নকল! বুঝতে পারলো না রবিন। কিশোর বুঝে ফেলেছে। বললো, বুঝেছি। রবারের নকল চামড়া লাগিয়ে নিয়েছিলে। এভাবে নকল ছাপ দিয়ে বাঘা বাঘা গোয়েন্দাকে ধোকা দিয়ে দেয় অপরাধীরা।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালেন রাশেদ পাশা। ভাইপোর মুখের দিকে তাকালেন সরাসরি। খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে। কোনো কেস পেয়েছিস নাকি?
পেয়েছি, খুলে বললো কিশোর। ছবিটা প্রিন্ট করার কথা বললো।
চল, আমিও দেখি। হাতে কাজটাজ বিশেষ নেই। ভাবছি, পুরানো পেশাটা আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেবো। মন্দ হয় না, কি বলিস?
একটুও না, খুশি হয়ে বললো কিশোর। স্যালভিজ ইয়ার্ডের পাশাপাশি নতুন কতো ব্যবসাই তো করো। এই যেমন জন্তুজানোয়ার ধরে বিক্রি করার ব্যবসাটা। একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলে ফেললেই বা ক্ষতি কি?
তোদেরকে দেখে সেকথা ভাবছি অনেকদিন থেকেই। সাহস পাই না, বুঝলি, অফিসের দিকে তাকালেন তিনি। ভেতরে কাজ করছেন মেরিচাচী। তোর চাচীর এসব কাজ একদম পছন্দ না।
কই, আমাকে তো কিছু বলে না?
তোকে বলে না। আমাকে বলবে। ওই বেরোচ্ছে। নিশ্চয় খেতে ডাকবে।
বারান্দায় বেরিয়ে এলেন মেরিচাচী। হাত নেড়ে সবাইকে যেতে ডাকলেন। ঠিকই আন্দাজ করেছেন রাশেদ পাশা। খেতেই ডাকলেন তিনি।
টেবিলে বসে সবে প্লেট টেনে নিয়েছে কিশোর, মেরিচাচী জিজ্ঞেস করলেন, এই কিশোর, মিস্টার সাইমন ফোন করেছিলেন কেন রে? নিশ্চয় নতুন কোনো কেস?
হ্যাঁ। তেমন কিছু না… এড়িয়ে যেতে চাইলো কিশোর।
কেসটা কি? মিথ্যে বলে পার পাবে না, বুঝে গেল, কিশোর। বলতেই হলো। বারোজের কথায় আসতেই রেগে গেলেন। কড়া গলায় বললেন, শয়তান! ওটাকে আবার সম্পত্তি দিতে গেলেন কেন মিস্টার রেডফোর্ড! ও তো একটা চোর!
কিন্তু সত্যিই কিছু চুরি করতে গিয়েছিলো কিনা আমরা জানি না।
নিশ্চয় গিয়েছিলো! নইলে লুকিয়ে চিলেকোঠায় উঠতে যাবে কেন? উকিল সাহেবের জায়গায় আমি হলে সোজা সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে বারোজের বাড়িতে তল্লাশি চালাতাম। আজই পয়লা নয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আরও চুরি করেছে সে। তার বাড়িতে চোরাই মাল পাওয়া যাবেই।
তুমি রেগে যাচ্ছাে কেন? মোলায়েম গলায় বললেন রাশেদ পাশা। তবে একেবারে ভুল কথা বলোনি। চোর হতেও পারে। যাই হোক, পালিয়ে তো আর যেতে পারছে না। হাসপাতালে রয়েছে। পুলিশ ছাড়বে না। সুস্থ হলেই গিয়ে প্রশ্ন শুরু করবে।
দেখবে তখন, আমার কথাই ঠিক, বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন তিনি।
খাওয়ার পরে লিভিং রুমে এসে বসলো সবাই। হাসপাতালে ফোন করলো কিশোর। জানা গেল, তখনও হুঁশ ফেরেনি বারোজের।
