বিখ্যাত আরেকজন আছে, কিশোর বললো। ডা বুচার্ডের পর উদয় হয়েছিলো। উইলিয়াম ইভানস, বেগুনী জলদস্যু নামেই বেশি পরিচিত। মেরামত করে চালানো পুরনো গ্র্যাণ্ডফাদার ঘড়িটার দিকে তাকালো সে। তবে এসব গল্প এখানকার অনেকেরই জানা। বলতে হলে তাড়াতাড়ি যেতে হবে আমাদের। কেউ বলে ফেলার আগে।
আবার ওয়ার্কশপে বেরিয়ে এলো ওরা। বেরিয়েই শুনলো ডাক, কিশোর, ও কিশোর, কোথায় গেলি?
মেরিচাচী! আঁতকে উঠলো রবিন।
নিশ্চয় অনেক কাজ জমিয়েছে! চেঁচাতে গিয়েও কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে ফেললো মুসা।
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কিশোরের মুখ। আজ আর কিছু করতে পারবো না! জলদি পালাও! মেরিচাচী ওয়ার্কশপে ঢোকার আগেই সবুজ ফটক এক দিয়ে। বেরিয়ে পড়লো তিনজনে।
সাইকেল চালাতে চালাতে রবিন বললো, চিনি জায়গাটা। পুরনো স্প্যানিশ স্টাইলের চত্বর ঘিরে ইটের দেয়াল। একধারে কয়েকটা দোকান আছে। বেশির ভাগই এখন খালি।
সেজন্যেই হয়তো জায়গাটা বেছে নিয়েছে ওরা, বিজ্ঞাপন দিয়েছে যারা তাদের কথা বললো কিশোর। সস্তায় পাবে। তাছাড়া ভিড়টিড়ও কম। আরামে ইন্টারভিউ নিতে পারবে।
ডি লা ভিনা স্ট্রীটে উঠলো ওরা। ১৩০০ নম্বর ব্লকের কাছে থাকতেই চোখে পড়লো জনতার ভিড়। প্রতি মিনিটে বাড়ছে। রবিন যে দেয়ালটার কথা বলেছে, তার ভেতরে ঢোকার কাঠের গেটটা বন্ধ। দেয়ালে বড় করে নম্বর লেখা রয়েছেঃ ১৩১২।
চিন্তিত ভঙ্গিতে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে কিশোর বললো, বড় মানুষ খুব কমই আছে। আজ কাজের দিন, অফিস-আদালত সব ভোলা। আসবে ওরাও, ছুটি হলে। আমাদের জন্যে এই সময়টাই সুবিধে।,
পথের পাশের একটা লোহার রেলিঙে শেকল ঢুকিয়ে সাইকেলে তালা দিলো তিনজনে। খুলে গেল কাঠের দরজা। বেরিয়ে এলেন একজন চটপটে মানুষ। শাদা চুল। পুরু গোঁফ দেখলে মনে হয় নাকের নিচে ছোটখাটো দুটো ঝোঁপ ঝুলে রয়েছে, মানুষটার ছোট্ট শরীরের তুলনায় বেঢপ আকার। গায়ে টুইডের জ্যাকেট, পরনে ঘোড়ায় চড়ার উপযোগী পাজামা, পায়ে বুট, গলায় বাঁধা সিল্কের রুমাল, হাতে একটা বেত-ঘোড়া চালানোর সময় প্রয়োজন হয়। সব কিছু দেখে মনে হয়। প্রাচীন অশ্বারোহী বাহিনীর একজন সৈনিক জ্যান্ত হয়ে উঠে এসেছে। ভিড়ের দিকে তাকিয়ে চাবুকটা তুললেন তিনি, চুপ করার নির্দেশ।
আমার নাম মেজর নিরেক। পাইরেটস সোসাইটি অভ জাস্টিসে আসার জন্যে স্বাগত জানাচ্ছি সবাইকে। সবার কথাই শুনবো আমরা। তবে আজ এতো বেশি চলে এসেছো, শুনে শেষ করতে পারবো না একদিনে। যারা কাছে থেকে এসেছে, তারা ফিরে যাও। আরেক দিন এসো। রকি বীচের বাইরে থেকে যারা এসেছে, তারা শুধু থাকো।
হতাশার তীব্র গুঞ্জন বয়ে গেল জনতার মাঝে। ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেল। দরজার কাছে পিছিয়ে গিয়ে পাল্লাটা লাগিয়ে দিলেন মেজর নিরেক। দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কথা বলার চেষ্টা করলেন তিনি, কিন্তু। কেউ শুনতে চাইলো না। ভীষণ হৈ-হট্টগোলে চাপা পড়ে গেল তার কথা।
নানারকম প্রতিবাদঃ
ইয়ার্কি পেয়েছো?
