চোখে বিস্ময় নিয়ে তিনজনেই তাকিয়ে রইলো গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে।
রহস্যটা বোধহয় আন্দাজ করে ফেলেছি, আনমনে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো একবার কিশোর। আশা করছি, আজ রাতেই সমাধান হয়ে যাবে।
১১.
সন্ধ্যা আটটায় আবার হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা।
কি করতে হবে বললো কিশোর। বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে যাবে। পিটার। আমি যাবো ওখানে, ওদের কথা শুনতে। মুসা, তুমি গিয়ে আড্ডার ওপর নজর রাখবে। আমাদের নতুন ওয়াকি-টকির রেঞ্জ তিন মাইল। কিন্তু ডি লা ভিনা থেকে পাইরেটস কোভ পাঁচ মাইল। কাজেই মাঝামাঝি জায়গায় একজনকে থাকতে হবে। রবিন থাকবে। মুসার মেসেজ আমাকে দেবে, আমার মেসেজ মুসাকে। ঠিক আছে?
মাথা ঝাঁকালে দুই সহকারী গোয়েন্দা।
বেরিয়ে এলো ওরা। সাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে গেল যার যার জায়গার দিকে।
.
পাইরেটস কোভের পথে যখন নামলো মুসা, অন্ধকার হয়ে গেছে তখন। সাইকেলের আলো জ্বেলে দিলো। আড্ডার গেটের কাছে এসে থামলো। আলো নিভিয়ে অপেক্ষা করলো কিছুক্ষণ, চোখে অন্ধকার সইয়ে নেয়ার জন্যে।
আগের জায়গায়ই ট্রী-সার্ভিস ট্রাকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। সিগারেটের আগুন দেখেই বুঝতে পারলো, ড্রাইভিং সীটে বসে আছে কেউ। নিশ্চয়। নজর রাখছে।
ওয়াকি-টকি বের করলো মুসা। বললো, রবিন, কিশোরকে বলল, মেজরের ন্টসহকারী টনি এখনও চোখ রাখছে আড়ার ওপর।
প্রায় মাইল তিনেক দূরে, হাইওয়ের পাশে একটা ছোট টিলার ওপরে বসে আছে। রবিন। ওয়াকি-টকিটা মুখের কাছে তুলে আনলো। অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে। বললো, কিশোর, মুসা জানিয়েছে, এখনও আড়ার ওপর চোখ রাখছে টনি।
ওর কাছ থেকে মাইল দুয়েক দূরে, দোকানের জানালার নিচে একটা ঝোঁপের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে কিশোর। মেসেজের জবাব দিলো, মেজর নিরেক, রিগো, আর টাকমাথা লোকটা এখনও বসে আছে এখানে। কিছুই করছে না। মুসাকে বলো, কড়া নজর রাখতে। খুব সাবধান যেন থাকে।
হুঁশিয়ারির প্রয়োজন ছিলো না। মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে রয়েছে টনি। এই অবস্থায় সাবধান থাকতেই হবে, তা-ই রয়েছে মুসা। লুকিয়ে আছে গাছের ছায়ায়। এমন একটা জায়গায় গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসেছে, যেখান থেকে পার্কিং লট, গেট, টাওয়ারের ওপরের দুটো তলা আরট্রী-সার্ভিসট্রাকটা দেখা যায়।
আড্ডায় ঢোকার মুখে একটা খুঁটিতে আলো জ্বলছে। এঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ হলো। গেট দিয়ে বেরিয়ে এসে থামলো একটা ভ্যান। দরজা খুলে লাফিয়ে নামলো পিটার। গেটটা লাগিয়ে দিয়ে এসে আবার গাড়িতে উঠলো।
