আমার ধারণা, পুরো ঘটনাটাই ঘটিয়েছেন মেজর, আপনাকে আর পিটারকে হাতে পাওয়ার জন্যে।
কিন্তু আগে কখনও পরিচয় ছিলো না মেজরের সঙ্গে! কখনও তার নামও শুনিনি। আমাদের কাছে কি চায়? টাকা নেই, পয়সা নেই, কিচ্ছু নেই আমাদের। এই শো বিজনেস চালিয়ে কোনোমতে খেয়েপরে বেঁচে আছি। তা-ও যায় যায় অবস্থা।
কিন্তু বিরাট এলাকা আপনার, মুসা বললো। অনেক জমি। হয়তো ওগুলো চায়?
আমার জমি নয় এটা, মুসা। ইভান পরিবারের কাছ থেকে লীজ নিয়েছি।
ইভান পরিবার? চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকালো কিশোর।
মাথা ঝাঁকালেন ক্যাপ্টেন। হ্যাঁ। পুরনো সেই জলদস্যুর বংশধর। এই কোভের মালিক এখনও ওরাই।
আপনি না বললেন ইভান গায়েব হয়ে গেছে? মুসার প্রশ্ন।
হাসলেন ক্যাপ্টেন। গিয়েছিলো। তারপর আবার ফিরে এসেছে। নতুন বেশে। তবে সেকথা বলি না শো-এর সময়। অযথা নাটকটা নষ্ট করে লাভ কি? স্রেফ গায়েব হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা অন্যরকম ব্যাপার থাকে।
কিশোর জিজ্ঞেস করলো, রাতে নাকি এখানে চোর আসে?
চোর কিনা বলতে পারবো না। রাতে ঘুরতেও বেরোয় অনেক মানুষ, নির্জন। জায়গা দেখলে বেড়াতে চলে আসে। তাছাড়া কাছে দিয়েই গেছে রেললাইন। কাজেই দুচারটে ভবঘুরে যে নেমে না পড়ে তা নয়। আমাদের বড়িঘরগুলোকে ঘুমানোর জায়গা হিসেবে বেছে নেয়। কিশোরের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। দেখো, মেজরের ব্যাপারে ভুল করছো তোমরা। এমন কিছু নেই আমাদের কাছে, যার জন্যে আমরা তার কাছে দামী হয়ে যাবো।
আব্বা, শেষ চেষ্টা করলো পিটার, কিছু না হোক, তিন গোয়েন্দাকে কাজ করতে দিতে অসুবিধে কি আমাদের? কিছু বেরিয়েও তো যেতে পারে?
না, দরকার নেই, দৃঢ়কণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন। অযথা ভালো মানুষকে হয়রানী করা আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া ভালো টাকা দিচ্ছে আমাদেরকে মেজর। এক ঘন্টা গল্প বলার জন্যে কে পঁচিশ ডলার করে দেবে? আমি সেটা হারাতে চাই না। তোমরা ওকে খোঁচাতে যাবে না, ঠিক আছে?
কিশোর কিংবা মুসা জবাব দেয়ার আগেই বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল, ফিলিপ! দরজা খুলুন! বলেছিলাম না, চোর আসে!
.
০৯.
ভিকটর ইভানস! উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন ক্যাপ্টেন।
নীল টি-শার্ট পরা মাঝারি উচ্চতার একজন মানুষ ট্রেলারে ঢুকলো। মুখ রাগে। লাল। এই ফিলিপ, বলেছিলাম না খেয়াল রাখতে? টাওয়ারে লোক যায় কেন? একটা ছেলে বোটহাউসে ঢোকার চেষ্টা করছিলো। জিজ্ঞেস করলাম, বললো গোয়েন্দা। ইহ! আপনার কাজ নাকি করছে।
রবিন! প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলো কিশোর আর মুসা।
কী? দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলো ভিকটর। এই ছেলে, এসো, ঢোকো। রবিন ট্রেলারে ঢুকলে তাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এটাকে চেনো, ফিলিপ? চোর-টোর না তো?
না! গরম হয়ে বললো মুসা। চোর আমরা কেউই নই।
চোখ পাকিয়ে মুসার দিকে তাকালো আগন্তুক। তোমার সঙ্গে কথা বলে কে? ফিলিপ, এটাকে ওরা চেনে কি করে?
