হাসিতে দাঁত বেরিয়ে পড়লো রবিনের। আমি এক্ষুণি যেতে রাজি।
তোমার গানের অফিসের চাকরি?
ছুটি নিয়েছি কয়েকদিনের। বাইরে কোথাও যাওয়ার জন্যেই। তবে কোথায় যাবো, ঠিক করতে পারছিলাম না। পেয়ে গেলাম।
গুড। কিশোর, তুমি?
প্লেনের টিকেট কেটে শুধু হাতে দিন। তারপর আর আমার ছায়াও দেখতে পাবেন না এ-শহরে, হেসে বললো কিশোর।
সাইমনও হাসলেন। তা দিতে আপত্তি নেই। খরচ তো দেবে রেডফোর্ড এস্টেট। তবে তোমাদের বয়েসী, অর্থাৎ, টীনএজারদের মেকসিকোতে যাওয়ায় কিছু সরকারী অসুবিধে আছে। বয়স্ক কারো সঙ্গে ছাড়া এই বয়েসীদের ঢুকতে দেয়া হয় সাধারণত, খুব কড়াকড়ি। দুটো বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করে দিতে পারি আমি।
সাইমনের কাঁধে হাত রাখলেন উকিল। ভালোই হবে তাহলে। ওরা গিয়ে ওখানে খুঁজুক, আমরা এখানে খুঁজবো। দেখি, কোন্ দল সেই রহস্যময় সম্পত্তি খুঁজে বের করতে পারে?
দেখা যাবে! কিশোরের কণ্ঠে চ্যালেঞ্জের সুর। সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললো, পাস দুটো হলে চলবে না, স্যার, তিনটে।
ওহ্ হো, ভুলেই গিয়েছিলাম। মুসা বাদ পড়ে গেছে। ঠিক আছে, তিনটেরই ব্যবস্থা হবে।
থ্যাংক ইউ, স্যার।
যে স্লাইডগুলোতে রহস্যময় লোকটার ছবি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে গিয়ে প্রিন্ট করার অনুমতি চাইলো কিশোর। রাজি হলেন ফাউলার।
ইয়ার্ডে ফিরে এলো কিশোর আর রবিন। লাঞ্চের পর হেডকোয়ার্টারে ঢুকলো। স্লাইডগুলো নিয়ে ডার্করুমে ঢুকলো রবিন। কিশোর ফোন করতে বসলো মুসাকে।
কে, কিশোর? চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। খুশি খুশি লাগছে তাকে। পেয়ে গেছি! সব পার্টস পেয়ে গেছি!
মেকসিকোতে বেড়াতে যাবে?
কি বললে!
শুনতে চাইলে পার্টসের ভাবনা বাদ দিয়ে এক্ষুণি চলে এসো। আমি আর রবিন আছি।
জাহান্নামে যাক গাড়ি! আমি আসছি!
মিনিট পনেরো পরেই শোনা গেল মুসার গাড়ির বিকট ভটভট। ইয়ার্ডে ঢুকলো। মিস ফায়ার করলো কয়েকবার, যেন পিস্তলের গুলিবর্ষণ করলো। থেমে গেল এঞ্জিন।
৪
খুব সাবধান হতে হবে তোমাকে, মুসা, কিশোর বললো। মেকসিকোর সব খাবার কিন্তু ভালো না। পাকস্থলী জ্বালিয়ে দেয়ার ওস্তাদ।
সব খেতে যাচ্ছে কে? ভুরু নাচালো মুসা। যেগুলোতে ঝাল কম সেগুলো খাবো। টরটিলা খাবো, এনচিলা খাবো। ওসব নাকি দারুণ খাবার। তবে লাল মরিচের চকলেট সস, ওরিব্বাপরে, হাত তুলে ফেললো সে। একশো হাত দূরে থাকবো আমি।
সুর করে গেয়ে উঠলো রবিন,
ফর মেকিং টরটিলাস ইউ উইল ইউজ আ মিটেট,
অ্যান্ড ফর আ বেড উই উইল ইউজ আ পিটেট।
ভ্রূকুটি করলো মুসা। নাম কি! পিটেট! তা যে-টেটই হোক, আমি বাপু ওই। ঘাসের মাদুরে ঘুমোতে পারবো না। আমি অ্যাজটেক নই।
হেসে উঠলো রবিন আর কিশোর। মূসাও হাসলো।
রবিন, কিশোর বললো। দেখ, ছবিগুলো শুকালো কিনা।
