অ্যাজটেক যোদ্ধার, মুসাকে কেসটার কথা খুলে বললো কিশোর আর রবিন।
এই যোদ্ধার ব্যাপারটা ভাল্লাগছে না আমার। পুরানো ব্যাপার-স্যাপার তো, ভূত বেরিয়ে পড়তে পারে। পুরানো, বাড়িতেই ভূত বেশি থাকে জানোই তো, মুসা বললো। তবে মেকসিকোর ব্যাপারটা বেশ ইনটারেসটিং।
এই উইলের ব্যাপারটা পাগলামি মনে হচ্ছে আমার, মুসা বললো। তবে মেকসিকো বেশ মজার। কিছু ইতিহাস আমিও পড়েছি। পুরানো ওই অ্যাজটেকরা কি খেতে জানো?
না, মাথা নাড়লো রবিন।
ফুল মিশিয়ে খাবার রান্না করতো, নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো মুসা। রবিন আর কিশোরের কাছে বিদ্যে জাহির করার সুযোগ কমই পায় সে। পেয়ে আর ছাড়তে চাইলো না। তাতে নাকি অনেক অসুখ দূরে থাকে। এই যেমন, অ্যাকাশে ফুল নাকি মেলানকালিয়া মানে বিষন্নতা দূর করে, প্রাচীন অ্যাজটেক ওঝারা বিশ্বাস করতো। ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে, তাতে চিনি আর দারুচিনি দিয়ে ভাজা করে খেতো, ঠোঁট চাটলো সে। টেস্ট খারাপ হবে না। ভাবছি একদিন বানিয়ে খেয়ে দেখবো।
কেন, তোমাকে মেলানকালিয়া ধরলো কবে থেকে? হেসে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
আর কোনো ফুল খেতো? রবিনের প্রশ্ন।
নিশ্চয় খেতো। পাই ফিলিং তৈরি করতো গোলাপ ফুল দিয়ে। তাতে মেশাতো চিনি আর লেবু। একধরনের শরবত বানাতে জ্যামাইকা গাছের লাল কুঁড়ি দিয়ে। আর স্কোয়াশ কুঁড়ি খাওয়ার কথা তো নিশ্চয় শুনেছো। শোনোনি? সূর্যদেবতার পুজোর সময় ওই কুঁড়ি মুখে পুরে পানের মতো চিবাতো।
ছাগল ছিলো নাকি ব্যাটারা! মেরিচাচী বললেন।
এক কাজ করো, মেরি, হেসে বললেন রাশেদ পাশা। একদিন জেরানিয়াম, ফুল দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দেখ না। অ্যাজটেকরা খেতে পারলে আমরা কেন পারবো না?
হাসতে শুরু করলো সবাই।
হাসতে হাসতে মুসা বললো, কেন এসেছি, সেটা শুনলে না?
নিশ্চয় পার্টসটা পেয়ে গেছ, সেটা বলতে, কিশোর বললো। চমৎকার হয়ে যাবে এবার ভাঙা গাড়িটা। একেবারে নতুনের মতো।
মতো না। নতুনই! তর্জনী নাচিয়ে জোর দিয়ে বললো মুসা। আবার যেতে হবে আমাকে। আরেকটা পার্টসের খোঁজে। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, বলেও যাই, জিজ্ঞেসও করে যাই, মিস্টার সাইমন ডেকেছিলেন কেন? যাক, তোমরা অ্যাজটেক যোদ্ধাকে খোঁজাখুঁজি করো। প্রয়োজন পড়লে আমাকে নিও। আগে গাড়ির কাজটা শেষ করে নিই…
ঠিক আছে, যাও।
বেরিয়ে গেল মুসা। একটু পরেই শোনা গেল তার জেলোপি গাড়ির ভটভট শব্দ। ইয়ার্ড থেকে বেরোনোর পরেও কিছুক্ষণ শোনা গেল শব্দটা।
বিশ্রাম নেয়া হয়েছে। অফিসে চলে গেলেন মেরিচাচী। ইয়ার্ডের কাজ করতে বেরিয়ে গেলেন রাশেদ পাশা। একা হয়ে গেল কিশোর আর রবিন।
তারপর? রবিন জিজ্ঞেস করলো। এই কেসের ব্যাপারে আর কি করা যায় বলো তো?
