আচ্ছা, ঠিক আছে, শুধু ডজ। মাথা ঝাঁকাল মুসা। দ্বীপের খাবারের কথা বলছেন তো? সেকথা আর মনে করিয়ে দেবেন না, ডজ ভাই…
আবার ভাই।
থুককু। মনে থাকে না। নিজের চেয়ে বয়সে বড় কাউকে দেখলেই… যাকগে, ডজ। হ্যাঁ, দক্ষিণের কিছু দ্বীপে আমরাও বেরিয়ে এসেছি, ডজ। শুয়াপোকার বাচ্চা পর্যন্ত খেয়ে এসেছি আমরা তিনজনে…
তিনজন? আরেকজন কোথায়?
গানের অফিস চালাতে গেছে। রবিন মিলফোর্ড, বললো ওমর। আমাদের আরেক বন্ধু। ওরা তিনজনে মিলে একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছে। নামঃ তিন গোয়েন্দা। সংক্ষেপে তিন গোয়েন্দার কথা ডজকে জানালো সে।
ভালো, খুব ভালো, মাথা দুলিয়ে বললো ডজ। ওমর শরীফের সঙ্গে যখন এতো মাখামাখি, তখনই বুঝেছি স্বভাবও একই হবে। বেপরোয়া, অ্যাডভেঞ্চারাস, দুঃসাহসী…
কাকে কি বলছো? তুমি কি আর কম নাকি?
সেজন্যেই তো তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে। হাঁ হাঁ করে হাসলো ডজ। অন্য তিনজনের মাঝেও সংক্রমিত হলে হাসিটা।
খাবারের অর্ডার দিয়ে আবার ডজের দিকে তাকালো ওমর, হ্যাঁ, এবার বলো। কি জন্যে আমেরিকায় এসেছে? বেড়াতে আসেনি। তোমার আচরণ বলে দিচ্ছে।
সত্যি কথা বলবো? টাকার জন্যে এসেছি। শুনেছি, এখানে নাকি বাতাসে টাকা ওড়ে।
ঠিকই শুনেছে। তবে তার পেছনে ছোটার লোকেরও অভাব নেই। প্রতিদিন ধরার জন্যে হন্যে হয়ে ছুটছে কোটি কোটি লোক। বেশির ভাগই ধরতে পারছে না, মুখ চুন করে বাড়ি ফিরছে। এই আমার কথাই ধরো না। অনেক তো ছুটলাম, বড় লোক আর হতে পারলাম না। কিছুদিন থেকে ভাবছি, পুলিশের চাকরিতে যোগ দেবো। ভালো অফার এসেছে।
চেহারা কিন্তু চকচক করছে তোমার, ডজ বললো। পকেটে পয়সা না থাকলে অমন হয় না। টাকার জন্যে নয়, পুলিশে যোগ দেয়ার যদি ইচ্ছে হয়ে থাকে তোমার, তাহলে ওই বেদুইনগিরি করার লোভে। অ্যাডভেঞ্চার। তা কতো জমিয়েছো?
ব্যাপারটা কি, বলো তো? এতোই টানাটানিতে পড়ে গেলে? ঠিক আছে, লাগলে অল্পস্বল্প ধার দিতে পারি।
অল্পতে হবে না, বেদুইন, বিষন্ন কণ্ঠে বললো ডজ, গাদা গাদা দরকার আমার। আর ধারটারের মধ্যেও যাচ্ছিনে। আমি চাইছি পার্টনার।
গাদা গাদা বলতে কতো বোঝাচ্ছে?
ধরো, শুরুতে হাজার পঞ্চাশেক।
শিস দিয়ে উঠলো ওমর। কেন? দ্বীপ কিনবে নাকি?
দ্বীপফীপের দরকার নেই আমার। নাক দিয়ে ঘোৎ ঘোঁৎ করলো ডজ। বিনে পয়সাতেই হাজারটা দ্বীপ দখল করে নিতে পারি, ইচ্ছে করলে। পয়সা লাগে না। সাগরের ওই দক্ষিণ অঞ্চলটায় খালি পড়ে আছে হাজারে হাজারে। থাকার লোকও নেই। তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও গিয়ে থাকতে পারো। না ভাই, ওসব নয়। আমার উচ্চাকাঙ্খা আরেকটু বেশি।
বলে ফেলো। দেখি সাহায্য করা যায় কিনা।
উজ্জ্বল হলো ডজের মুখ। সত্যি সাহায্য করবে আমাকে? টাকার ব্যবস্থা করে দেবে?
