- বইয়ের নামঃ মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস
১. লন্ডন এক্সপ্রেস
মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) / আগাথা ক্রিস্টি / অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
লন্ডন এক্সপ্রেসে প্যারিস থেকে লন্ডন ফেরার পথে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল।
জুনের ঝকঝকে দিন। কামরায় আমার সহযাত্রী বলতে ছিল একটি মেয়ে। মুখে পাউডারের প্রলেপ থাকলেও মেয়েটির বয়স সতেরোর নিচে মনে হল না। লাল টকটকে দুটি ঠোঁট সবার আগে নজর কাড়ে। ঘন ঘন সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছিল সে।
এগিয়ে এসে নিজেই আলাপ করল। কিন্তু আশ্চর্য তার আচরণ আমার গায়ে-পড়া মনে হল না। বরং তার মধ্যে আমি শিশুর সারল্য ও নারীর মাধুর্যের মিশ্রণ পেলাম।
–প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমার বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন আমরা পরস্পর বন্ধু।
এই ভাবেই সে শুরু করেছিল তার আলাপ। তারপর অল্প সময়ের মধ্যেই অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে সে যা জানাল তা হল, তার জন্ম আমেরিকায়। কিন্তু ইংলন্ডেই সে বড় হয়েছে তার এক বোনের সঙ্গে। পেশায় অভিনেত্রী।
ভালো কিছু করার একটা প্রবল বাসনা তার কথায় প্রকাশ পেয়েছিল যা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় বোধ হয়েছিল।
কথায় কথায়, জানি না কিভাবে সে অনুমান করল, বলল, তুমি নিশ্চয়ই যুদ্ধে গিয়েছিলে?
তার অনুমান যথার্থ স্বীকার করে আমি বললাম, একবার আহত হয়ে পঙ্গু হবারও উপক্রম হয়েছিল। এখন আমি একজন এম. পির সেক্রেটারি।
–কেবল ছারপোকা মারা কাজ যে তুমি কর না তা দেখেই বুঝতে পেরেছি। কাজের বাইরে আর কি কর? জানতে চেয়েছিল মেয়েটি।
এইভাবেই এসে পড়ল আমার সবচেয়ে গর্বের ও আনন্দের প্রসঙ্গ।
–আমার এক বেলজিয়ান গোয়েন্দা বন্ধুর সঙ্গে একটা ঘরে শেয়ার করে থাকি।
ছোটখাট চেহারার খুব মজাদার মানুষটি। প্রাইভেট গোয়েন্দা হিসেবে লন্ডনে প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েছে। সরকারী গোয়েন্দারা যখন কোনো কেসে তল পায় না তখন তারা আমার এই বন্ধুটির শরণাপন্ন হয়। সে অনায়াসে তাদের সমস্যার সমাধান করে দেয়। তার সঙ্গেই আমার দিব্যি কেটে যায়।
–দারুণ! ওহ, দারুণ! অপরাধের গল্প আমার খুব প্রিয়।
স্টাইলস কেস তোমার মনে আছে? আমি জানতে চেয়েছিলাম।
একটু ভেবে নিয়ে সে জানায়, সাসেক্সের সেই বিষ খাইয়ে এক বৃদ্ধাকে হত্যার মামলা তো
মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে গর্বের সঙ্গে জানালাম, সেটাই হল আমার বন্ধু এরকুল পোয়ারোর প্রথম বড় কেস।
এরপর পোয়ারার কীর্তিকাহিনী তাকে সবিস্তারে শোনাতে হয়েছিল। আর সে শুনেছিল তন্ময় হয়ে।
ক্যালাইন স্টেশনে ট্রেন থামলে প্ল্যাটফর্মে নেমে আমার সঙ্গিনী করমর্দন করে বলল, বিদায় বন্ধু। ডোভার থেকে জাহাজে যাওয়া হবে কিনা বলতে পারছি না, তাই এখানেই তোমাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। এখানে আমার বোনের সন্ধান একবার নিতে হবে।
বিদায়ক্ষণে আমার এই নতুন বন্ধুটির নাম জানতে চাইলে সে হেসে জানাল, সিনডেরেলা।
.
০২.
পরদিন সকালে প্রাতঃরাশের টেবিলে বসে আছি আমি আর পোয়ারো।
–আজকের ডাকে এই চিঠিটা এসেছে। বলে পোয়ারো চিঠির কাগজটা বাড়িয়ে দিল। বেশ দামি বিদেশী কাগজে হাতে লেখা চিঠিটা সাগ্রহে চোখের সামনে মেলে ধরলাম।
ভিলা জেনেভিয়েভ,
মারলিনভিল সুরসার
ফ্রান্স
প্রিয় মহাশয়,
যে কোনো মুহূর্তে আমার জীবনের আশঙ্কা নিয়ে দিন গুণছি। তাই এই মুহূর্তে একজন গোয়েন্দা আমার প্রয়োজন। বিভিন্ন সূত্রে আপনার সুখ্যাতি আমার কানে এসেছে। আমি শুনেছি অপরাধ-তদন্ত বিষয়ে আপনি একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি।
আমি নিশ্চিত, আমার বিপদ আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে আমার অনুরোধ, আপনি আপনার হাতের সমস্ত কেস ফেলে রেখে এখুনি একবার ফ্রান্সে চলে আসুন। আমার জীবনরক্ষার স্বার্থে আপনার প্রয়োজনীয় অর্থসহ যাবতীয় কিছুর ব্যবস্থা আমি করব। বিন্দুমাত্র ইতস্ততঃ না করে আমার অনুরোধ রক্ষা করলে বাধিত হব।
আমার জীবনের বেশ কয়েক বছর স্যান্টিয়াগোয় কাটিয়েছি। সেখানেও কিছু সময়ের জন্য আপনাকে যেতে হতে পারে। আপনার পারিশ্রমিক কত জানাবেন। ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরী বিবেচনা করবেন।
আপনার তারবার্তা পেলে আমি ক্যালাইনে আপনার জন্য গাড়ি পাঠাব।
আপনার বিশ্বস্ত
পি. টি. রেনাল্ড
পুনশ্চ : ঈশ্বরের দোহাই আপনি আসুন।
–অদ্ভুত চিঠি। তুমি কি ঠিক করলে?
চিঠিটা পোয়ারোর হাতে ফেরত দিয়ে জানতে চাইলাম।
–এখুনি রওনা হতে হবে, তুমি সঙ্গে যাবে। ভিক্টোরিয়া থেকে এগারোটায় কন্টিনেন্টাল এক্সপ্রেস ধরব।
ব্যস্ততার সঙ্গেই বলল পোয়ারো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিনিট দশেকের মধ্যেই জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে হবে।
-আমি রেডি। কিন্তু মিঃ রেনাল্ড নামটা যেন চেনা মনে হচ্ছে।
–তুমি যার নাম মনে আনবার চেষ্টা করছ তিনি দক্ষিণ আমেরিকার সুপরিচিত কোটিপতি। এই ভদ্রলোকই সেই রেনাল্ড কিনা বুঝতে পারছি না। বললাম আমি।
–একই লোক, বুঝতে পারছি। চিঠিতে স্যান্টিয়াগোর উল্লেখ রয়েছে, জায়গাটা চিলিতে, আর চিলি হল দক্ষিণ আমেরিকায়। মারলিনভিল সুরসার নামটা আমার শোনা।
-বোলোন আর ক্যালাইনের মাঝামাঝি একটা ছোট্ট জায়গা। কোটিপতি মিঃ রেনাল্ডের একটা বাড়ি ইংলন্ডেও আছে বলে শুনেছি। বলল পোয়ারো।