অ্যাজটেক যোদ্ধার কেস নিয়েই চললো আলোচনা।
মেকসিকোর পুরানো ইতিহাস ঘাটতে হবে, কিশোর বললো একসময়। বিশেষ করে সেই সময়কার, যখন অ্যাজটেকরা ক্ষমতায় ছিলো।
বাড়িতে বড় একটা লাইব্রেরি গড়ে তুলেছে কিশোর। অবশ্যই সেটা গড়তে সাহায্য করেছেন রাশেদ পাশা আর মেরিচাচী। বইয়ের ব্যাপারে তিনজনেরই প্রচন্ড আগ্রহ। মোটা মোটা দুটো বই নিয়ে এলো কিশোর।
একটা রবিনকে দিয়ে আরেকটা নিজের কোলের ওপর রেখে পাতা ওল্টাতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে নিমগ্ন হয়ে গেল বইয়ের পাতায়।
নীরবে পাইপ টানছেন রাশেদ পাশা। মেরিচাচী একটা পেপারব্যাক উপন্যাস নিয়ে বসেছেন।
বাপরে! কি জল্লাদ ছিলো! হঠাৎ বলে উঠলো রবিন। কিভাবে মারতে মানুষগুলোকে! দেবতার ভোগ! স্বাস্থ্যবান দেখে একজন তরুণকে বেছে নিতো। একটা বছর তাকে ভালো ভালো খাবার খাওয়াতো, কাপড় দিতো, আনন্দের যতো রকম উপকরণ আছে, সব দেয়া হতো। তারপর নিয়ে গিয়ে তাকে বলি দিতো যুদ্ধ দেবতার উদ্দেশ্যে।
হ্যাঁ, তিক্ত কণ্ঠে বললো কিশোর। ধর্মের নামে ধরে ধরে খুন করতে অসহায় মানুষগুলোকে। সব শয়তানী ওই ধর্মগুরুগুলোর। ধর্মযাজক না ছাই! আস্ত পিশাচ একেকটা!
পুরানো আমলের নরবলি নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা চললো। তাতে রাশেদ পাশা আর মেরিচাচীও যোগ দিলেন। অ্যাজটেক যোদ্ধাদের কয়েকটা ছবি রয়েছে বইতে। বিচিত্র পোশাক পরা। একটা দেখিয়ে রবিন বললো, দেখ দেখ, কি অদ্ভুত!
রঙিন ছবি। কাকাতুয়ার পালকের মুকুট মাথায়। গায়ের খাটো জামাটাও তৈরী হয়েছে কাকাতুয়া আর কিছু দুর্লভ পাখির পালক দিয়ে। সোনার সুতো দিয়ে গাঁথা হয়েছে পালকগুলো। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় সোনার কারুকাজ।
আরেকটা ছবিতে দেখা গেল পুরো এক স্কোয়াড্রন যোদ্ধা। পরনে জাগুয়ারের চামড়ার তৈরি ইউনিফর্ম। হাতে বর্ম, তাতেও সোনার কারুকাজ। প্রজাপতি আর সাপের প্রতিকৃতি। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। তাতে সোনা। সোনার ছড়াছড়ি। প্রচুর স্বর্ণখনির মালিক ছিলো ওরা, বোঝা যায়।
মন দিয়ে দেখছে কিশোর আর রবিন, এই সময় এঞ্জিনের শব্দ হলো। বিকট শব্দ করতে করতে অফিসের কাছে এসে থামলো গাড়িটা।
হাসলো কিশোর নিশ্চয় মুসা।
উঠে জানালার কাছে চলে গেল রবিন। ঠিকই বলেছো।
দরজায় দেখা দিলো মুসা। এই যে আছো। ব্যাপার কি? কেস তাহলে সত্যিই মিললো? মিস্টার সাইমন সেজন্যেই ডেকেছিলেন?
হ্যাঁ, রবিন বললো। তা কি কি করে এলে?
তেমন কিছু না, জবাব দিলো কিশোর। দেরাজের নিচে চাপা পড়া একজন মানুষকে বের করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর একজন অ্যাজটেক যোদ্ধার খোঁজ করছি।
বড় হয়ে গেল মুসার চোখ। কিসের খোঁজ করছো!