তোমার গাড়িটা নিয়ে এসোগে। মিস্টার সাইমনের ওখানে যাবো। তাঁকে সব জানাবো। আর ভাবছি, আজ রাতে আরেকবার যাবো রেডফোর্ড হাউসে। ভেতরে ঢোকা নিষেধ, বাইরে থেকে দেখতে তো বাধা নেই।
তা নেই। কি দেখবে?
দেখি!
মিস্টার সাইমনের সঙ্গে দেখা করে ফিরে এলো দুজনে। রাতের খাবারের পর আবার বেরিয়ে পড়লো। চললো রেডফোর্ড এস্টেটে। গেটের পাশে এনে গাড়ি রাখলো রবিন। এখানেই রেখে যাই, কি বলো?
আরেকটু সরিয়ে রাখো, কিশোর বললো।
গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভওয়ে ধরে হেঁটে চললো দুজনে। আলো রয়েছে তখনও, টর্চ জ্বালার দরকার পড়লো না। বাড়ির বাঁ পাশে পৌঁছে থমকে গেল ওরা। একজন মহিলা, ওপর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মোটাসোটা। মাথায়, শাদা চুল।
শব্দ শুনে ফিরে তাকালো মহিলা। একটা মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে। তারপর হাসলো। গুড ইভনিং। চমকে দিয়েছিলে। চোর মনে করেছিলাম। তা নও, দেখেই বুঝতে পারছি। আমার নাম ক্লারা অ্যাডামস। এখানেই কাজ করতাম, বাড়ির মালিক থাকতে।
মিস্টার রেডফোর্ড? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
মাথা ঝাঁকালো মহিলা। খুব ভালো লোক ছিলেন। তাঁর কাছে কাজ করে শান্তি ছিলো। কি আরামে ছিলাম ভাবলে কষ্টই লাগে এখন।
কতোদিন আগে কাজ করেছে, জানতে চাইলো কিশোর।
ক্লারা জানালো, বছর দুই আগে চলে গিয়েছিলাম। ইদানীং বেশি বেশি বাইরে যেতেন মিস্টার রেডফোর্ড, নিয়মিত কাজের লোক তেমন লাগতো না।
মিস অ্যাডামস, অ্যাজটেক যোদ্ধার নাম কখনো বলতে শুনেছেন মিস্টার রেডফোর্ভকে? প্রশ্ন করে বসলো কিশোর।
শূন্য দৃষ্টি ফুটলো মহিলার চোখে। নাহ্।
মেকসিকোতে যেতেন, তাই না? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
প্রায়ই। অনেক সুভনির এনেছেন ওখান থেকে।
ওগুলো কি করেছেন? কিশোর জানতে চাইলো।
কিছু নিজের কাছে রেখেছেন। কিছু দিয়ে দিয়েছেন একে-তাকে।
মেকসিকোর কোনো বন্ধু বা পরিচিতজনের নাম উল্লেখ করেছেন কিনা তিনি। কখনও, জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
মাথা নাড়লো ক্লারা। সত্যি বলতে কি, মিস্টার রেডফোর্ড কথা তেমন বলতেনই না। বাড়ির চাকর-বাকরের সঙ্গে তো নয়ই। তবে কার সাথে যেন কথা বলার সময় একবার বলতে শুনেছিলাম, মেকসিকোতে গিয়ে ইনডিয়ান অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের চেষ্টা করেন তিনি, সংগ্রহে রাখার জন্যে। ওই সময় একটা লোক ছিলো তার সঙ্গে। নামটা বলেননি।
অনেক অস্ত্র সংগ্রহে আছে বুঝি তার? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
আছে। মিউজিয়ামে দান করে দেবেন বলতেন। দেখলে বুঝতে কি সব জিনিস! রোজ ওগুলোর ধুলো মুছে পরিষ্কার করে রাখতাম আমি। কয়েকটা অস্ত্র ছিলো ভয়ংকর, দেখলেই হাত-পা সিঁটিয়ে যেতো আমার।