আ-আ-আমরা ক্যাপ্টেন ফিলিপকে খুঁজছিলাম, মুসা বললো। চো-চো
চুপ! আবার মিছে কথা! জানালা দিয়ে উঁকি মেরে মানুষ খুঁজছিলে! দাঁতে দাঁত ঘষলো লোকটা। দিনেও আসে, রাতেও!
রাতে? কথাটা ধরলো কিশোর। প্রায়ই আসে নাকি?
আসে কিনা জানো না?
এই সময় ট্রেলারের কোণ ঘুরে বেরিয়ে এলো পিটার ফিলিপ। অবাক হয়ে তাকাতে লাগলো তিনজনের দিকে। কিশোর আর মুসাকে চিনতে পারলো। আরি, তোমরা?
তাড়াতাড়ি বললো মুসা, তোমার আব্বাকে খুঁজতে এসেছিলাম, পিটার।
ওদের চেনো? সন্দেহ যায়নি টিকেট বিক্রেতার।
চিনি, জেসন আংকেল। আমাদের ইস্কুলে পড়ে। ওটা নামান।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভোজালিটা খাপে ভরে রাখলো জেসন। মুখোশ খুললো। গত দুরাত ধরে চোরের আনাগোনা বড্ড বেড়েছে!
জেসন আংকেলেরও দোষ নেই, কৈফিয়তের সুরে বললো পিটার। সন্দেহ হবেই। ইদানীং বড় বেশি চোর আসে। …আংকেল, ও কিশোর পাশা। আর ও মুসা আমান। ওদেরকে বললো, ইনি আব্বার হেলপার; জেসন গিলবার্ট। ডাক। নাম নোনতা জেসন।
নোনতা? বিড়বিড় করলো কিশোর। তারমানে জাহাজে কাজ করেছেন? নাবিক ছিলেন?
নেভিতে বিশ বছর চাকরি করেছি, জেসন বললো।
পাইরেটস কোভে এই প্রথম এসেছি আমরা। ক্যাপ্টেন ফিলিপের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিলো। মেজর নিরেকের কথা কিছু জিজ্ঞেস করতাম।
কফি মেশিনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল, পিটার বললো। সেটা দেখছে আব্বা। এসো।
কফি স্ট্যাণ্ডেই পাওয়া গেল ক্যাপ্টেনকে। রেগে যাওয়া বেঁটে এক টুরিস্টকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
ঠকানো হয়েছে আমাদের! ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো লোকটা। পাইরেট শো না ছাই! টাকা ফেরত দিন!
আপনার ভালো লাগেনি, সেজন্যে আমরা দুঃখিত, স্যার, শান্ত কণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন। কিন্তু টাকা ফেরত দেয়া যাবে না। সব জিনিসই সবার কাছে ভালো লাগবে, এমন কোনো কথা নেই। অমন যে বিখ্যাত ডিজনিল্যাণ্ড, সেটাও তো ভালো লাগে না অনেকের কাছে। তারা কি টাকা ফেরত পায়?
জ্বলে উঠলো লোকটার চোখ। ওরা আপনাদের মতো মিথ্যে কথা বলে না! আপনারা স্রেফ ঠকিয়েছেন। বেশ, দেখে নেবো আমি। বেটার বিজনেস বুরোতে নালিশ করবো!
কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন মহিলা আর ছেলেকে ইশারায় সঙ্গে যেতে বলে পার্কিং লটের দিকে এগোলো সে। বেগুনী একটা রুমাল বের করে কপালের ঘাম। মুছলেন ফিলিপ। পিটারের দিকে চোখ পড়তে আফসোস করে বললেন, আর কদ্দিন এভাবে চলবে বুঝতে পারছি না! টাকাও পাচ্ছি না, ঠিকমতো চালাতেও পারছি না সব!
বন্ধই করে দিন, ক্যাপ্টেন, হাত নেড়ে হতাশ কণ্ঠে বললো নোনতা জেসন। হবে না যখন, হবেই না। খালি খালি কষ্ট করে, লোকের কথা শুনে লাভ আছে?
