কোনো অন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে অ্যাজটেক শব্দটা কি বলেছেন?
নাহ্, শুনিনি। কিছু কিছু অস্ত্র আনা হয়েছে আফ্রিকা আর ইউরোপ থেকে। মেকসিকো থেকে যেগুলো এনেছেন, সেগুলোর নাম বলার সময়ও কখনও অ্যাজটেক কথাটা বলেননি।…দেরি হয়ে গেল। যাই। তোমাদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো।
আপনি কি এখানে প্রায়ই আসেন? প্রশ্ন করলো কিশোর।
কিশোরের দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ক্লারা। সন্দেহ করছো, না?
না, না, এমনি…
হাসলো মহিলা। করলে অবশ্য তোমাকে দোষ দেয়া যায় না। এরকম সময়ে বন্ধ একটা বাড়িতে একজন মহিলাকে দেখলে সন্দেহ হওয়ারই কথা। হ্যাঁ, আসি। মানে, আসতাম। মালিক বেঁচে থাকতে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতাম। তাছাড়া বাড়িটার মায়া আমি কিছুতেই কাটাতে পারি না।…ঠিক আছে, চলি। গুড বাই।
দ্রুত হেঁটে চলে গেল মহিলা।
তাকে নিয়ে খুব একটা ভাবছে না দুই গোয়েন্দা। তাদের মনে তখন অন্য চিন্তা। অ্যাজটেক যোদ্ধা কোনো অস্ত্রের নাম নয় তো?
লনের ধার দিয়ে হেঁটে বাড়ির সামনের দিকে চলে এলো দুজনে। অনেক বড় বাড়ি। ডান পাশে চোখ পড়তেই থমকে গেল ওরা।
একটা বাক্সের ওপর উঠে জানালা দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে একজন মানুষ।
৩
লোকটাকে ধরার জন্যে ছুটলো দুজনে। কিন্তু দেখে ফেললো লোকটা। লাফ দিয়ে বাক্স থেকে নেমে একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো ওদের দিকে। তারপর ঘুরে দৌড় দিলো উল্টো দিকে।
পাথরটাকে এড়ানোর জন্যে ঝট করে মাথা সরিয়ে ফেললো, কিশোর আর রবিন। চিৎকার করে ডাকলো কিশোর, শুনুন! দাঁড়ান!
কিন্তু লোকটা কি আর শোনে। থামলো না। টর্চ জ্বেলে তার পিছু পিছু দৌড় দিলো দুই গোয়েন্দা। লোকটা বেঁটে, কালো চুল। দৌড়ানোর ভঙ্গিতেই বোঝা যায় এলাকাটা খুব ভালোমতো চেনে, কোনো রকম দ্বিধা নেই। পেছনের একটা পথ দিয়ে ছুটে হারিয়ে গেল অন্ধকারে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলো কিশোর আর রবিন। একজায়গায় মাটিতে জুতোর ছাপ ছাড়া লোকটার আর কোনো চিহ্নই দেখতে পেলো না।
পুলিশকে জানানো দরকার, কিশোর বললো। আমি থাকি। পাহারা দিই। তুমি গিয়ে পুলিশকে ফোন করো।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই এসে হাজির হলো একটা পেট্রোল কার। লোকটা যেখানে ছিলো, সেই জায়গাটা পরীক্ষা করতে লাগলো। জানালার চৌকাঠে আঙুলের ছাপ ফেলে গেছে লোকটা। সেগুলো তোলার ব্যবস্থা করলো পুলিশের বিশেষজ্ঞ। মাটি থেকে জুতোর ছাপের মডেল তৈরি করলো। আর যে বাক্সের ওপর দাঁড়িয়েছিলো লোকটা, সেটাও তুলে নিলো গাড়িতে।
ছেলেদেরকে ধন্যবাদ দিলেন পেট্রোল কারের অফিসার-ইন-চার্জ। আবার কোনো চোরছ্যাঁচোড়কে চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে জানানোর অনুরোধ করে চলে গেলেন।
পুলিশ চলে গেলে আবার অ্যাজটেক যোদ্ধার সূত্র খুঁজতে শুরু করলো দুই গোয়েন্দা। টর্চের আলো ফেলে ঘুরে ঘুরে দেখলো। কিছুই চোখে পড়ছে না। তারপর হঠাৎ বলে উঠলো কিশোর, মনে হয় পেলাম!
