গাছপালার ভেতর দিয়ে সরে চলে এলো রবিন, আড্ডার উল্টোদিকে। ফিরে তাকালো। ডানে নজর লোকটার। কারো দিকে না তাকিয়ে হেঁটে চললো রবিন। আইস ক্রীম ওয়ালার পাশ কাটালো। টিকেট বুঁদ বন্ধ হয়ে গেছে, তবে গেট খোলা। ঢুকে পড়লো সে। হঠাৎ মোড় নিয়ে ঢুকে গেল ওকের জঙ্গলের মধ্যে, যেগুলোর অন্যপাশে রয়েছে পাথরের টাওয়ারটা।
টাওয়ারের কাছে এসে থামলো সে। চারতলা পুরনো বাড়ি। উপদ্বীপের উত্তরে, পানির ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। কাঠের বেড়া দেয়া আছে, রাস্তা থেকে সরাসরি যাতে কেউ ঢুকতে না পারে এখানে। গাছপালার পরে, টাওয়ারের লাগোয়া আর কিছু নেই, শুধু লন, আর বালিতে ঢাকা চত্বর। পুরনো একটা বোটহাউস রয়েছে, ধসে পড়েছে এখন। কি দেখছে টনি? টাওয়ার? না ওই ভাঙা বোট-হাউস? বোট হাউসের ভেতরেই প্রথমে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো রবিন।
কালচে হয়ে গেছে বোটহাউসের তক্তাগুলো। ক্ষয়া। সামনের দিকে একটামাত্র জানালা। বড় দরজাটা বন্ধ। বাঁয়ে কাত হয়ে রয়েছে ঘরটা, বেশ কিছু তক্তা খসে গেছে। বেগুনী জলদস্যুর আমল থেকেই বোধহয় আছে ওটা ওখানে।
জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিলো সে। চোখে পড়লো শুধু কালো পানি। দরজায় ঠেলা দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো।
আচমকা শক্ত কি যেন লাগলো পিঠে। ঠেসে ধরা হয়েছে।
ঘোরো, খোকা, আদেশ দিলো একটা ভারি কণ্ঠ। খুব ধীরে।
ঘুরে দাঁড়ালো রবিন। চওড়া কাঁধ, মাঝারি উচ্চতার একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। পরনে শাদা ট্রাউজার, পায়ে দড়ির স্যাণ্ডাল, গায়ে নীল টি-শার্ট। হাতের। পিস্তলটা ধরে রেখেছে রবিনের পেট বরাবর।
.
০৮.
ক্যাপ্টেন ফিলিপ এভাবে নিরাশ করবেন, ভাবেনি কিশোর আর মুসা। যাওয়ার জন্যে ঘুরলো।
পিটার বলে উঠলো, আব্বা, ওদেরকে আমি চিনি। কি বলতে এসেছে, অন্তত শোনো তো?
আরে দূর! কি আবার বলবে? গোলমাল পাকাতে এসেছে, হাত নেড়ে উড়িয়ে দিলো যেন নোনতা জেসন। যাক, বেরিয়ে যাক।
অতোটা রুক্ষ ব্যবহার করলেন না ক্যাপ্টেন। আমার কাজ আছে। ঠিক আছে, পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। জেসন, টিকেট বুদে যাও। এই, তোমরা এসো আমার সঙ্গে।
দুই গোয়েন্দাকে ট্রেলারে নিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন। কাউচ দেখিয়ে ওদেরকে বসার ইঙ্গিত করলেন। পিটার বসলো একটা চেয়ারের হাতলে।
বলে ফেলো, ফিলিপ বললেন।
দুদিন আগের সাক্ষাৎকারের কথা সংক্ষেপে বললো কিশোর। কি করে ঠকিয়েছেন মেজর, সে কথাও জানালো।
ঠকালো কোথায়? প্রশ্ন তুললেন ক্যাপ্টেন। গল্প পছন্দ হয়নি, টাকা দেয়নি, ব্যস। মুছে ফেলেছে। পছন্দ না হলে টাকা কেন দেবে?