সরি, ভিকটর, ক্যাপ্টেন বললেন, আপনাকে বিরক্ত করেছে। ওদের হয়ে আমি মাপ চাইছি। ওরা পিটারের বন্ধু। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে…।
তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বললো কিশোর, বেগুনী জলদস্যুর কাহিনী শুনতে, স্যার। ইস্কুলের ম্যাগাজিনে লিখবো। ওর নাম রবিন, গবেষণার কাজগুলো সে-ই করে। তিনজনে একসাথে কাজ করি আমরা। জায়গাটা ভালোমতো দেখতে গিয়েছিলো, বর্ণনা দেয়ার জন্যে। আপনাকে বিরক্ত করার, কিংবা আপনার জায়গার ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছেই ওর নেই। টাওয়ারে তাহলে আপনিই থাকেন। ভিকটর ইভানস, তার মানে কি বেগুনী জলদস্যু উইলিয়াম ইভানসের বংশধর আপনি?
মোরগের মতো ঘাড় কাত করে কিশোরের দিকে তাকালো ভিকটর। খুব। চালাক মনে হচ্ছে? ম্যাগাজিনে লেখ বা জাহান্নামে লেখ, সেটা তোমাদের ব্যাপার। খবরদার, আমার এলাকার ধারেকাছে আসবে না! ওকের সারিটার দিকে আর যাবে না, মনে থাকে যেন। ক্যাপ্টেনের দিকে ফিরে বললো, এবার ছেড়ে দিলাম। আপনাকেও বলে দিচ্ছি, টুরিস্ট হোক আর যে-ই হোক, আমার সীমানায় যেন না ঢোকে।
ঢুকবে না, কথা দিলেন ফিলিপ।
না ঢুকলেই ভালো। বেরিয়ে গেল ভিকটর। দড়াম করে লাগিয়ে দিয়ে গেল ট্রেলারের দরজা।
লোকটা বেরিয়ে যেতেই কিশোরের দিকে ফিরলেন ক্যাপ্টেন। আসল কথা ভিকটরকে বললে না কেন?
কথা গোপন রাখতে হয় গোয়েন্দাদের। যাকেতাকে সব বলে দেয়া উচিত না। মিস্টার ইভানসকে চিনি না, কি কাজ করে তা-ও জানি না। অচেনা একজন মানুষকে পেটের কথা কেন বলবো?
তা বটে, আনমনে ঘাড় দোলালেন ক্যাপ্টেন।
চোরের ওপর খুব রেগে আছে মনে হয়?
চোরকে কে পছন্দ করে? তাছাড়া বিনা অনুমতিতে কেউ ওর এলাকায় ঢুকলে রাগ তো করবেই।
আচ্ছা, মুসা বললো, জলদস্যু আবার সম্পত্তির মালিক হয় কি করে? সেটা। আবার বংশধরদের জন্যে রেখেও যায়? মানে, নিজেই তো একটা অপরাধী। রাষ্ট্র। কি স্বীকৃতি দেয়?
ক্যাপ্টেন হাসলেন। উইলিয়াম ইভানস খুব চালাক মানুষ ছিলো, মুসা। শুনেছো, কখনও ধরা পড়েনি সে। ১৮৪০ সালের সেই দিনে টাওয়ার থেকে গায়েব হয়ে যায়। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের রেখে যায়। আঠারোশো আটচল্লিশ সালে আবার এসে হাজির হয় একদিন, আমেরিকান সৈনিকের বেশে, মেকসিকানদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে তখন। আমেরিকা জিতলো, ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে গেল। ইউনাইটেড স্টেটসের অংশ। যুদ্ধে জেতার পুরস্কার হিসেবে আমেরিকান সরকারের কাছ থেকে তার জায়গা ফেরত পায় ইভানস। কারণ, কেউ প্রমাণ। করতে পারেনি যে সে-ই বেগুনী জলদস্যু। তখন আঙুলের ছাপ দেখে অপরাধী। ধরার উপায় জানা ছিলো না কারো। বেগুনী জলদস্যু কখনও ধরাও পড়েনি কারো। হাতে। তার কোনো ছবি ছিলো না, যা দেখে বলবে বেগুনী জলদস্যু আর উইলিয়াম ইভানস একই লোক। কাজেই সৈনিক হিসেবে জায়গাটা সরকারের কাছ থেকে নিতে কোনো অসুবিধে হলো না তার। তার পর অনেক বছর গেল। তার বংশধরেরা জায়গা বিক্রি করে করে ছোট করে ফেললো। বাকি রইলো শুধু ওই টাওয়ার আর উপদ্বীপটা। ভিকটরও কোথায় চলে গিয়েছিলো। বহু বছর পরে আবার ফিরে এসেছে।