কতো দিন আগে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
এই বছর খানেক।
এতো দিন! হতাশই মনে হলো কিশোরকে।
ঘড়ি দেখলেন ক্যাপ্টেন। এহূহে, পরের শো-এর সময় হয়ে গেছে।
তুমি যাও, আব্বা, আমি আসছি। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে বেরোলো পিটার। বাইরে উজ্জ্বল রোদ, লুকোচুরি খেলছে যেন গাছপালার ফাঁকে। গেটের বাইরে সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছে কয়েকজন দর্শক।
সত্যি কি মেজর আমাদের সঙ্গে ফাঁকিবাজি করছে? পিটারের প্রশ্ন।
করছে, জবাব দিলো কিশোর। তাতে কোনো সন্দেহ নেই আমার।
যা দেখলাম আজ, রবিন বললো কিশোরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে, তাতে সন্দেহ আমারও নেই।
ছদ্মবেশে এসে টনি আর আইসক্রীমওয়ালাকে কি করতে দেখেছে, খুলে বললো সে। আলুর বস্তা, ব্যাটারি আর মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতিগুলোর কথাও বললো।
শুনে পিটার বললো, চলো, আব্বাকে গিয়ে সব বলি!
মাথা নাড়লো কিশোর। লাভ হবে না এখন বলে। আমাদের কথা বিশ্বাস করতে চাইবেন না। আরও জোরালো প্রমাণ জোগাড় করতে হবে আমাদের। জানার চেষ্টা করবো, মেজর আর তার চেলারা কিসের পেছনে লেগেছে। রবিন, বেগুনী জলদস্যুর কথা লোকাল হিস্টরি কি বলে, জানার চেষ্টা করো। মুসা, তুমি পাইরেটস কোভের ইতিহাস জানবে। আর আমি জানবো, ক্যাপ্টেন ফিলিপের অতীত কি বলে। পিটার, তুমি কি চাও এই রহস্যের সমাধান হোক?
নিশ্চয়ই চাই, আগ্রহের সঙ্গে বললো পিটার। আমাকে কি করতে হবে?
মাথা খাটাবে। তোমার বাবার অতীত জানার চেষ্টা করবে। মেজর নিরেক তার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড কেন, বোঝা দরকার। তোমাদের শেষ শশা তো। চারটেয়। আমাদের স্যালভিজ ইয়ার্ডে কখন দেখা করতে পারবে?
সাড়ে পাঁচটায়?
গুড। তোমরা?
আমি পারবো, জবাব দিলো রবিন।
আমিও, বললো মুসা।
বেশ, কাজে নেমে পড়া যাক তাহলে। সাড়ে পাঁচটায় হেডকোয়ার্টারে দেখা করবো আমরা। আলোচনা করবো, এর পর কি করা যায়।
.
১০.
কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে পাঁচটায় পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকলো পিটার। জঞ্জালের স্কুপের কাছে দাঁড়িয়ে তাকালো এদিক ওদিক। তিন গোয়েন্দার ছায়াও চোখে পড়লো না।
এই ছেলে, কি চাও? কোমল কণ্ঠে প্রশ্ন হলো।
চমকে ফিরে তাকালো পিটার। একজন সুন্দরী মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন তার পেছনে।
আমি…আমি কিশোর, রবিন আর মুসাকে…
ও। আমি কিশোরের মা, মারিয়া পাশা। বাইরের লোকের কাছে নিজেকে কিশোরের মা বলে পরিচয় দেন মেরিচাচী। ওদেরকে খুঁজছো? হেসে হাত নাড়লেন তিনি। গায়েব। সারাটা দিন দেখা নেই। খানিক আগে যা-ও বা ছায়াটা। দেখলাম, তারপরেই দেখি আবার গায়েব।
এখানে আছে?
ছিলো, পাঁচ মিনিট আগেও। জ্যান্ত রাডার একেকটা!.. আমি জানার আগেই কি করে জানি জেনে যায় কাজের জন্যে ডাকবো ওদের। নিজেদের ইচ্ছে হলে আমাকে কিছু বলতে হয় না, অসম্ভব খাটে। কিন্তু ইচ্ছে না। হলে.. বাক্যটা শেষ না করে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন মেরিচাচী, ওরা কি করে। গত কদিন ধরে ভালোই ছিলো, কাজটাজ ঠিকমতো করছিলো। আজকেই বদলে গেছে। নিশ্চয় নতুন কেস পেয়েছে। তা কি নাম তোমার?