ডার্করুমে গিয়ে কয়েকটা ছবি নিয়ে এলো রবিন। ভেজা রয়েছে। বিছিয়ে দিলো টেবিলে। আগ্রহে সামনে ঝুঁকলো মুসা।
যেসব জায়গায় ছবি তুলেছেন মিস্টার রেডফোর্ড, কিশোর বললো। সবখানে যাবো আমরা।
তারমানে প্রাচীন কীর্তিগুলো দেখার সুযোগ পাচ্ছি? মুখ তুললো মুসা।
হ্যাঁ। সবগুলো না হলেও কিছু কিছু।
হাসি দূর হয়ে গেল মুসার মুখ থেকে। সেই জায়গায় ফুটলো সন্দেহ। ছবির পিরামিডের সিঁড়িতে আঙুল রেখে বললো, এখানে আবার ওঠার কথা বলবে না তো? যা সরুরে ভাই, আর যা খাড়া! কোমর ভাঙার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই!
আমারও না, সুর মেলালো কিশোর। ইনডিয়ানরা একটা বিশেষ কায়দায় ওপরে ওঠে, হাঁটাচলা করে। সেভাবে চললে আর পড়বে না।
কিছুক্ষণ পরে ফোন করলেন মিস্টার সাইমন। জানালেন, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। তিনটে পাস যোগাড় করেছি। মেকসিকো সিটিতে হোটেলও বুক করা হয়েছে। ওখানে উঠবে। তার পর ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি যাবে। কোথায় যাবে, কিভাবে যাবে, সেটা তোমাদেরকেই ঠিক করতে হবে।
প্লেনের টিকেট?
লাগবে না। আমার প্লেনটাতে করেই যেতে পারবে। ল্যারি কংকলিন গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবে তোমাদের। আসার আগে ফোন করে দিও আমাকে। আবার প্লেন পাঠিয়ে দেবো।
টাকার অভাব নেই মিস্টার সাইমনের। বই লিখে, গোয়েন্দাগিরি করে অনেক টাকা আয় করেছেন। ব্যক্তিগত বিমান কিনে, পাইলট সহ সেটার খরচ বহন করারও ক্ষমতা আছে তার। ল্যারি কংকলিন হলো তাঁর পাইলট। বিমানটা খুবই ভালো। তাতে উড়েছে তিন গোয়েন্দা। কংকলিনের পাশে বসে কয়েকবার ওটাকে উড়িয়েছেও মুসা।
কখন রওনা হচ্ছি? জানতে চাইলো কিশোর।
কাল সকালে।
আচ্ছা, ফোন রেখে দিলেন সাইমন।
গাড়ির কাজ শেষ করে মুসাকে তৈরি হয়ে নিতে বললো কিশোর। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল সহকারী গোয়েন্দা। আরও কিছু ছবি প্রিন্ট করার জন্যে ডার্করুমে গিয়ে ঢুকলো রবিন। টেবিলের ছবিগুলো কাছে টেনে নিলো কিশোর। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ভালোমতো পরীক্ষা করে দেখবে, নতুন কিছু পাওয়া যায় কিনা।
কয়েক মিনিট পর আবার ফোন করলেন মিস্টার সাইমন। জানালেন, বারোজের জ্ঞান ফিরেছে। তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিশোররা চাইলে আসতে পারে।
এখুনি আসছি, বলে উঠে দাঁড়ালো কিশোর। ডাক দিলো রবিনকে।
হাসপাতালের গেটে দেখা হলো সাইমনের সঙ্গে। ওদের অপেক্ষায়ই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ইনফরমেশন ডেস্কে জিজ্ঞেস করতেই জানিয়ে দেয়া হলো বারোজের ঘর কোথায়। এলিভেটরে করে তিনতলায় চলে এলো ওরা। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ফাউলার। গোয়েন্দাদেরকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।