সেই টাকা দিয়ে তুমি কি করতে চাও, তার ওপর নির্ভর করে দেয়া না দেয়া। তোমাকে তো আমি চিনি। আর স্মৃতিশক্তিও অতোটা খারাপ না আমার। আগেও বহুবার নানারকম উর্বর বুদ্ধি এসেছিলো তোমার মাথায়। কোটিপতি হবার অনেক পরিকল্পনা করেছিলে। কয়েকবার ফতুর করেছে আমাকে। আর ফতুর হতে রাজি আমি।
ছুরি কাঁটা তুলে নিয়েছিলো ডজ। নামিয়ে রেখে হেলান দিলো চেয়ারে। স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ওমরের দিকে। এক ঝুড়ি মুক্তো যদি দিয়ে দেয়া হয় তোমাকে, নিজেকে আর ফতুর ভাববে?
হাসলো ওমর। বাড়িয়ে বলার স্বভাবও গেল না তোমার। একমুঠো বললেও নাহয় বিশ্বাস করতাম।
এক ঝুড়িই বলছি! বড় এক ঝুড়ি! জোর দিয়ে বললো ডজ। আর এখানকার গহনার দোকানে যেসব মটরের দানার মতো দেখলাম, সেরকম নয়। আরও অনেক বড়। পায়রার ডিমের সমান।
তাহলে তো ভালোই হয়, স্বীকার করলো ওমর। তারপর মাথা নাড়লো অবিশ্বাসীর ভঙ্গিতে, কিন্তু তা তো তুমি দিতে পারবে না। কারণ সেই মুক্তো আনতে হলে ডালাস কিংবা হলিউডের বড়বড় বাড়িতে যেতে হবে তোমাকে। দুর্গম দুর্গ একেকটা। সেসব বাড়িতে ঢোকার সাধ্য বড় বড় ডাকাতেরও নেই। তবে সঙ্গে যদি নিয়ে এসে থাকো, আলাদা কথা।
সঙ্গে আনতে পারলে কি আর তোমার কাছে টাকা চাইতাম নাকি? গুঙিয়ে উঠলো ডজ। তবে আমি দেখেছি।
নাকি অন্য কেউ দেখে তোমাকে বলেছে? সেকথাই শোনাচ্ছাে।
গ্লাস তুলে নিয়েছিলো, দড়াম করে নামিয়ে রাখলো ডজ। আরেকটু জোরে আছাড় দিলেই ভেঙে যেতো। চেহারার মারমুখো ভাবটা আরও প্রকট হয়ে গেছে।
দেখ, বেদুইন, আমি বলছি আমি দেখেছি। নিজের চোখে। বিশ্বাস করো দয়া করে!
মাথা ঝাঁকাল ওমর। বেশ, এতোই যখন জোর দিয়ে বলছো, বিশ্বাস করলাম। কিন্তু দেখলেই যখন, পকেটে ভরে কয়েকটা নিয়ে এলে না কেন?
পারলে কি আর আনতাম না নাকি? আরেকটা হুইস্কি আনতে বলো। গল্পটা শোনাচ্ছি। তাহলেই বুঝতে পারবে।
হুইস্কি আনার অর্ডার দিলো ওমর। সিগারেট কেস বের করে টেবিলের ওপর রাখলো। ডালা তুলে বেছে নিয়ে ঠোঁটে লাগালো একটা। লাইটার দিয়ে ধরালো। মুখ তুলে তাকালো ডজের দিকে। শুরু করো। অনেক দিন ভালো গল্প শুনিনি।
বিশ্বাসই যদি না করো, অহেতুক বকবক করে সময় নষ্ট করতে চাই না আমি। গম্ভীর হয়ে গেল ডজ।
না শুনলে বুঝবো কি করে? সত্যিই বলবে তো, নাকি বানিয়ে বানিয়ে? তোমার তো আবার কল্পনার দৌড় একটু বেশি।
একটা শব্দও বাড়িয়ে বলবো না। যা সত্যি, শুধু তা-ই।