পিটার ফিলিপ।
ও। তো পিটার, তুমি বরং আজ চলেই যাও। আরেকদিন এসো। ওরা আজ আর বেরোবে বলে মনে হয় না। জমানো কাজ যতোক্ষণ না অন্যকে দিয়ে শেষ। করাচ্ছি, ওরা আর বেরোচ্ছে না…
কিন্তু আমাকে তো আসতে বলে দিয়েছে। আরেকটু থাকি?
থাকতে পারো। তোমার ইচ্ছে। ওই যে, ওটা কিশোরের ওয়ার্কশপ। ওখানে বেঞ্চ আছে, গিয়ে বসো। তবে ওদেরকে আজ আর পাবে বলে মনে হয় না। হেসে, ইয়ার্ডের অফিসের দিকে রওনা হয়ে গেলেন মেরিচাচী।
সব চেয়ে বড় জঞ্জালের স্তূপটার পাশে ওয়ার্কশপ, সহজেই খুঁজে পেলো। পিটার। সাইকেলটা বাইরে রেখে ঢুকলো ভেতরে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কানে এলো ডাক। ফিসফিসিয়ে ডাকলো তার নাম ধরে কেউ, পিটার!
কেমন যেন ফাঁপা শোনালো ডাকটা। ভীষণ চমকে গেল পিটার। চারপাশে। তাকিয়ে কিছুই চোখে পড়লো না।
আরে ওখানে না, এখানে!
পিটারের মনে হলো, বিশাল জঞ্জালের স্তূপের ভেতর থেকেই আসছে কথা।
মু-মু-মুসা! তোতলাতে শুরু করলো পিটার। কি-কি-কি-কিশোর!
শশশ! আবার শোনা গেল ফিসফিসানি। আস্তে বলো! মেরিচাচী শুনলেই ধরে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগিয়ে দেবে! কেসফেস সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে।
চারদিকে তাকালে আবার পিটার, ওপরে তাকালো, নিচে তাকালো। কাউকেই চোখে পড়লো না। বেগুনী জলদস্যু
হেসে উঠলো অদৃশ্য কণ্ঠটা। বাইরে গিয়ে দেখে এসো, মেরিচাচী আছে। কিনা। তারপর ঢুকে পড়ো এই পাইপটায়! জলদি করো!
মোটা পাইপটার দিকে তাকালো পিটার। জঞ্জালের নিচে হারিয়ে গেছে ওটা, শুধু মুখ বেরিয়ে রয়েছে। চট করে গিয়ে দেখে এলো কেউ আছে কিনা। তারপর হাত-পায়ের ওপর ভর দিয়ে উবু হয়ে উঁকি দিলো পাইপের ভেতরে। আবছা আলোয় দেখলো মুসার মুখ। উপুড় হয়ে পাইপের ভেতরে শুয়ে আছে সে। চোখাচোখি হতেই হাসলো।
এটার নাম দুই সুড়ঙ্গ, বললো মুসা। হেড-কোয়ার্টারে ঢোকার আরও পথ আছে। তবে এটাই বেশি ব্যবহার করি আমরা।
হেডকোয়ার্টার! ওই মালপত্রের তলায় বসে কথা বলো তোমরা?
বলি, হাসলো আবার মুসা। এসো।
ঢুকে পড়লো পিটার। মুসার পিছে পিছে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো। মাথার ওপর দেখা গেল একটা চারকোণা ফোকর, আলো আসছে ওপথে। ওটা। ট্র্যাপোের, পরে বুঝলো সে। ওই পথে ঢুকলো একটা ঘরের মধ্যে। চেয়ার, টেবিল, ফাইলিং কেবিনেট আর আরও নানারকম জিনিস আর যন্ত্রপাতি রয়েছে ওই ঘরে। এমনকি একটা স্টাফ করা কাক পর্যন্ত সাজানো রয়েছে বুককেসের ওপর। তার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিশোর আর রবিন।