো। তিনটে ওয়াকি-টকিই নিয়ে। নিচ্ছি। কাজে লাগতে পারে।
যন্ত্রগুলো ব্যাগে ভরে নিলো রবিন।
সবুজ ফটক এক দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরোলো ওরা। চললো জলদস্যুর আড়ার দিকে। কুয়াশা পড়েছে। হাইওয়ে দিয়ে সাবধানে সাইকেল চালালো
পৌঁছে দেখলো নির্জন পাইরেটস কোভ-এর ওপরে নীরবে যেন ঝুলে রয়েছে। ভারি কুয়াশার চাদর।
পিটারকে ফোন করেছিলাম, কিশোর জানালো। সে বলেছে, তার আব্বাকে বলেকয়ে রাজি করিয়ে রাখবে আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্যে।
গেটের কাছে পৌঁছে নিচু গলায় বললো রবিন, আইসক্রীমের ভ্যানটা আছে রিগো কোথায় লুকিয়েছে কে জানে। হয়তো গাছের আড়ালে।
রাস্তার দিকে তাকালো কিশোর। গাড়িটা দেখলো। গাছের জটলার দিকে তাকিয়ে হাসলো। হ্যাঁ, আছে। অতোবড় হাতির মতো দেহ লুকানো কি আর সহজ?
গেটের ভেতরে ঢুকলো দুজনে। ট্রেলারের কাছে এসে বেল বাজালো।
সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল দরজা। পিটার বললো, এসো। তোমাদের জন্যেই বসে আছি।
রান্নাঘরে টেবিলের সামনে বসে আছেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ। সবে নাস্তা শেষ করেছেন। ছেলেদেরকে কফি খাবে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। ভদ্রতার সঙ্গে বললো। ওরা, খাবে না।
হাতের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে বললেন তিনি, মেজর নিরেককে বিরক্ত করতে মানা করেছিলাম তোমাদেরকে।
মনে আছে, স্বীকার করলো কিশোর। আমরা করিনি। তদন্ত যে করছি। বগুনী জলদস্যু জানেনই না মেজর।
তাহলেই ভালো। শুনলাম, রহস্যের কিনারা নাকি করে ফেলেছে। খুলে বল তো সব।
পিটার বোধহয় বাড়িয়ে বলেছে, নরম গলায় বললো কিশোর। রহস্যের সমাধান এখনও করতে পারিনি, তবে শিওর হয়ে গেছি, রহস্য একটা সত্যিই আছে। আগের দিন রাতে যা যা ঘটেছে বলতে লাগলো সে।
আরেক কাপ কফি ঢাললেন ক্যাপ্টেন। কিশোরের কথা শেষ হলে বললেন; তাহলে তোমার বিশ্বাস, পুরো ব্যাপারটাই একটা ফাঁকিবাজি। গল্প বলানোর ছুতোয় আমাদেরকে সরিয়ে দিচ্ছে মেজর, যাতে নিরাপদে মাটি খুঁড়তে পারে।