আসতে বলে এখন চলে যাওয়ার কথা!
শয়তানি ঘুচিয়ে দেবো, বেশি বেশি করলে!
এসেছি ফিরে যাওয়ার জন্যে?
আরও নানারকম কথা, গালাগাল হজম করতে হলো মেজরকে। সতেরো আঠারো বছরের ছেলেগুলোই বাড়াবাড়ি করছে। তাদের দিকে বেত তুলে চেঁচিয়ে। উঠলেন তিনি, এই ভাগো, ফাজিলের দল!
আরও রেগে গেল ওরা। একটা ছেলে এসে টান দিয়ে বেতটা কেড়ে নিতে চাইলো। আরও কয়েকজন এগিয়ে এলো তিনদিক থেকে, মেজরকে মারার জন্যে। রক্ত সরে গেল তার মুখ থেকে। চিৎকার করে সাহায্য চাইলেন, বাঁচাও, রিগো, বাঁচাও!
দেয়ালের ভেতর থেকে কেউ বেরোলো না।
তিনদিক থেকে চেপে আসছে রেগে যাওয়া, উত্তেজিত জনতা।
.
০২.
বাঁচাও! আবার চিৎকার করলেন মেজর। এগিয়ে আসছে জনতা। রিগো, বাঁচাও?
কিশোরের দিকে তাকালো মুসা। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মেজরকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া দরকার! বলেই আর দাঁড়ালো না সে। ছুটে গিয়ে একলাফে চড়লো পার্ক করে রাখা একটা গাড়ির ছাতে। চেঁচিয়ে বললো, পুলিস। পুলিস আসছে!
ঝট করে ফিরে তাকালো গেটের কাছে চলে যাওয়া কয়েকটা ছেলে। কিশোর। আর রবিন ততোক্ষণে প্রায় পৌঁছে গেছে মেজরের কাছে।
চলো, ভাগি! বলেই ছাত থেকে লাফিয়ে নেমে রাস্তার দিকে দৌড় দিলো। মুসা। কয়েকটা ছেলে ছুটলো তার পেছনে, বাকিরা দাঁড়িয়ে রইলো, দ্বিধা করছে। ধাক্কা দিয়ে কাঠের গেটটা ফাঁক করে ফেললো রবিন।
আসুন, স্যার, বলে ঠেলে মেজরকে সেই ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো কিশোর।
মেজরকে নিয়ে চত্বরে ঢুকে পড়লো দুজনে। খানিক পরেই সেখানে এসে হাজির হলো মুসা। আর কেউ ঢুকে পড়ার আগেই ঠেলে বন্ধ করে দিলো, ভারি গেটটা। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছেন নিরেক।
রিগো! গর্জে উঠলেন তিনি। গেল কোথায় শয়তানটা!
অনেক কাল আগে বড় বড় পাথর বসিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো এই চত্বর। মাঝে মাঝে ফাঁক, সেখানে লাগানো হয়েছিলো পিপুল আর জ্যাকারাণ্ডা গাছের চারা, সেগুলো বড় হয়েছে এখন। ফুলের ঝড়ে প্রায় ঢাকা পড়েছে উঁচু দেয়াল। উজ্জ্বল রঙের ফুল ফুটেছে। চত্বরের দূর প্রান্তে একসারি দোকান। সবগুলোই খালি এ মনে হচ্ছে। নিঃসঙ্গ, ছোট একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে ওগুলোর সামনে।