দৌড়ে এলো রবিন। কিশোরের আলোটার পাশে আলো ফেললো। একটা বড় পাতের কান্ডে খোদাই করে আঁকা হয়েছে একজন ইনডিয়ান মানুষের প্রতিকৃতি, মাথা থেকে কাধের নিচ পর্যন্ত।
কি বোঝাতে চেয়েছে, কিশোর বললো। বুঝলাম না। তবে অ্যাজটেক যোদ্ধার ছবি হতে পারে।
গাছের পুরো কাণ্ডটাতেই চোখ বোলালো ওরা, আরও সূত্রের আশায়। আরেকটা ছবি কিংবা ফাপা জায়গা। নেই কিছু।
গাছের কাছে মাটিতে কিছু পুঁতে রাখেনি তো? রবিনের প্রশ্ন।
আবার খোঁজা শুরু হলো। গাছটাকে ঘিরে চক্কর দিতে শুরু করলো দুজনে। মাটির দিকে চোখ। অনেকখানি জায়গা দেখলো। মাটি খোঁড়ার চিহ্ন চোখে পড়লো না। সমান মাটি। সব জায়গায় সবুজ ঘাস, একরকম হয়ে জন্মেছে। মাটির রঙেরও কোনো পরিবর্তন নেই।
খোঁড়া হলেও, কিশোর বললো। কিছু দিনের মধ্যে অন্তত হয়নি। অনেক আগে। মাটি না খুঁড়লে কিছু বোঝাও যাবে না আছে কিনা। আজ রাতে হবে না সেটা। তাছাড়া মিস্টার ফাউলারের অনুমতি নিতে হবে।
চলো, গিয়ে অনুমতি নিয়ে নিই।
আজকে তো আর হবে না। কাল সকালে দেখা যাক।
রাত তো বেশি হয়নি। এখন কোথায় যেতে চাও? বাড়িতে?
না, চলো, একবার মিস্টার সাইমনের ওখান থেকে ঘুরে যাই। তিনি কিছু করতে পারলেন কিনা জানা দরকার।
আরেকটা জরুরী কেসে ব্যস্ত মিস্টার সাইমন। অ্যাজটেক যোদ্ধা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়ই পাচ্ছেন না। দুই গোয়েন্দাকে দেখে খুশি হলেন। রেডফোর্ড এস্টেটে যা যা ঘটেছে তাকে জানালো কিশোর আর রবিন।
অন্ত্রের কথা শুনে সাইমন বললেন, ইনটারেসটিং! লুকানো থাকতেও পারে। নিককে ভিজ্ঞেস করবো। গাছের গোড়ায় লুকানো থাকলে অবাক হবো না।
ফাউলারকে ফোন করলেন তিনি। মাটি খুঁড়তে দিতে আপত্তি নেই উকিল সাহেবের। তাকেও বেশ আগ্রহী মনে হলো। জানিয়ে দিলেন, আগামী দিন সকাল নটায় রেডফোর্ড এস্টেটে যাবেন তিনি। ইচ্ছে করলে তখন গোয়েন্দারাও যেতে পারে।
অস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করলেন সাইমন। জবাবে ফাউলার বললেন, বছরখানেক আগেই ওই শখ চলে গিয়েছিলো মিস্টার রেডফোর্ডের। তালিকাটা আমি দেখেছি। তাতে অ্যাজটেক যোদ্ধার নাম নেই।
পরদিন সকালে সময়মতো এসে রেডফোর্ড এস্টেটে হাজির হলো কিশোর, রবিন আর মিস্টার সাইমন। মুসা আসতে পারেনি। গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত। দুটো গাড়ি সাপ্লাই দেবে বলে দুজন খদ্দেরের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়েছে, ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে না পারলে ইজ্জত যাবে। সে-কারণে প্রচন্ড আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেনি।