আশ্চর্য! অবাক হয়ে দেখছে পিটার। এ-তো দেখি ঘর! আমি ভেবেছিলাম। জঞ্জালের তলায় খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে নিয়েছো বুঝি।
এটা একটা ট্রেলার। তোমাদেরটার মতোই, রবিন বললো। তবে ছোট।
আমরা এখানে থাকলে বাইরে কেউ দেখতে পায় না, মুসা বললো। কিন্তু আমরা দেখি, এই পেরিস্কোপটা দিয়ে। এটার নাম দিয়েছি আমরা সর্ব-দর্শন, বাংলা। নাম।
এখানে ঢুকে বসে থাকলে, কিশোর বললো, কারো পক্ষে খুঁজে বের করাও কঠিন।
এমনকি মেরিচাচীর কাছ থেকেও নিরাপদ, হেসে বললো মুসা। যেই দেখি। বেশি কাজ, পালিয়ে আসি এখানে। হাহ্ হাহ!
তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সবাই হাসলো। একটা চেয়ার দেখিয়ে পিটারকে বসতে ইশারা করলো কিশোর। বললো, তারপর, পিটার, তোমার বাবার অতীত কিছু জানতে পারলে?
কিছু না। সারাটা বিকেল ভেবেছি। যতোদূর মনে পড়ে আমার, রকি বীচেই বাস করছি। কখনও কোনো গোলমালে জড়ায়নি আব্বা, অপরাধ করেনি। আগে। আমার আম্মাকে নিয়ে স্যান ফ্রানসিসকোয় থাকতো আব্বা, যখন নেভিতে চাকরি করতো। আম্মা মারা যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে এখানে চলে এলো, তখনও আমি কিছু বুঝি না। একটা মাছধরা জাহাজ কিছুদিন ভাড়া নিয়েছে আব্বা। তারপর ইভানসদের জায়গাটা লীজ নিয়ে এই বেগুনী জলদস্যুর ব্যবসা খুলেছে।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। হ্যাঁ, ঠিক এসবই জেনেছি আমিও তোমার আব্বার সম্পর্কে। অস্বাভাবিক কিছুই নেই। রবিন, বেগুনী জলদস্যুর কথা তুমি কি জানলে?
বেশি কিছু না। প্রায় সবই তো তোমরা জেনেছো ক্যাপ্টেন ফিলিপের কাছে, শো-এর সময়। স্প্যানিশরা শিওর, উইলিয়াম ইভানসই বেগুনী জলদস্য, কিন্তু কোনোদিন প্রমাণ করতে পারেনি সেটা। কয়েকবার তার টাওয়ারে তাকে আটক করেছে, কিন্তু ধরতে পারেনি। চেহারাও দেখেনি। শেষ বার আটকানোর পর সবার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেল, ফিরে এলো একজন সম্মানিত আমেরিকান নাগরিক হয়ে।
মুসা বললো, পাইরেটস কোভের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি আমি। অনেক আর্টিক্যাল লেখা হয়েছে জায়গাটাকে নিয়ে, গোটা দুই আস্ত বইও আছে। বেগুনী। জলদস্যু ছাড়াও আরও অনেকে জায়গাটাকে তাদের আস্তানা বানিয়েছিলো বিভিন্ন সময়। সবাই ওরা অপরাধী। চোরাচালানী, চোর-ডাকাত, খুনী, এসব ধরনের লোক। যো রকমের অন্যায় কাজ হতে পারে, সব ঘটেছে ওখানে। তবে ফিলিপ কিংবা নিরেক নামের কেউ, এমনকি শুধু উইলিয়াম ইভানস ছাড়া ইভানস নামের আর কোনো অপরাধীও ছিলো না কখনো ওখানে।
