গ্যারেজ থেকে কোদাল আর বেলচা বের করে আনলেন ফাউলার। চারজনে মিলে মাটি খুঁড়তে শুরু করলেন। গাছের চারপাশে বড় বড় গর্ত খোড়া হয়ে গেল। কিছুই পাওয়া গেল না। হতাশ হয়ে সেগুলো আবার মাটি দিয়ে ভরে দিতে লাগলো দুই গোয়েন্দা। হোস পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে, মাটি ডলে সমান করে আগের মতো করে ঘাসের চাপড়াগুলো আবার বসিয়ে দিতে লাগলো। ভীষণ পরিশ্রমের কাজ।
সাইমন বললেন, নিক, যদি সময় দিতে পারো, আমি একবার বাড়িটাতে ঢুকতে চাই। মিস্টার রেডফোর্ডের কাছে নিশ্চয় অনেক চিঠিপত্র আসতো। সেগুলো একবার দেখতে চাই, অ্যাজটেক যোদ্ধার ব্যাপারে কিছু পাওয়া যায় কিনা।
রাজি হলেন উকিল। তবে তেমন কিছু পাওয়া যাবে আশা করতে পারলেন না। রেডফোর্ডের কাগজপত্র নাকি সবই পড়া হয়ে গেছে তার। তবু সাইমন যখন দেখতে চাইছেন.‥তালা খুলে দিলেন তিনি।
কিশোর বললো, আপনারা কাগজ দেখুন। আমি আর রবিন বাকি স্লাইডগুলো দেখে ফেলি।
ভালো কথা বলেছো, উকিল বললেন। দেখ। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, পুলিশকে ফোন করেছিলাম সকালে। আঙুলের ছাপের কথা জিজ্ঞেস করলাম। ওদের রেকর্ডে নেই ওই ছাপ। তারমানে অতীতের কোনো অপরাধের ইতিহাস নেই লোকটার। পুলিশের যে রকম ধারণা ছিলো।
বারোজের কি খবর? জানতে চাইলো কিশোর। হুঁশ ফিরেছে?
না। তবে অবস্থা উন্নতির দিকে। ডাক্তারদের ধারণা তাড়াতাড়িই ফিরবে।
কাগজপত্র ঘাটায় মন দিলেন সাইমন। তার সঙ্গে রয়েছেন ফাউলার। কিশোর ও রবিন প্রোজেক্টর আর পর্দা সাজিয়ে বসলো। মেকসিকোতে তোলা ছবির আরেকটা বাক্স পাওয়া গেল। মেশিনে স্লাইড ঢুকিয়ে বোতাম টিপে চালু করে দিলো রবিন। কয়েকটা ছবি পেরোতেই চেঁচিয়ে উঠলো, আরেকটা সূত্র!
একটা মেকসিকান পিরামিডের সামনে তোলা হয়েছে ছবিটা। সেই রহস্যময় লোকটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরনে অ্যাজটেক যোদ্ধার পোশাক।
স্টিল করে রাখো, কিশোর বললো। আমি মিস্টার সাইমন আর ফাউলারকে ডেকে আনি।
দৌড়ে এসে লাইব্রেরিতে ঢুকলো সে। গভীর মনোেযোগে চিঠি পড়ছেন সাইমন। পাশে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উকিল সাহেব। দুজনকে খবরটা জানালো কিশোর।
হুমম! ছবিটা দেখে মাথা দোলালেন খোঁড়া গোয়েন্দা (এখন আর খোঁড়া নন তিনি, পা ভালো হয়ে গেছে), ভালো সূত্র বের করেছে। হয়তো ওই লোকটাই মিস্টার রেডফোর্ডের অ্যাজটেক যোদ্ধা।
এবং সেই সম্পত্তির সত্যিকার মালিক, যোগ করলেন ফাউলার। যেটার কথা লিখে গেছেন তিনি।
লোকটা কে? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো কিশোর। পিন্টো আলভারো, না অন্য কেউ?