বিজ্ঞাপনে তো সেকথা বলেনি, মুসা বললো। বলেছে, যে-ই গল্প শোনাবে, তাকেই দেবে।
এটা হতে পারে না। যে যা খুশি শুনিয়ে আসবে, তার জন্যেই টাকা দিতে হবে নাকি? বিজ্ঞাপনটা লেখা হয়নি ঠিকমতো।
বেশ, ধরে নিলাম লেখা হয়নি। কিন্তু গল্প পুরোটা না শুনেই কি করে বুঝলেন। উনি, ভালো না মন্দ? শুরু করতে না করতেই তো থামিয়ে দিয়েছেন অনেককে। কিশোর বললো।
যে বোঝার সে অল্প শুনেই বুঝতে পারে। তাছাড়া পয়লা দিন অনেক বেশি লোক চলে এসেছিলো। কি করে শুনবে এতো লোকের গল্প? বরং বুদ্ধিটা ভালোই। বের করেছিলো, শহরের বাইরে থেকে যারা এসেছিলো তাদের গল্প শুনবে।
তাহলে ওকথাও বিজ্ঞাপনে লিখে দিতে পারতো, পিটার বললো। শহরের ভেতরের কারো গল্প যদি না-ই শুনবে তাহলে ঢালাও ঘোষণা দেয়া কেন? অবিচার করা হলো না? ডেকে এনে ফিরিয়ে দেয়া? আমি হলে সোজা গিয়ে পুলিশকে রিপোর্ট করে দিতাম। ..
ছেলের কথার জবাব দিতে পারলেন না ক্যাপ্টেন। দ্বিধা করলেন। ইয়ে…
চাপটা বাড়ালো কিশোর, লোকের বাড়ি বাড়ি সার্কুলার দিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিলো? সাক্ষাঙ্কারই যদি না নেবে, কেন এই অহেতুক হয়রানী?
তা ঠিক, গাল চুলকালেন ক্যাপ্টেন। তবে মনে হয় আমার আর পিটারের গল্পই শুধু শুনতে চেয়েছে।
তাহলে শুধু আপনাকে ডেকে নিয়ে গেলেই পারতেন। আর তা-ই বা কি করে বলবেন? আপনার বলে আসা গল্পও তো মুছে ফেলেছেন মেজর।
আমারটাও মুছেছেন!
নিজের চোখে দেখেছি! জোর পেয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
অসম্ভব! তোমরা কি জন্যে এসেছো…
আব্বা, বাধা দিয়ে বললো পিটার, ঘাপলা একটা আছে। মুসা আর কিশোর– খুব ভালো গোয়েন্দা। আমার মনে হয় না ওরা ভুল করছে।
ডিটেকটিভ? এই বয়েসে অনেক ছেলেই গোয়েন্দা সাজতে চায়। এক ধরনের খেলা।
মোটেও খেলা নয়, স্যার। গম্ভীর হয়ে গেছে কিশোর। পকেট থেকে প্রথমে তিন গোয়েন্দার কার্ড, তারপর পুলিস ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের প্রশংসাপত্র বের করে দিলো।
পড়লেন ফিলিপ। মাথা দোলালেন। হু, পুলিসের একজন চীফ ফালতু কথা বলবেন না। তোমাদের সম্পর্কে খুব উঁচু ধারণা তার। কিন্তু কিশোর, মানুষ মাত্রেই ভুল করে। আমার বিশ্বাস, মেজরের ব্যাপারেও তোমরা ভুল করছে।
আগে বলো তাহলে, চেপে ধরলো পিটার, তোমার গল্প মুছলো কেন?
হতে পারে, টেকনিক্যাল কোনো কারণ ছিলো। কিংবা পরে বিশেষ টেপে। রেকর্ড করার কথা ভেবেছিলো। দুদিন ধরেই তো আমাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। ওগুলো নিশ্চয় মুছছে না।
জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, স্যার, পরামর্শ দিলো কিশোর।
ভ্রূকুটি করলেন ক্যাপ্টেন। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বক্তব্যটা কি, বলে ফেলো তো?