কি করব?
সমস্ত ভার ফেলে দিতে হবে। আগে গিয়ে ডুবুরির সরঞ্জামগুলো ফেল। ওগুলোই সব চেয়ে ভারি।
ছুটে কেবিনে ফিরে এলো মুসা। জানালা দিয়ে দেখলো, ডজ আইল্যান্ড প্রায় মাইল দুয়েক দূরে এখনও। তীব্র গতিতে ট্যাক্সিইং করে ছুটছে বিমান। তবে ওড়ার শক্তি অর্জন করতে পারছে না কিছুতেই। ওমর ভাই বলেছে, ডাইভিং গীয়ারগুলো ফেলে দিতে। বোঝা কমাতে।
একটা মুহূর্ত দ্বিধা করলো না ডজ। টেনে নিয়ে এলো বেজায় ভারি ডাইভিং কিট, সাথে লাগানো চল্লিশ পাউন্ড ওজনের বুটসহ। দরজা দিয়ে ফেলে দিলো পানিতে। ওগুলো অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগেই ফেললো হেলমেটটা। তার পর একে একে পাম্প, লাইন, আর আরও যা যন্ত্রপাতি আছে, সব।
ঝিনকুগুলোর দিকে হাত বাড়ালো মুসা। তাকে বাধা দিলো সাগরের হাসি, না, দরকার নেই। আমি নেমে যাচ্ছি। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে। তার পেছনে গেল ঝিনুক।
ধরো! ধরো! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর।
ভয় নেই, ডজ বললো। মাত্র এক মাইল। ওটুকু সাঁতরানো কিছুই না ওদের জন্যে।
অনেকখানি ভারমুক্ত হয়ে গিয়ে অবশেষে উঠতে শুরু করলো বিমানটা। পানি ছেড়ে ওপরে উঠতেই ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো কেবিনের পানি। আরও কমে যেতে লাগলো ভার। লেগুনের ওপর যখন চক্কর মারতে শুরু করলো ওটা, সব পানি বেরিয়ে গেছে ততক্ষণে।
ওমরের কাছে এসে দাঁড়ালো কিশোর। তাকে বললো ওমর, সবাইকে গিয়ে বলো, বেশি পানিতে নামালে আবার পানি ঢুকে ডুবে যাবে। পানির কিনারে নামিয়ে বালিতে তুলে ফেলার চেষ্টা করবো। পানি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সবাই লাফিয়ে নেমে যায়। ভার কম থাকলে বালিতে তোলা সহজ হবে।
ছুটে এসে সবাইকে কথাটা বললো কিশোর।
যতটা সম্ভব আস্তে পানিতে নামানোর চেষ্টা করলো ওমর। কিন্তু বিমানের পেট পানি ছুঁতে না ছুঁতেই আবার গলগল করে পানি ঢুকতে আরম্ভ করলো। সোজা সৈকতের দিকে ছোটালো সে।
পঞ্চাশ গজ দূরে থাকতে প্রথম লাফ দিলো মুসা। বিশ মাইল গতিতে ছুটছে তখন বিমান। মাথা তুললো বিমানের পেছনে ঢেউ আর ফেনার মধ্যে। তার পেছনে গেল কিশোর। সবার শেষে ডজ। পানিতে হাবুডুবু খেল তিনজনেই, সব চেয়ে বেশি কিশোর।
আবার যখন কেবিনে এসে উঠলো তিনজনে, কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওমরকে। ঝিনুকগুলো বের করে সৈকতে ফেলার চেষ্টা করছে। তিনজনকে দেখে কাজের ভার ওদের ওপর ছেড়ে দিয়ে ককপিটে ফিরে এলো সে। একটু একটু করে ইঞ্জিনের জোর বাড়িয়ে বালিতে টেনে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো বিমানটাকে। ঝিনুক ফেলতে শুরু করেছে অন্য তিনজনে। এতে আরও কমে যেতে লাগলো। ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে চললো বিমান।
সমস্ত জিনিসপত্র বের করে আনা হলো বিমান থেকে। কতটা ক্ষতি হয়েছে দেখতে বসলো ওমর। ডজের উদ্দেশ্যে বললো, তুমি তো মানাই করেছিলে। বললে কি দরকার। এ জন্যেই বুঝলে, এ কারণেই ওগুলো আনতে চেয়েছি আমি। জানতাম প্রবালে ঘষা খেয়ে ফুটো হয়ে যেতে পারে। পাতগুলো এনে ভাল করেছি, কি মনে হয়?