এসব ছবি একটা কথাই প্রমাণ করে, রবিন বললো। আমরা যাকে খুঁজছি, তার আসল ঠিকানা রয়েছে মেকসিকোতে।
হাসলেন সাইমন। এতো শিওর হয়ো না। লোকটা মেকসিকোতেই আছে, তা না-ও হতে পারে। অন্য কোনো দেশেও থাকতে পারে। মেকসিকান হলেই যে মেকাকোতে থাকতে হবে তার কোনো মানে নেই।
আরেকটা কথা বললেন তিনি, লোকটা যদি অ্যাজটেক যোদ্ধা হয়ও, কি জিনিস খুঁজে বের করে তাকে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে, ছবি দেখে তা জানার কোনোই উপায় নেই।
একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, উকিল বললেন মাথা চুলকাতে চুলকাতে। লোকটার নাম কেন উইলে উল্লেখ করলেন না, মিস্টার রেডফোর্ড? দুটো রহস্য রেখে গেছেন তিনি। এক, অ্যাজটেক যোদ্ধাকে খুঁজে বের করা। দুই, যোদ্ধার সম্পত্তি খুঁজে বের করা।
রহস্য আরও একটা আছে, সাইমন বললেন। কেসের সমাধান না হওয়াতক কেন সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদেরকে তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত রাখতে চেয়েছেন?
এর একটাই জবাব হতে পারে, কিশোর বললো। কোনো বিশেষ কারণে ওদেরকে ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছেন তিনি। আর সেই কারণটা হলো, অ্যাজটেক যোদ্ধা আর তার সম্পত্তি রক্ষা করা। উত্তরাধিকারীরা পাওনা দখল করে ফেললে কোনো ভাবে যোদ্ধা আর তার সম্পত্তির ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
যুক্তি আছে তোমার কথায়, একমত হলেন উকিল সাহেব। কিন্তু সেই সম্পত্তিটা কি হতে পারে?
নিশ্চয় দামী কোনো জিনিস, রবিন অনুমান করলো। জিনিসটার নাম বললে হয়তো চোর-ডাকাতেরা ছুটে আসবে ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে। সেই ভয়েই গোপন রেখেছেন।
হুঁ, মিস্টার সাইমনেরও তা-ই মনে হলো। আরও সাবধানে কাজ করতে হবে আমাদের। আরও গোপনে।
সূত্র খোঁজা চললো। স্লাইড দেখতে লাগলো দুই গোয়েন্দা। সাইমন আর ফাউলার আবার ফিরে গেছেন লাইব্রেরিতে। একের পর এক স্লাইড ঢোকাচ্ছে আর বের করছে রবিন। গভীর মনোযোগে পর্দার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। আচমকা হাত চেপে ধরলো রবিনের। স্টিল করতে বললো। আরেকটা ছবি আগ্রহ জাগিয়েছে তার। বিশাল এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে রহস্যময় সেই লোক।
বাপরে বাপ! বলে উঠলো রবিন। কত্তোবড় গাছ! কয়েক মিনিট পরে আরেকটা ছবি পাওয়া গেল।
আবার সেই লোক! প্রায় ফিসফিস করে বললো কিশোর, যেন জোরে বললে ছুটে পালিয়ে যাবে মানুষটা।
লাইব্রেরি থেকে ফিরে এলেন সাইমন আর ফাউলার। ওদেরকে ছবিদুটো দেখানো হলো। চিন্তিত ভঙ্গিতে চোয়াল ডললেন গোয়েন্দা। এখন আমার মনে হচ্ছে, লোকটাকে মেকসিকোতেই পাওয়া যাবে।
তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর আর রবিন। কিন্তু তিনি ওদের দিকে তাকিয়ে নেই। পর্দার দিকে চেয়ে কিছু ভাবছেন। চোখ ফেরালেন হঠাৎ। শোনো, ছেলেদের বললেন তিনি। আমার এখন যাওয়ার উপায় নেই। একটা সিরিয়াস কেসের তদন্ত করছি। উইলে তোমাদেরকেও দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। যাবে নাকি মেকসিকোতে? আলভারোকে খুঁজতে?