আরেকটাতে অ্যাজটেক যোদ্ধার পোশাকে দেখা গেছে আপনাকে, হেসে বললো মুসা।
স্টেফানোও হাসলেন। পিরামিড অভ দি সানের কাছে ইনডিয়ানদের একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো সেদিন। আমিও যোগ দিয়েছিলাম তাতে। ইউনিভারসিটির কয়েকজন প্রফেসর ধরলেন, আমার ছবি তুলবেন। তোলা হলো। রেডফোর্ডও তুলছিলো। অনেক পুরানো একটা পোশাক পরেছিলাম সেদিন।
মিস্টার সাইমনকে ফোন করা হলো। সব শুনে খুব খুশি হলেন তিনি। সিনর স্টেফানো তিন গোয়েন্দার সঙ্গে আসছেন শুনে আরও খুশি হলেন। বললেন, প্লেন পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
পরদিন মেকসিকো সিটিতে পৌঁছলো ওরা। প্লেন অপেক্ষা করছে। তাকে যে কিডন্যাপ করেছিলো, সেই লোকটা হাজতে শুনে ল্যারি কংকলিনও খুশি হলো।
রকি বীচে পৌঁছার পরদিন সকালে দল বেঁধে মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে গেল সবাই–তিন গোয়েন্দা, মিস্টার সাইমন, উকিল মিস্টার নিকোলাস ফাউলার এবং সিনর এমিল ডা স্টেফাননা। গাছের গায়ে যে তীর চিহ্নগুলো রয়েছে, সেগুলো দেখার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে কিশোর। ও হ্যাঁ, রকি বীচে আসার পর সাইমন জানিয়েছেন, গাছটাতে আরও কতগুলো তীর আঁকা রয়েছে। এতো সূক্ষ্মভাবে, খুব ভালো করে না দেখলে চোখে পড়ে না।
অনেকক্ষণ ধরে ওগুলোকে দেখলো কিশোর। ঘন ঘন চিমটি কাটলো নিচের ঠোঁটে। তারপর সাইমনকে বললো, একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন? তীরগুলো সব একই দিক নির্দেশ করছে। আর মাথাগুলো নিচের দিকে ঝোকানো। কোন জায়গায় খুঁজতে হবে, তাই বোঝাতে চাইছে, না? আর অ্যাজটেক যোদ্ধার ছবিটা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে ওদিকে রয়েছে জিনিসটা।
হ্যাঁ, ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, সাইমন বললেন। তীরের মাথা নিচের দিকে ঝোঁকানো। তার মানে মাটির নিচে খুঁজতে বলেছে। খোঁজা তো আর বাদ রাখিনি।
মাটির নিচে বলতে মাটিতে পুঁতে না রেখে মাটির তলার ঘরও তো হতে পারে। সেলার? ওদিকেই তো।
দীর্ঘ একটা নীরব মুহূর্ত কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন ডিটেকটিভ। তারপর ঝট করে দৃষ্টি ফেরালেন তীরের মাথা যেদিকে করে রয়েছে সেদিকে। হাঁটতে শুরু করলেন। তার পিছু নিলো তিন গোয়েন্দা।
সেলারে এসে ঢুকলো ওরা। শুরু হলো খোঁজা। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না ছুরিটা। চারপাশে তাকাতে লাগলো কিশোর। কোথায় হতে পারে? সেলারের কথাই বোঝানো হয়েছে কোনো সন্দেহ নেই তার। একধারে একটা পাইপ রয়েছে। নেমে এসেছে ওপর থেকে। ফুটখানেক নেমে বেরিয়ে গেছে দেয়াল কুঁড়ে। সেটার দিকে পুরো একটা মিনিট স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো। তারপর আনমনেই বললো, এটা এখানে কেন? এ পাইপের কি দরকার? এটার তো কোনো কাজ নেই! বুঝেছি! তুড়ি বাজালো সে। সাইমনের দিকে তাকিয়ে বললো, আসুন আমার সঙ্গে।
বাইরে বেরোলো কিশোর। পাইপটা যেদিকে দিয়ে বেড়িয়েছে সেখানকার মাটি খুঁড়তে শুরু করলো। বেরিয়ে পড়লো পাইপটা। মাটির নিচ দিয়ে চলে গেছে পুব দিকে। রবিন আর মুসাকেও হাত লাগাতে অনুরোধ করলো সে। খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চললো।
দশ ফুট দূরে একটা ঝোপের ভেতরে গিয়ে শেষ হয়েছে পাইপ। কংক্রীটের গাঁথুনি দিয়ে একটা ছোট বাক্সমতো তৈরি করা হয়েছে পাইপের মাথার কাছে। বাক্সের ওপর গোল একটা লোহার ঢাকনা। ঢাকনার মাথায় আঙটা। পানি নিষ্কাশনের পাইপের মাথায় যেমন জয়েন্ট বক্স তৈরি করা হয়, সেরকম। কেউ দেখে কিছু সন্দেহ করতে পারবে না।
আঙটা ধরে টান দিতেই উঠে এলো ঢাকনাটা। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো কিশোর। পানি নেই। খটখটে শুকনো। আসলে পানি যাওয়ার জন্যে বসানো হয়নি পাইপটা। বের করে আনলো সুন্দর করে অয়েল পেপারে মোড়া একটা প্যাকেট। না খুলেই বলে দেয়া যায় ভেতরে কি রয়েছে। নীরবে সেটা সিনর স্টেফানোর হাতে তুলে দিলো সে।
কাঁপা হাতে প্যাকেটটা খুলতে লাগলেন আরকিওলজিস্ট। সবাই তাকে ঘিরে এসেছে। আগ্রহে উত্তেজনায় চকচক করছে সকলেরই চোখ।
বেরিয়ে পড়লো অ্যাজটেক যোদ্ধার সম্পত্তি। ছবিতে যেরকম দেখেছে গোয়েন্দারা, সেরকমই, তবে অনেক বেশি সুন্দর। আলো পড়লেই ঝিক করে উঠছে নীলকান্তমণি আর রুবি পাথরগুলো।
সুন্দর! প্রায় ফিসফিসিয়ে বললেন ফাউলার। চোরেরা যে পিছু লেগেছিলো, এ-কারণেই। সিনর স্টেফানো, অনেক দাম এটার, তাই না?
হাসি ফুটেছে আরকিওলজিস্টের মুখে। অনেক! অ্যানটিক মূল্য! মাটি খুঁড়ে একবার বের করেছিলাম আমি, আরেকবার বের করলো এই ছেলেগুলো! সত্যি, এরা জিনিয়াস! আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ।
কৃতজ্ঞ শুধু আপনিই নন, সিনর, উকিল বললেন। আরও অনেকেই হবে। মিস্টার রেডফোর্ডের উইলে যাদের যাদের নাম লেখা রয়েছে, তারা সবাই। কারণ এখন আর সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নিতে কোনো অসুবিধে হবে না ওদের।
***