নীরবে মাথা ঝাঁকালো শুধু ডজ।
আরেকটু হলেই মারা পড়েছিলো, কিশোর বললো। ডজের বড়জোর তিন ইঞ্চি দূর দিয়ে গিয়েছিলো মাথাটা। একটু সরে লাগলেই এতক্ষণে…, কথাটা শেষ করে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সে।
বাপরে বাপ, যে জায়গার জায়গা, হেসে বললো ওমর। বিমানের তলায় আরমার প্লেট লাগিয়ে নেয়া দরকার। যাকগে। ক্ষতি বেশি হয়নি। পাত কেটে লাগিয়ে ফুটোটা বন্ধ করে ফেলা যাবে। বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত হবে, তবে ঝিনুক তোলার এখানেই ইতি।
আর বোধহয় দরকারও নেই, মুসা বললো।
না। অনেক হয়েছে, সায় জানালো ডজ। যা পেয়েছি নিয়ে চলে যাই। পরে আসা যাবে।
ওই যে ওরা আসছে, কিশোর বললো। আরেকটু দেরি হলেই ভাবনায় পড়ে যেতাম।
একটুও ক্লান্ত মনে হলো না দুই পলিনেশিয়ানকে। স্বচ্ছন্দে সাঁতরে আসছে। কাছে এসে হাত তুলে হেসে বললো, কাওহা! যেন পুরো ব্যাপারটাই একটা রসিকতা।
ঝিনুকগুলো রোদে ফেলে রাখতে হবে, ডজ বললো। আশা করি কালই খুলতে পারব। এই, হাত লাগাও, কিশোর। আর মুসাকে বললো সে। শেষ করে ফেলি।
এগুলোতেও নিশ্চয় কিছু পাওয়া যাবে, ঝিনুকগুলো দেখিয়ে ওমর বললো। স্কুনার একটা কিনে ফেলতে পারবে, ডজ। আরও মুক্তো তুলতে ফিরে আসতে পারবে।
চোয়াল ডললো ডজ। কি জানি। আসতে তো চাইই। তবে মুক্তো পাওয়া এবং ধরে রাখার জন্যে ভাগ্য লাগে। আমার সেটা আছে বলে মনে হয় না। যা কিছু ভালো হয়েছে সব তোমাদের ভাগ্যে।
ননসেন্স! অধৈর্য হয়ে হাত নাড়লো ওমর। ওসব বিশ্বাস কর নাকি। কাল বিকেলে রাটুনায় ফিরে যাচ্ছি আমরা। এর মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
৯
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলো ওরা। কাজে লেগে গেল। বিমানটা মেরামত করতে গেল ওমর, কিশোর আর মুসা। ধাতুর পাত কেটে টুকরো করে ফুটোটা বন্ধ করবে। ডজ, ঝিনুক আর সাগরের হাসি গেল ঝিনুকগুলো খুলে দেখতে। পানির ধার থেকে দূরে সৈকতের ওপরে বসে খুলতে শুরু করল ওরা। মাঝে মাঝে শোনা যেতে লাগলো ওদের চিৎকার, মুক্তো পেলেই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠছে।
ভালই কাটলো দিনটা। বিকেলের শেষে আকাশের নীল যখন মলিন হয়ে এলো, মেরামতের কাজ তখন শেষ করে এনেছে ওমররা। আর মাত্র কয়েকটা ঝিনুক খোলা বাকি ডজদের। প্রথম দিনের মত এত ভাল আর বেশি ঝিনুক পাওয়া গেল না, তবে মন্দ পায়নি। ঝিনুকগুলো ঠিকমত পচার সময় পায়নি, নরম হয়নি, ফলে খুলতে সময় লাগছে।