চলে গেল ভ্যানটা। আবার ট্রাকের দিকে তাকালো মুসা। নড়লো না ওটা। বেগুনী জলদস্যু তেমনি ভাবে বসে বসে সিগারেট টানছে টনি।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার মেসেজ পাঠালো মুসা, ক্যাপ্টেন ফিলিপ আর পিটার বেরিয়ে গেছে। টনি আগের মতোই বসে আছে। নজর রাখছে।
মেসেজটা কিশোরের কাছে পাচার করলো রবিন। পথের দিকে চোখ। কয়েক মিনিট পরেই দেখতে পেলো, তার সামনে দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে পিটারদের ভ্যানটা।
মেসেজ শুনলো কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে ঘরের দিকে। রবিনের কথা শেষ হতে না হতেই ঘড়ি দেখলেন মেজর। উঠে রওনা হলেন দরজার দিকে।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো বিশালদেহী রিগো। লাফিয়ে লাফিয়ে চললো মেজরের পেছনে। একভাবে বসে রইলো টাকমাথা লোকটা।
দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে দোকানের পাশে চলে এলো কিশোর। চত্বরের দিকে তাকালো। দোকান থেকে বেরিয়ে ভ্যানে গিয়ে উঠলেন মেজর আর রিগো, যেটাতে খোঁড়ার যন্ত্রপাতিগুলো রয়েছে।
চলে গেল গাড়িটা।
খবরটা রবিনকে জানালো কিশোর। তারপর ফিরে এলো আবার আগের জায়গায়। টেপ রেকর্ডারে ক্যাসেট ভরছে টাকমাথা লোকটা। দুটো চেয়ার সাজিয়ে রাখলো ডেস্কের সামনে। চত্বরে আরেকটা ভ্যান ঢোকার শব্দ হলো। একটু পরেই ঘরে এসে ঢুকলেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ, সঙ্গে পিটার। ঢুকেই জড়োসড়ো হয়ে গেল পিটার। এমন ভঙ্গি করতে লাগলো, যেন ভীষণ শীত করছে। এয়ারকুলার বন্ধ করে দিতে বললো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে সুইচ অফ করে দিলো। লোকটা। মনে মনে হাসলো কিশোর, বুদ্ধি আছে ছেলেটার। শুধু তাই নয়, লোকটা যখন এয়ারকুলার বন্ধ করতে গেছে, সে এসে খুলে দিয়েছে জানালা। এক পলকের জন্যে কিশোরের মুখটা নজরে পড়েছে বোধহয়, কারণ হেসেছে এদিকে তাকিয়ে। তাড়াতাড়ি ফিরে গেছে আবার, টাকমাথা কিছু সন্দেহ করার আগেই।
মিস্টার গুন, ক্যাপ্টেন বললেন, একদিন যা বলেছি, রেকর্ড তো করে। রেখেছেন। আবার শুনতে চাই। দরকার আছে।–
সরি, ক্যাপ্টেন, জবাব দিলো গুন, এখানে নেই ওগুলো। মেজর সব নিয়ে গেছেন।
কেন? জানতে চাইলো পিটার।
বোধ হয় এডিট করবেন। তারপর আরও কপি করে পাঠিয়ে দেবেন সোসাইটির ডিরেকটরদের কাছে।… আসুন, কাজ শুরু করা যাক।
রেকর্ডিঙের বোতাম টিপে যন্ত্রটা ক্যাপ্টেনের দিকে ঠেলে দিলো গুন। নিজে গিয়ে বসলো দরজার কাছে। ক্যাপ্টেন গল্প শুরু করলেন। সে চুপচাপ কমিক পড়তে লাগলো।
জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। ভাবছে, মেজর আর রিগো কোথায় গেল? টনিকে বসিয়ে এসেছে আড়া পাহারা দিতে। গুনকে রেখে গেছে ক্যাপ্টেনের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্যে। পঁচিশ ডলার করে ঘন্টায়। ফিলিপের। টাকার টানাটানি চলছে। এই অবস্থায় এটা তার জন্যে লোভনীয় কাজ। আন্তরিক ভাবে গল্প বলে যাবেন, যততা গল্প তাঁর জানা আছে। কিন্তু কেন এই কাজ করাচ্ছেন। মেজর? আন্দাজ করতে পারছে গোয়েন্দাপ্রধান। আরও আন্দাজ করতে পারছে,। কোথায় গেছেন মেজর নিরেক রিগোকে নিয়ে।