ভ্রূকুটি করলো কিশোর। হু। বিশেষ কিছু জানা গেল না। সূত্র বলতে একটাই দেখতে পাচ্ছি, বেগুনী জলদস্যু। বুঝতে পারছি, মেজর নিরেক আর তাঁর চেলারা গিয়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছে কোনো কারণে। কিন্তু আঁড়ার ওপর কেন চোখ। রেখেছে বোঝা যাচ্ছে না। পিটারের আব্বার সঙ্গেই বা কেন দীর্ঘ সাক্ষাত্তারের ব্যবস্থা করেছে, সেটাও দুর্বোধ্য।
গুপ্তধন লুকানো নেই তো? মুসার প্রশ্ন। জলদস্যুদের গুপ্তধন? ক্যাপ্টেন। ফিলিপকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সরিয়ে রেখে হয়তো সেসব খুঁজছে ওরা।
যাতে নিরাপদে নিয়ে পালাতে পারে, মুসার কথার পিঠে বললো রবিন।
কথাটা ভেবে দেখলো কিশোর। অসম্ভব নয়। ক্যাপ্টেনের গল্প শোনার আরও কারণ থাকতে পারে। মেজর হয়তো ভেবেছেন, এমন কিছু জানেন ফিলিপ, যেটা জানা থাকলে ধনরত্ব খুঁজে বের করতে সুবিধে হবে।
তাহলে আব্বা খুঁজছে না কেন? পিটার প্রশ্ন তুললো।
হয়তো তিনি জানেনই না গুপ্তধনের কথা। কিন্তু মেজর জানেন। তোমার। আব্বার গল্প শুনে আন্দাজ করতে পারবেন হয়তো, কোথায় রয়েছে ওগুলো। হয়তো সূত্র পাবেন। কারণ বেগুনী জলদস্যুর সম্পর্কে অনেকের চেয়ে অনেক বেশি জানেন তোমার আব্বা।
তাহলে হয়তো ইতিমধ্যেই মেজর সব জেনে ফেলেছে।
মনে হয় না। তাহলে ওই সাক্ষাৎকার বন্ধ হয়ে যেতো, এখনও চলতো না। আড্ডার ওপর ওভাবে চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখারও ব্যবস্থা করতো না। জাস্ট তুলে নিয়ে চলে যেতো। সাক্ষাৎকারে কি কি বলেছেন ক্যাপ্টেন, সব আমাদের জানা দরকার।
পিটার বললো, আমি সাহায্য করতে পারি। ছোট একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে যেতে পারি সঙ্গে করে, আব্বা যা যা বলে তুলে আনতে পারি।
হ্যাঁ, তা পারো, পিটারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। কাল রাতেও তোমার আব্বার সঙ্গে গিয়েছিলে। সব সময়ই যাও।
হ্যাঁ, যাই, কিশোরের কথায় অবাক হয়েছে পিটার। মেজরই যেতে বলে আমাকে। প্রায় জোরই করে। বলে, বছরের পর বছর আমাকে জলদস্যুদের গল্প শুনিয়েছে আমার আব্বা, অনেক কিছুই মনে আছে। এমন কিছু হয়তো বলে ফেলতে পারবো, যা আব্বা ভুলে বলেনি। মনে করিয়ে দিতে পারবো।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের চোখ। সন্ধ্যায় যখন সাক্ষাৎকার দিতে যাও, তখন। কি মেজর থাকেন?
মাথা নাড়লো পিটার। কখনও না। অন্য লোক থাকে। কথা রেকর্ড করে নেয়।
নোনতা জেসন কোথায় থাকে ওই সময়টায়?
রকি বীচে ঘর ভাড়া নিয়েছে। রাতে ওখানেই থাকে।
তুমি আর তোমার আব্বা ছাড়া আর কেউ থাকে আড্ডায়?
না। শুধু ভিকটর ইভানস।
আরেকটা কথা। কতোক্ষণ ধরে সাক্ষাঙ্কার চলে?
নটা থেকে এগারোটা।
ঠিক আছে। আজ রাতেও তো সাক্ষাৎকার দিতে যাবে। ঘরের এয়ারকুলারটা বন্ধ করে দেবে। যাতে লোকটা বুঝতে না পারে। আর একটা জানালা খুলে ফাঁক করে রাখবে। কি কি কথা হয়, শুনতে চাই।