কথাটা পছন্দ হলো না পিটারের। কড়া চোখে একবার জেসনের দিকে তাকিয়ে বাবার দিকে ফিরলো। হবে। চেষ্টা করলেই হবে।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন ক্যাপ্টেন। হয়তো হবে। ঘন্টায় পঁচিশ ডলারে যদি গল্প জোগাড় করতে পারে মেজর, আর দিতে থাকে আমাদের, দর্শক ধরে রাখা হয়তো যাবে।
আমি জানি, আব্বা, মেজর পারবে।
স্যার, গলা পরিষ্কার করলো কিশোর। এই ব্যাপারেই আলোচনা করতে এসেছিলাম আমরা।
আলোচনা? কিশোর আর মুসার দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকালেন ক্যাপ্টেন। কে তোমরা?
আমাদের ইস্কুলেই পড়ে। পরিচয় করিয়ে দিলো পিটার। মেজর নিরেকের ব্যাপারে কথা বলতে চায় তোমার সঙ্গে।
কি কথা? ক্যাপ্টেন জানতে চাইলেন।
মেজর কি করছেন? বলে উঠলো মুসা।
তাকে সন্দেহ হয় আমাদের, বললো কিশোর।
সন্দেহ! কিশোরের কথার প্রতিধ্বনি করলেন যেন বেগুনী জলদস্যুর আড্ডার মালিক। মেজর নিরেককে সন্দেহ! আশ্চর্য! দিন দিন মানুষগুলো যে সব কি হয়ে যাচ্ছে! নিজের চরকায় তেল দেয়া যেন বন্ধ করে দিয়েছে সবাই!
.
মেজর নিরেক আর রিগোর বেরোনোর অপেক্ষায় রইলো রবিন। বেরোলো ওরা। ভ্যান নিয়ে রওনা হলো। পেছনে চিহ্ন দেখে দেখে অনুসরণ করলো সে।
পাইরেটস, কোভে চলে গেছে চিহ্নগুলো। পার্কিং লট পেরিয়ে গিয়ে ঢুকেছে বেগুনী জলদস্যুর আড়ার ভেতরে। হাতে গোনা কয়েকটা গাড়ি দেখা গেল লটে। মাত্র দুজন দর্শক দাঁড়িয়ে রয়েছে আইস ক্রীম ভ্যানটার সামনে। ওটার পাশ দিয়ে চলে গেছে চিহ্ন। ঢুকে গেছে ছোট বনের ভেতরে। হ্যারিসনস ট্রী সার্ভিসের একজন শ্রমিক ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে একটা গাছের যেন কি করছে। এদিক ওদিক তাকালো রবিন। ভ্যানটাও চোখে পড়লো না, মেজর কিংবা রিগোকেও দেখলো না। একটা রাস্তা ধরে উত্তরে চলে গেছে চিহ্ন।
ভাবছে রবিন। আইস ক্রীম ভ্যান! ট্রী-সার্ভিস ট্রাক! এসব গাড়ি নিয়ে মেজরের চত্বরে ঢুকেছিলো দুজন ড্রাইভার, তারপর বেরিয়ে গেছে। ওরাই এসেছে এখানে,পাইরেটস কোভে চিহ্ন যখন রয়েছে, মেজরও এসেছেন। কেন? লোকগুলোর সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন আবার?
সাইকেলটা ঝোঁপের ভেতর লুকিয়ে রেখে পা টিপে টিপে ট্রী-সার্ভিসট্রাকটার কাছে চলে এলো রবিন। লোকটাকে দেখলো ভালোমতো। চিনতে পারলো। টনি! কি মনে হতে ফিরে তাকালো আইস ক্রীম বিক্রেতার দিকে। চিনতে পারলো তাকেও। খাটো, মোটা, টাকমাথা লোকটা, যার নাকের নিচে বেমানান গোঁফ।
তার মানে ছদ্মবেশী ওরা সবাই! কেন এসেছে? নিশ্চয় বেগুনী জলদস্যুর হআড়ার ওপর চোখ রাখতে। চব্বিশ ঘন্টাই চোখ রাখার ব্যবস্থা করেছে ওরা।
ট্রাকের পেছনে বসানো লম্বা লিফটটা তুলে নিলো টনি। ওপরে উঠে গেল। তারপর বিনকিউলার বের করে দেখতে লাগলো। কি দেখছে, বুঝতে পারলো না। রবিন। বেড়া আর গাছপালার জন্যে দেখতে পাচ্ছে না সে। দ্রুত মনস্থির করে নিলো। নিরেক আর রিগো কোথায় গেছে, পরেও দেখা যাবে। আপাতত টনি কি দেখছে সেটা জানা দরকার।